Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 ।। কবিতা পার্বণ ।। 26য় দেবাশিস তেওয়ারী

maro news
T3 ।। কবিতা পার্বণ ।। 26য় দেবাশিস তেওয়ারী

১| ১৪ ই জানুয়ারি

১৪ ই জানুয়ারি এলে আমার বুকের ভেতরে একটা সরীসৃপ হেঁটে যায়, চলাফেরা করে, ঘোরে-ফেরে। তার জন্য কোনও কোনও সময় একটা আসন পেতে দিই, সে আসনে বসতে চায় না। চঞ্চল মন। তার মন উপেক্ষা করে আমি স্থির থাকতে পারি না। সে আমাকে অভয়মুদ্রা দান করে। আমার ইষ্টদেবী সিদ্ধেশ্বরী মা আড়াল থেকে আমার এইসব চালচলন পর্যবেক্ষণ করেন আর হাসেন। তার হাসির চোটে পায়ের তলায় থাকা বাবার গলায় সে-সাপ আবার যথারীতি চলে যায়। আমাকে একটু নাড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায়। কি নাড়িয়ে? টনক। লজ্জাবস্তু পরে থাকা মা আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে যান। ভোর ৩ঃ৫৫ মিনিটে বাবার আদেশ পেলে এখনও আমার নবজন্ম হয়। মায়ের জন্য একজীবনে কি-ই বা করতে পারলাম ?

২| কবিতা লিখছি

ন্যাকা হয়ে বসে থেকে সর্দি শুকিয়ে ফেলে লাভ হয় না। বউ পেটব্যথায় কাতরাচ্ছে ডাক্তারের ওষুধ ইঞ্জেকশান সবই পড়েছে, ব্যথা তো কমছে না। হসপিটাল থেকে এইমাত্র বাড়ি ফিরলাম, বউ কষ্ট পেতে পেতে ঘুমিয়ে পড়ল। আমার ছোট্টো শিশুপুত্র নীচে মায়ের কাছে অকাতরে ঘুমুচ্ছে। সবাই ঘুমুচ্ছে। জগন্মাতাকে বললাম বউয়ের কষ্ট সবটুকু আমাকে দাও। বউ ঘুমুচ্ছে, ঘুমুচ্ছে। আমি পাশে ঠাঁয় বসে কবিতা লিখছি। আপনাকে পাঠাব বলে। কিন্তু পার্বণ নিয়ে নয় কষ্ট নিয়েই লিখছি।

৩| জন্মদিন

আমার জন্মদিন ১৪ ই জানুয়ারি পৌষপার্বণের রাতে অথচ বাড়ির সবাই অসুস্থ। কী লিখব পার্বণ নিয়ে, বরং অসুস্থতা নিয়ে লেখা যাক দু'এক পশলা। এমনি করে ফাঁকি দিয়ে বাবাও তো চলে গিয়েছিল। আমিও কি সুস্থ আছি। কত সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছি। বউ অসুস্থ ঘুমচ্ছে, রাত জেগে বসে আছি পাশে। বউ বলেছিল আমার জন্মদিনে একটা নতুন আইটেম করবে । নতুন রেসিপি। হে ঈশ্বর, আমার জন্মদিন কি এভাবেই কাটবে? আমার জন্মদিনগুলো এভাবেই কাটে।

৪| মা

পৌষপার্বণে সব বার পিঠেপুলি হয় না আমাদের বাড়িতে। তার আগেপরেও হয় অথবা দিনেরদিন গভীর রাত্রে হয়। তখন মাকে নিশিতে পায়। নেশাগ্রস্তের মতো হয়ে ওঠেন মা । একআধদিন মাকে ডালবাটতে দেখেছি গভীর রাত্রে বড়ি দেওয়ার জন্য। উঠে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে বুঝেছি সে-কী কঠিন তপস্যা। ( আমার তপস্যা বলেই মনে হত অন্তত সেই সময়টুকুতে।) তারও আগে রাত জেগে মাকে দেখেছি কাঁথা সেলাই করতে আর আমি পাশে বই নিয়ে পড়ছি, লিখছি আবার পড়ছি। এখন পৌষপার্বণ বিষয়টা গা-সওয়া হয়ে গেছে। এখন মা আর আগের মতো ভোরে উঠে স্নান করতে পারে না পুকুরে, আমি তখন উপরে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর ভাবতাম ওই ঠান্ডার কথা। মা এখন অল্পতে রেগে যায়। 'নস্ত্যভ্যে' বললে হাসিতে ফেটে পড়ে। ডাকলে সাড়া দিলে বলি 'মা, ওই সব তুলে নিল, এখন ওই চালাচ্ছে'। মায়ের হাসি আবার মুহুর্মুহু। ফেটে পড়ি আমরা তিন ভাই(এখন বউগুলোও), ফেটে পড়েন মা।

৫| চোরাটান

নিয়ত শান্তির কথা বলি নিয়ত শান্তির দিকে যাই রোগেরোগে ঘুরে যাবে কলি কখন কিই-বা পরি খাই
তার কোনও হিসেব কি আছে বেবকুব পার্বণগুলো এলে কষ্ট পাই, কষ্ট হয় পাছে মনে হয় ঈশ্বর সেকেলে
তার মাথামুণ্ডু কিছু আছে জীবন কি যন্ত্রণাই শুধু অন্যায় নিয়ে যারা বাঁচে তারা ভালো। আমি দেখি ধূ ধূ
বালিয়াড় ভাঙছে কোন বোধে ? হয়রানি, সাঁতারও কি জানি ! অন্যদিকে অতিমারি ক্রোধে ফলকে ফটকে ফুলদানি
ভয় নয়, লয় করছে লয় সামনে সমূহ পরাজয় বিনায়ক তারও উপরে ওই দ্যাখো, নিয়ে যাচ্ছে চোরে ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register