Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৬১)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৬১)

সুমনা ও জাদু পালক

চন্দ্রকান্তা যখন পুষ্পনগর রাজ্যের রাজা রুদ্র মহিপালের সঙ্গে কথা বলছিল সুমনা তখন ভাবছিল যে , জাদুকর হূডুর প্রাসাদে ঢুকে তাকে পরাস্ত করে, তার জাদুদন্ড হস্তগত করতে হলে, শুধু বিভিন্ন রকমের অস্ত্রশস্ত্র, যা সে পথে উপহারস্বরূপ পেয়েছে, তা দিয়ে কাজ হাসিল করা বেশ কষ্টসাধ্য। বুদ্ধি আর কৌশল উভয়ের প্রয়োগ ছাড়া দুষ্টু জাদুকরকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে না। আপন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার সময় বেগুনি রঙের পরীর পালক সেরকম৯.…ইঙ্গিত দিয়েছিল । পুষ্পনগর রাজ্যের গলিঘুঁজি, রাজপ্রাসাদের প্রতিটি প্রকোষ্ঠ, প্রতিটি কোণ অবশ্যই রাজা রুদ্র মহিপালের নখ দর্পণে আছে। কাজেই এই লড়াই জিততে হলে রাজা রুদ্র মহিপালের সাহায্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। সুমনা বলল, পুষ্পনগরের অধিপতি হে রুদ্রমহিপাল, হে মহারাজ, আপনি আমার সশ্রদ্ধ নমস্কার গ্রহণ করুন। আমরা এখানে যে দুরূহ কাজে এসেছি,তাতে আপনার সাহায্য আমাদের বিশেষ প্রয়োজন। রাজা রুদ্র মহিপাল চিনচিনে গলায় বললেন, তোমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছ, তা শুধু যে তোমাদের জন্য প্রয়োজন তা নয়, তা োোওো জন্য অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু আমাকে এবং আমার রানী থেকে জাদু মন্ত্র বলে হূডু এমন বিকৃত দেহ করে রেখেছে যে, দৈহিকভাবে আমি কোনো রকম সাহায্য তোমাদের করতে পারবো না। তাছাড়া------! ------কী মহারাজ? ------- আমাদের রাজপ্রাসাদের সমস্ত লোকজন এবং রক্ষী বাহিনীকে হূডু যেভাবে মন্ত্র বলে পুতুল বানিয়ে রেখেছে, তাতে তারা আমার নির্দেশ মেনে কোনো রকম সাহায্য করতে পারবে বলে মনে হয় ধ্ব ------- আমি সবটাই বুঝতে পারছি মহারাজ। কিন্তু শক্তি বলে না হোক, বুদ্ধি দিয়ে তো আপনি আমাদের সাহায্য করতে পারবেন। বিশেষত এই মস্ত রাজপ্রাসাদ আমাদের অজানা হলেও আপনি তো পুরোটাই জানেন। আপনি তো জানেন যে, এই রাজপ্রাসাদে হূডু কোথায় আছে, সারাদিন সে কি কি করে এবং তার জাদু দন্ড কোথায় আছে। তাছাড়া আরও একটা বিষয় আমাদের জানা প্রয়োজন। ------ কী রত্নমালা? ----- পরীদের রানী কোথায় বন্দী আছেন এই প্রাসাদের ভিতরে সেটাও আমাদের জানা প্রয়োজন। পরীরানীর জাদুদণ্ড চুরি করে এনেছে ওই দুষ্টু জাদুকর। সেটাও উদ্ধার করে ফিরিয়ে দিতে হবে পরী রানীকে। সুমনার কথা শুনে নিঃশব্দে কাঁদতে শুরু করলেন, রাজা রুদ্র মহিপাল। তার দুচোখ বেয়ে জল কপোল ভাসিয়ে টুপটাপ করে ঝরে পড়তে শুরু করলো বাগানের ঘাসের উপরে। সুমনা খুব অবাক হল ।সে বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল, হে মহারাজ, আপনি কাঁদছেন কেন ?