।। ১।।
এখন হৃদয় নেই, চিল ওড়ে ত্রুটিহীন আকাশের গায়ে
।। ২।।
অবাধ্য কুঁড়িটি দোলে, হাওয়া আসে, দোলে
কীট আসে, কৃষ্ণকীট গায়ে বসে, চলে যায়
ভোররাতে যেন মন্ত্রটি তার কানে কানে কেউ আউড়ে যায়নি
তাই ঈশ্বর উপাসনায় তাকে তুললো না কেউ আজ
সে দোলে, এবং দোলে, এবং সমস্ত সুবাসসম্ভাবনা নিয়েও সে ফুটল না
মিছিমিছি আকাশ দেখছে
আকর্ষণশক্তি বাড়লে সে জানে শরীর তাহার নয়
তাই সে দুলছে
নদী ছুঁয়ে হাওয়া আসলো তার ঘামদেহে
।। ৩।।
একটি গাছের গায়ে ছেলেটি প্রেয়সীর নাম লিখেছিল
বৃক্ষরস চলকে পড়েছিল রতির আঙুলে
তারপরে যুগের পরে যুগ কেটে গেছে
ছেলেটি এখন নক্ষত্র ফেরি করে, সন্ধের বাস আসে, চলে যায়
কত বৃক্ষ দৌড়ে দৌড়ে পিছনপানে ছুটল
কত মাঠ ঘাট খাল বিল সব বিপরীতদিকে ছুটছে
সেই গাছটিকে সে পায় না
সে খোদাই নামটি খুঁজলো সমস্ত নিভে যাওয়া ময়ূরপঙ্খী ত্বকে
।। ৪।।
সেই যে একতারাটি টঙ করে ছিঁড়ে গেল
তার পরে বাউলটি খনিতে কাজ করে
খনি রে পাগল, রত্নখনি, বেলচা বেলচা রত্ন
মনিব চাবকান, দিনান্তে কমলা রোদের মতো দু’টি রুটি
দু’বার রোগা মেয়েটির মুখ মনে পড়ে
দু’বার মনে পড়ে শুষ্কস্তন স্ত্রীকে
দু’বার একতারাটিকে মনে পড়ে
একদিন তো ঠিকই সমুদ্রমন্থন হবে
সেদিন সে সবার আগে একতারাটি নিয়ে জোছনাবনে পুঁতে আসবে
।। ৫।।
দু’দিকে প্রবাহ যায়
যেন নদী, যেন চোখ, যেন চোখের জল
বাম হাতে ছিল আকাশগঙ্গা, ডানহাতে পোড়া শ্মশানকাঠ
আমি কাঁধে করে অনর্গল মাটি বয়ে বয়ে আনলাম আজীবন
বাঁধ বানালাম যথেষ্ট পূর্বাভাসদিনে
তবু কি রথের চাকাটি অকুস্থলে ভেঙে পড়ল না?
তবু কি প্রবাহ আমাকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করলো না?
।। ৬।।
চেষ্টা করো, তুমি পারবে
দিনভিখারির মতো গণিকাদুয়ারে প্রত্যহ দাঁড়ানোর থেকে
কথা বলার চেষ্টা করো, তুমি ঠিকই আবারও পারবে
তেমনটা হ’বেনা ঠিক, যেমন হ’ত নক্ষত্ররাত
আক্ষরিক পদলেহন
অথবা ঘ্রাণবিনিময়
অধিকতর লোলুপ প্রমাণ করার ইচ্ছের ক্ষণবিলাস
অথবা নাতিদীর্ঘ স্পর্শের পর আজীবন সন্ন্যাসযোগ্যতা
এইসব ঠিক হয়ে উঠবে না হয়তো
কিন্তু পর্ণমোচীর গায়ে হরেক ভাবনাপাখির বাসা, গুঁড়িটি তো রয়েছে
চেষ্টা করো, তুমি আবারও গর্ভকেশরের দিনে উন্মত্ত হ’তে পারবে
।। ৭।।
এই সমস্ত বলা হয়ে গেলে মনে হয় দুর্বলতা প্রকৃতই এক ব্যাধি
আমি বাজারে যাবার নাম করে বেরিয়েছিলাম
পৌঁছলাম অন্য মহুয়াবনে
আহা কী নেশা, কী নেশা আহা, চোখ জুড়িয়ে যায়
মন জুড়িয়ে যায় এমন মানুষ অরণ্য হয়ে গেলে
কালেকস্মিনে একজন নারী অরণ্য হয়
তারপর আর কেউ হয় না
কেবল অরণ্যগন্ধ, কেউ অরণ্য হয় না
কেবল হৃদয়ের বিজ্ঞাপন জুয়াখেলার মাঝে
খানাখন্দে হোঁচট খেলুম, উঠলুম, আবার হাঁটলুম, পড়লুম আবার
দুর্বলতা প্রকৃতই এক নিকৃষ্ট ব্যাধি, উপবাসদিনে
।। ৮।।
শান্তি দেবার মানুষ ফুরোলে আমিও পরির কাছে গেলুম
যাব কিংবা যাব না ভাবতে ভাবতে হাত পুড়লো আমার
এখন হৃদয় নেই কিছু
চিল ওড়ে ত্রুটিহীন আকাশের গায়ে।