আমার নাম সবুজ। আমার মন খারাপ। কেনো জানো আমি না স্বপ্ন দেখি না। বাবাকে বললাম—জানো বাবা আমি না স্বপ্ন দেখছি না।
বাবা দাড়ি কাটছে। অফিস যাবে। বলল—স্বপ্ন দেখছো না?
—না। একটাও দেখছি না।
—–এতে কি তোমার অসুবিধে হচ্ছে?
—-হ্যাঁ ।হচ্ছে তো।
—-কি রকম? বাবা বারান্দায় গিয়ে মুখ ধুয়ে এসে বলল—বল তোমার কি অসুবিধে হচ্ছে?
—-আমি তো বুঝতে পারছি না আমি ঘুমোছি
না জেগে আছি।
– – – – মানে? কি বলছো তুমি?
——আমার যখন স্বপ্ন ভেঙে যেত, বুঝতাম এতখন আমি ঘুমোছিলাম। এখন তো তা হচ্ছে না।
—+তাহলে তুমি সারারাত কি করছো?
উওর শোনার আগে বাথরুমে ঢুকে গেল বাবা।
দশ মিনিটে বেরিয়ে এসে বলল—কি বলছিলি বল?
—-সারা রাত আমি শুয়ে থাকি।
—শুয়ে কি কর? ঘুমাও, না জেগে থাকো?
—–সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
—–বুঝতে পারছি এখন তোমার স্কুল নেই তো। বন্ধুদের
সংগে দেখা হচ্ছে না। মন খারাপ। সেটা থেকে—
—-বাবা তুমি যা ভাবছো তা নয়।
—-অফিস থেকে ফিরে ডাক্তার রায়ের কাছে যাবো। এই বিনু আমার অষুধটা দে।
বিনু খুব ভালো। আমি পিসি বলি। আগে এক বেলা কাজ করত। মা ডিভোর্স নিয়ে চলে যাবার পর এখন সারা দিন কাজ করে।
বিনু পিসি অষুধ দিয়ে গেল। বাবা খেল। তারপর
বলল—আচ্ছা আগে কখনো তোমার
এমন হয়েছে?
–না। মোটেও না।
–আচ্ছা তোমার কি মার জন্য মন খারাপ লাগে?
—-না।
–তোমার কি শরীর দূর্বল লাগে?
—-না। মন দূর্বল লাগে। মনে হয় আমি মরে যাবো।
দিলীপ পাল টাই বাঁধছিলেন। তার হাত থেমে গেল। তিনি ছেলের মুখের কাছে এসে বললেন – – – – – – তুমি মরে যাওয়া বোঝ?
——কেন বুঝবো না? দাদান তো মরে গেছে।
—–আমার বাবার কথা বলছো তো?
—–হ্যাঁ ।
—–তিনি বেঁচে থাকলে তোমার এই সমস্যা মিটিয়ে দিতেন। আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। কবে থেকে তোমার এই সমস্যা দেখা গেছে?
—-তা আড়াই মাস হবে।
—এত দিন বল নি কেন?
—ভয়ে ।তুমি আজকাল যা রেগে থাকো।
—–দু মাস লকডাউন। ব্যাবসার অবস্হা খারাপ। এখন আনলক ওয়ান চলেছে। তবু অবস্হার কোন পরিবর্তন নেই। মাথা ঠিক থাকে? কিন্তু
তোমার সংগে তো কখনো—–
—-না। আমার সংগে তো তুমি বেশি কথা বল না।
—-আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বিকেলে
ডাক্তারের কাছে যাবো। তুমি বেশি ভেবো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
বলল বটে দিলীপ রায়। কিছু রাস্তা গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ি চলে এল। বলল- – সবুজ রেডি হও। আমারা এখনই ডা:রায়ের কাছে যাবো। আমি ফোন করেছি, উনি আসতে বললেন।
2
—ডা:রায় কি বললেন সবুজ? তিনি তো তোমায়
ভিতরের চেম্বারে নিয়ে গেলেন।
—-পৃথিবীর এক গভীর অসুখ হয়েছে বাবা। করোনা ভাইরাস। লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। সেতো আমি জানি। ডাক্তার দাদু বললেন—এতে পৃথিবীর খুব কষ্ট হচ্ছে। এটাই পৃথিবীর অসুখ। পৃথিবীর যদি অসুখ হয় মানুষ স্বপ্ন দেখবে
কি করে? স্বপ্ন তো দেখায় পৃথিবী। ডা:দাদু বললেন – – – – পৃথিবী সুস্থ হলে তুমি আবার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
—শোন সবুজ শুধু তুমি নও সারা পৃথিবী স্বপ্ন
দেখবে।
—-কবে বাবা?
—-অপেক্ষা কর। স্বপ্ন দেখতে গেলে অপেক্ষা করতে হয়।