সকাল থেকেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি,
সামনের রাস্তায় এক বুক সমান জল।
মাঝে মাঝেই মেঘের গর্জনে কান ঝালাপালা,
সাথে চোখ ধাঁধানো বিদুৎের ঝলকানি।
দেরীতে ঘুম ভেঙে উঠে থেকে দেখছি,
অঝোর ধারায় আকাশের কান্না।
আমার মনটাও আজ ভীষণ খারাপ,
কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড়ে,ন্যাতানো।
কোন কাজেই পাচ্ছি না উৎসাহ,
থেকে থেকেই বাইরে চলে যাচ্ছে চোখ।
মনটাও যেন গুমড়িয়ে কাঁদছে,
পুরনো ছাইচাপা স্মৃতিরা উঠছে জেগে।
এমনই এক বৃষ্টির দিনে দেখেছিলাম তাকে,
সেদিনও সকাল থেকে হচ্ছিল এমনই বৃষ্টি।
কিন্তু সেটা মনখারাপের বৃষ্টি তো ছিল না,
বরঞ্চ বেশ উপভোগ করছিলাম সেই রোমান্টিক ওয়েদার।
তারপর কেটে গেছে বহুদিন,
বয়ে গেছে অনেকটা সময়।
আজও ভুলে যেতে পারিনি তাকে,
জানিওনা,কোথায় সে,কোন ঠিকানায়।
তখনকার দিনে ছিল না মুঠোফোনের সুবিধা,
পুরনো ছেড়া চিঠিরাই ছিল ভরসা।
তাতেই সে লিখেছিল তার নাম,
যা সযত্নে লুকিয়ে রেখেছি আমি স্নেহের আঁচলে।
হয়ত বা বিয়ে হয়ে গেছে আমার মনপুরুষের,
হয়ত বা সে খুব সুখী।
কিন্তু আজও তার অপেক্ষায়
আমি চিরকুমারী,
তার সাথে তাসের ঘর বানাবার আশে।
আজকে খুব মনে পড়ছে তাঁর কথা,
জানি না কেন কি কারনে মনটা লাগছে খুব অস্থির।
একদৃষ্টে খোলা জানলায় দাঁড়িয়ে দেখছি আকাশের কান্না,
ছোট ছোট কাগজের নৌকা ভেসে যাচ্ছে রাস্তার জমা জলে।
ধুর ভালো লাগছে না কিছুই,
কাজের দিদিও আসেনি আজকে।
নিজেই কিচেনে গিয়ে বানালাম কফি,
তারপর ধূমায়িত পেয়ালা হাতে বসলাম বোকাবাক্সের সামনে।
একটার পর একটা চ্যানেল ঘুড়িয়ে চলেছি,
অস্থির মনে ভালো লাগছে না কোনটাই।
হঠাৎ একটা খবরে গেল চোখ আটকে,
আরে,এ যে আমার মনপুরুষ।
বিরাট এক মঞ্চ,আলোয় আলোময়,
পুরস্কৃত হচ্ছেন আমার মনপুরুষ।
সম্বর্ধনায়,ফুলে প্রায় পড়ে গেছে ঢাকা,
তবু হাসিমুখে সামলিয়ে যাচ্ছে সব।
একটা সময় সব শেষ হলে,
আমার মনপুরুষএর কাছে রইল কিছু বলার অনুরোধ।
বলতে শুরু করল সে,
আর আমার কান অধীর আগ্রহে শোনার অপেক্ষায়।
তিলোত্তমা মহানগরীতে তার নিবাস,
গরীব,দুঃখী,অসহায়দের নিয়েই তার জগত।
অনেক এন.জি.ও চলে তাঁরই পরিচালনায়,
একলা ধর্ষিতা মেয়ে থেকে ঘড় ছাড়া সম্বলহীন বৃদ্ধাকে দিয়েছেন আশ্রয়।
যে নাম দিয়ে এগুলি চলে,
সে নামে আমি শিউরে উঠলাম।
শান্তি নিবাস,শান্তি নীড়,শান্তি আশ্রম নামকরণ,
এ যে আমার পিতৃদত্ত নাম।
ধীর গম্ভীর আওয়াজে বলে চললেন তিনি,
আজও তিনি তার শান্তির অপেক্ষায়।
কিন্তু জানা নেই কোন শহরে,কোন ঠিকানায়,
তার শান্তির বাস।
হ্যা,এটা সত্যি,বহুদিন আগে এসে,
উনি আমার পিতার কাছে চেয়েছিলেন আমায়।
কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থানে আমাদের তুলনায় ছিলেন নীচু,
তাই অপমানিত লজ্জিত হয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে।
আমিও যে ছেড়েছিলাম ঘর,
বহু অভিমান জমে ছিল এই বুকে।
আজ,ওনাকে রূপোলি পর্দায় দেখে,
নোনা জলের স্রোত নামল দুগাল বেয়ে।
বাইরে আকাশের কান্না,
আর ভেতরে ভারাক্রান্ত হৃদয়ের প্লাবন।
কিন্তু এ যে দুঃখের কান্না নয়,
আনন্দাশ্রু,যা কিনা মিশে যাচ্ছে ব্যাথার সাগরে।
চমকিত হয়ে দেখি,
রূপোলি পর্দায় ফুটে উঠেছে,
ওনার মোবাইল নাম্বার,
যা কিনা হবে আমাদের মিলনের যোগসূত্র।
আগামী ভবিষ্যতের সুখী সুখী কল্পনায়,
ভেসে গেলাম আমি কাগজের নৌকার মত।
এতদিনের জমানো অভিমানের পাথর শুরু করেছে গলতে,
আর খারাপ লাগছে না এখন আকাশের কান্না।
আরে আরে,আকাশের কান্নাও গেছে থেমে,
দুষ্টু মিষ্টি রোদ মারছে ঝিলিক।
রঙ এর দোলা লেগেছে আমার মনেও,
প্রতিক্ষা আমার মনপুরষকে চাক্ষুষ দেখার।