আমার অন্ধকার জীবনে আলোর দিশারী তুমি,
এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের মত এসে,
আমার দগদগে ঘায়ে বুলিয়েছ আরামের প্রলেপ।
আমার সকল দুঃখের অবসান ঘটিয়েছ তুমি।
ছিলাম বন্দী পৃথিবীর নাম করা পাগলা গারদে,
কাউকে চিনতে পারতাম না,
কারোর কথা শুনতাম না,
ছুড়ে ছুড়ে ফেলতাম সব কিছুই,
রেহাই দিতাম না মুখের গ্রাসকেও।
আমার এই অবস্থার জন্যে দায়ী আমার সো কলড প্রেমিকা,
খুব ভালোবাসতাম যে তাকে,
পারলে আকাশের চাঁদটাও পেড়ে আনি তার জন্যে,
সবার সাথে ওর হয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত এই আমি।
মর্যাদা দিল না সে,শুধুই করল ব্যবহার,
স্বার্থ ফুরোতেই জাস্ট ছুঁড়ে ফেলে দিল আমায়,
তারপর আমার চোখের সামনে দিয়ে ধরল অন্য একজনের হাত,
শুধু রাতজাগা বালিশটা হয়ে থাকল আমার নীরব অশ্রুপাতের সাক্ষী।
যেদিন আমার প্রেমিকার বিয়ে ছিল,
আমি গেছিলাম ওর কাছে,ওকে ফিরিয়ে আনব এই আশায়,
আমার প্রেমের প্রতিদানে ও করল আমায় চরম অপমান,
কত আলো জ্বলছিল বিয়েবাড়িতে,অথচ আমি ছিলাম অন্ধকারে।
আমার মন আর পারল না সহ্য করতে,
একেবারে ভেঙে পড়লাম আমি,
সুইসাইড আ্যটেম্পটেও হলাম না সাক্সেসফুল,
অবশেষে পালালাম বাড়ি থেকে।
তারপর কোথাকার জল কোথায় গেল বয়ে,
আমার স্থায়ী ঠিকানা তখন খোলা আকাশের নীচে শক্ত ফুটপাত,
আমি তো মানসিক ভারসাম্যহীন এক পাগল,ভবঘুরে,
কোনদিন কারোর দয়ায় খাবার জোটে,তো কোনদিন আধপেটা।
এরকম অবস্থায় একদিন এল খুব জ্বর,
সারারাত বৃষ্টিতে ভেজার ফল,
যখন জ্বরের ঘোরে আধমরা আমি কাতরাচ্ছি,
কোন এক সহৃদয় ব্যক্তি পৌঁছে দিল আমায় হাসপাতালে।
তারপর থেকে আমি এখানে,তোমার কাছে,
আমায় তো শেকল দিয়ে কারা যেন বেঁধে রাখে,
সবাই ভয় পায় আমার কাছে আসতে,
একমাত্র তুমি ছাড়া।
তুমি কি সুন্দর আমায় বোঝ,যত্ন নাও আমার,
ধৈর্য ধরে খাইয়ে দাও প্রতিদিন,
মাথার চুল আঁচড়ে দাও,ওষুধ খাইয়ে দাও,
আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও রাতে।
রোজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি তোমার জন্যে,
কখন আসবে তুমি,বসবে আমার পাশটিতে,
দুটো মিষ্টি করে কথা বলবে হেসে হেসে,
আমি যে একটু একটু করে সেরে উঠছি তোমার সেবায়।
একদিন এলে না তুমি,খুব মনখারাপ আমার,
সেদিন খেলাম না কিচ্ছু,কেউ পারল না খাওয়াতে,
অভিমান হয়েছে তোমার ওপর,কথাই বলব না তুমি এলে,
ওষুধ ফেলে দিলাম ছুঁড়ে।
পর পর বেশ কদিন এলে না,
কানাঘুষো শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে,
ও,তুমিও আমার সেই প্রেমিকার মত,
বুঝলে না আমায়,দূরে ঠেলে দিলে?
বেশ,ভালো থেক,সুখে থেক তুমি,
আমার একতরফা ভালোবাসা হবে না তোমার সুখের পথে কাঁটা,
আর কিছুদিন পরেই আমার ছুটি,
শুরু করব এক নতুন জীবন যা কিনা তোমার ই দান।
এরপর কেটে গেছে বহু বছর,
এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ,স্বাভাবিক,
অনেকবার ভেবেছি যাই তোমার কাছে,
কিন্তু যেতে গিয়েও থেমে গেছি,যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
কি একটা কাজে সেদিন মার্কেটে গেছিলাম,
আচমকা দেখা তোমার সাথে,কত বদলে গেছ তুমি,
চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ,
চিনতে পারনি আমায়।
আমি কিন্তু ঠিক চিনেছি তোমায়,
এগিয়ে গিয়ে দিলাম পরিচয়,
খুব খুশী তুমি আমায় সুস্থ দেখে,
কিন্তু জানলাম তুমি নিজে চরম অসুখী।
বর্তমানে পরিস্থিতিতে তুমি একাকী,অসহায়,ডিভোর্সী,
যে কিনা পরিস্থিতির শিকার,
সবটা শুনে তোমার হাতটা ধরলাম শক্ত করে,
আর জড়িয়ে নিলাম তোমায় বুকে।
আজ তোমার ওপর সব অভিমান গেছে গলে,
তোমাকে ফিরে পেয়েছি,এটাই অনেক,
আমার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে তুমি রাজী,
তোমার সকল দুঃখের ভার লাঘবের দায়িত্ব এখন থেকে আমার।
জোনাক জ্বলা রাতে তোমার মাথা আমার কাঁধে,
ভিজছি আমরা চাঁদের নরম আলোয়,
জ্যোৎস্না স্নানে পরিতৃপ্ত দুটি প্রেমিক হৃদয়,
বন্ধ চোখে ভাসছে তখন আগামী দিনের সুখস্বপ্ন।