Cafe কলামে ডঃ সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য – ১১

দইয়ের বাকিংহাম যাত্রা!

দই খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ হাতে গুনলে কিছু পাওয়া যাবে। আর বাঙালি এমনিই ভোজন রসিক, তাই তার ক্ষেত্রে মিষ্টি দইয়ের চাহিদা খানিক বেশি তাতে আর আশ্চর্যের কি? কিন্তু টক দইয়ের চাহিদাও কিন্তু এখন কম নয়, স্বাস্থ্য সচেতন বাঙালীর তার প্রতি গভীর মনোযোগ থাকলেও যাবতীয় ভালোবাসা বহাল কিন্তু মিষ্টি দইয়ের প্রতি। এতো গেলো বাঙালীর ভালোবাসার কথা। কিন্তু এই মিষ্টি দই যে খোদ ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও রসনা তৃপ্ত করেছিল সে কথা কি জানেন? আজ জানাবো সে কথা ।
মিষ্টি দইয়ের ঘাঁটি মূলত ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ। আর স্থানভেদে সেই দইয়ের মধ্যে রয়েছে বিশেষত্ব। যেমন নবদ্বীপের মিষ্টি হাল্কা সাদা দই পশ্চিমবাংলার বিখ্যাত। আর বাংলাদেশে ফরিদপুর জেলার বাঘাট, মাগুরা জেলার খামার পাড়া এই মিষ্টি দইয়ের জন্য বেশ বিখ্যাত। আর এই বগুড়ার মিষ্টি দই বাকিংহামে ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে পৌঁছায়, আর তাতে তিনি বেশ মোজেও ছিলেন। কিন্তু কি এমন আছে এই দইতে? আর তা রানীর কাছে গেলো কি করে?
কথায় আছে এখানকার দই শিল্পের ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। যার সূচনা হয়েছিল গৌর গোপাল ঘোষের হাত ধরে। দেশ ভাগের সময়ে তিনি ভারত থেকে বগুড়ার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। কথিত আছে যে গৌর গোপাল ছিলেন শেরপুরের গোয়ালা ঘোষদের আত্মীয়। তিনি প্রথম সরায় দই তৈরি করে বগুড়ার নবাব পরিবার এবং সাতানী পরিবারের কাছে সরবরাহ করেন। আর খুশি হয়ে বগুড়ার নবাব মহম্মদ আলীর পরিবার তাঁকে ডেকে রাজপ্রাসাদের আম বাগানে থাকার বন্দোবস্ত করে দেয়। ক্রমেই গৌর গোপালের প্রস্তুত করা দইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৩৮সালে বগুড়ার নবাবের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন অ্যান্ডারসন। কাচের পাত্রে বানানো দই খাওয়ানো হয় তাঁকে। সেটা খেয়ে তিনি ইংল্যান্ডে বগুড়ার দই পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আর তাতেই সেই দই পৌঁছায় রানীর কাছে।
এখনো বগুড়ার মানুষ এখনও মিষ্টি দই বলতে অজ্ঞান। এখনো পৃথিবীর নানা দেশে রপ্তানি করা হয় শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী দই। আর যে দই ইংল্যান্ডের রানীর প্রসংশাধন্য সে তো একটু বিশেষ হবেই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।