আমি কি কোন ভুল কথা বলে আপনাকে আঘাত করেছি? রাজারুদ্র মহিপাল কাঁদতে কাঁদতেই উত্তর দিলেন, না রত্নমালা, আমি কাঁদছি আমার অসহায়তার জন্য আর এই পুষ্পনগর রাজ্যের রাজকুমার হিরন কুমারের জন্য দুশ্চিন্তায়। ----- হিরন কুমার আপনার পুত্র? ------- হ্যাঁ, রানী মায়াবতী দীর্ঘকাল সন্তানের জননী হতে না পারার পরে মহাদেবের তপস্যা শুরু করেন। ----- কোথায়? ------ রানীর পিত্রালয় সমুদ্রগড় রাজ্যে। সমুদ্রগড় রাজ্যের সবাই খুব শিবের ভক্ত। তাই মায়াবতী সমুদ্রগড় রাজ্যে অবস্থিত নির্জন চন্দ্রশেখর উপত্যকায় দীর্ঘ পাঁচ বছর তপস্যা করে বাবা ভোলানাথের আশীর্বাদ পায় । ------ চন্দ্রশেখর উপত্যকা! ভারী অদ্ভুত নাম তো। ------ হ্যাঁ রত্নমালা, শুধু নামেই নয়, সত্যি ভারি অদ্ভুত সেই উপত্যকা। ------ রানী মায়াবতীর অনুরোধে আমি একবার ঐ বিচিত্র উপত্যকায় গেছিলাম।তিনদিকে তিনটি শিবলিঙ্গের আকৃতির পাহাড়ের মাঝখানে ওই উপত্যকা। সারা উপত্যকা জুড়ে ছড়ানো ছোট বড় অসংখ্য শিবলিঙ্গ। -------- কী বলছেন মহারাজ! ওই উপত্যকায় অত শিবলিঙ্গ কে প্রতিষ্ঠা করেছেন? ------কেউনা।সব স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ। -----তারপর? ----- তপস্যা শেষে রানী মায়াবতী ফিরে আসেন এই পুষ্পনগর রাজ্যে। এখানে আসার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর দেহে সন্তানসম্ভাবনার লক্ষণ ফুটে ওঠে। যথাসময়ে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ওই সন্তানের নাম হিরণ কুমার। -----তারপর? ------ হিরন কুমার এর বয়স যখন সাত োবছর হয়, তখন হঠাৎ সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। দেশ বিদেশ থেকে অনেক বৈদ্য হেকিম নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু তারা কেউ রাজকুমারকে সুস্থ করে তুলতে পারেন না। তখন হঠাৎ রাজ্যে এসে উপস্থিত হন জটাজূটধারী এক সন্ন্যাসী। সেই সন্ন্যাসী রানীকে মনে করিয়ে দেন ,যে রাতে রানী মারাবতী ওই উপত্যকায় স্বপ্নে মহাদেবের আশীর্বাদ লাভ করেন, তারপরের দিন খুব সকালে এক সাধুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার। তিনি রানীকে বলেছিলেন যে, সন্তানের বয়স সাত বছর পূর্ণ হলে রাজ্যে একটি শিবমন্দির তৈরি করে, সেখানে শ্বেত পাথরের শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করতে। তাহলেই সুস্থ হবে রাজকুমার। ------- ওই মন্দির তৈরি করে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? ----না। -----কেন? ------ এই পুষ্প নগর রাজ্য আমার পিতামহের আমল থেকে বিষ্ণু ভক্ত রাজ্য। এখানে কোনভাবেই শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি আমি দিতে পারিনি। -----তাহলে? ------ রানী মায়াবতী তার সন্তানকে নিয়ে নিজের পিত্রালয়ে যান। সেখানে ধুমধাম করে মহাদেবের পূজার আয়োজন করেন আমার শ্বশুর মশাই। এতে হিরন কুমার সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু, কিছুদিন বাদে আবার সেই সন্ন্যাসী এসে উপস্থিত হন আমার রাজ্যে। রাজ্যে তখনো শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠা হয়নি শুনে ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। তিনি অভিশাপ দেন, ভয়ংকর বিপদে পড়বে রাজকুমার। কোন এক দুরাত্মা বন্দী করবে তাকে। আর দেখো, সেই অভিশাপ সত্যি হলো । হূডুর হাতে বন্দি হলো রাজপুত্র হিরণ কুমার। কাঁদতে কাঁদতেই কথা বলছিলেন রাজা রুদ্র মহিপাল। তাঁর চোখের জল পড়ছিল মাটিতে। হঠাৎ সেদিকে তাকিয়ে প্রায় চিৎকার করে উঠলো সুমনা,ওটা কী? চলবে   ‌
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register