• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুন্ডু (অন্তিম পর্ব)

লড়াইয়ের মিছিল

–তুমি কি ভাবছো বলতো? পৌলমী বলল।
–না কিছু ভাবছি না। কৌনিশ বলল।
–বললেই হবে। তোমার মুখ বলছে তুমি কিছু ভাবছো।
–তুমি কি করে বোঝ বলোতো?
—আমি তোমার ভিতরটা পড়তে পারি।
–তাই তোমাদের আরো একটা চোখ আছে।
—শুধু চোখ নয়। হৃদয়ও আছে।
—কাল সারা রাত ঘুম হয় নি জানো পৌলমী।
—কেন? বাড়িতে কেউ মাসিমা মেশোমশাই অসুস্থ নাকি?
—অসুস্থ হলে তো কথা ছিল না। হাসপাতাল নিয়ে যেতাম।
—এই জন্য বললাম মেশোমশাইয়ের তো হার্টের প্রবলেম আছে। তাই
—না। বাবা সুস্থ আছেন।
—তবে কি মা?
—না। মা ভালোই আছেন পৌলমী।
—তাহলে তোমার ঘুম না আসার কারন কি?
—কারনটা তুমি শুনলে তোমারও ঘুম আসবে না।
—শুনি কারনটা।
—সংকটটা খুব গুরুতর। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
—–আরে বাবা প্রবলেমটা বলবে তো। যদি কোন সলিউশন বের করতে পারি।
—পারবে না। আমি অনেক ভেবে পথ পাইনি।
—তুমি আর সময় নষ্ট না করে বলে ফেল তো।
—আমাকে বাড়ি ছাড়তে হবে।
—কি আশ্চর্য ।কেন?
—বাবা কাল বলে দিয়েছেন।
—কি বলেছেন?
—-আমার বাইশ বছর বয়স হয়েছে। এবার আমাকে আমার পথ দেখতে হবে।
—–ঠিকই তো বলেছেন মেশোমশাই।
—-আমাকে ঘর ছাড়তে হবে। বাবা আর কোন রকম আর্থিক সাহায্য করবেন না আমায়।
—-হঠাৎ এরকম কথা বললেন কেন তোমার বাবা?
—এটাই নাকি আমাদের বংশের রীতি। আমার বাবাকে তাই করতে হয় ছিল। তার কথা জীবনটা লড়াইয়ের জায়গা। লড়াই করে তুমি দাঁড়াও। যেভাবে আমি দাঁড়িয়েছি।
—আমার মনে হয় ঠিক বলেছেন তিনি। নি:স্ব মানুষ লড়াই করে উঠে আসে। তুমি পারবে না কেনকৌনিশ? কেন বাবার শিবিরে থেকে লড়াই করবে? মাঠে নেমে এসো। দেখ তোমার মতো অজস্র মানুষ লড়াইয়ের মিছিলে দৌড়াচ্ছে।
কৌনিশ পৌলমীর হাতটা ধরে বলল–তুমি পাশে থাকলে আমি ঠিক লড়ে যেতে পারবো। তুমি পাশে থাকবে তো?
—তোমার কি মনে হয় আমি মাঠ ছেড়ে চলে যাবার মেয়ে? আমার তো কেউ নেই। বাবা নেই মা নেই। আমার লড়াই তো কবেই শুরু হয়েছে। আমি জানি জীবন এক লড়াইয়ের মিছিল। এই লড়াই কোনদিন থামবে না। যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন লড়াই চলবে। তবে সবার লড়াইটা এক রকম নয়। রেসের মাঠের সব ঘোড়া তো এক রকম ভাবে ছোটে না। কেউ এগিয়ে যায় কেউ একটু পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু দৌঁড়াছে হবে সবাইকে। থামলে মৃত্যু।
—কাল থেকে লড়াইয়ের মিছিলে আর একটা স্যংখা বাড়লো পৌলমী।
—মিছিলের সংখ্যা কোনদিন কমে না কৌনিশ। বাড়ে। বাড়তে থাকে। জীবন যে অনেক বড়। জীবন যে অসংখ্য। জীবন লক্ষ লক্ষ প্রান নিয়ে ছুটছে।

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।