Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৪৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৪৯)

দেবমাল্য

পায়ের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল কাচ লাগানো দু'পাল্লার দরজা। সেটা দিয়ে বাইরের সব কিছু দেখা যায়। সেদিকে তাকাতেই ও আকাশ থেকে পড়ল। এটা কী দেখছে ও! কী! সেদিন ভোরবেলায় রণোর গাড়ি করে তানিয়াকে বহরমপুর স্টেশন থেকে আনতে যাওয়ার সময় তো সে এটাই দেখেছিল! এই তো সেই জিপ। জিপটা চালাচ্ছেন একজন শিখ। মাথায় পাগড়ি বাঁধা। পেছনের সিটে দু'পাশে দু'জন বোরখা পরা মহিলা। মুখের ঢাকনাটা কপালের ওপর দিয়ে মাথার পেছনে ফেলা। তাদের মাঝখানে বসে আছে তানিয়া। দেখে মনে হচ্ছে, বড় কোনও একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তাই প্রচুর কান্নাকাটি করেছে সে। প্রবল ঝড়ে পড়ে যেন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কোনও দিকে তাকাচ্ছে না। যেন শোকে পাথর হয়ে গেছে। শুয়ে শুয়েই দেবমাল্য বুঝতে পারল, তার অ্যাম্বুলেন্সটা তারস্বরে সাইরেন বাজাতে বাজাতে রুদ্ধশ্বাসে সামনের দিকে ছুটে চলেছে। এর পরই খবর ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। দৌলতাবাদের একটা হোটেলে পর পর বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলেছে। দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় ক'জন ছিল, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কী উদ্দেশ্যে হামলা তাও পরিষ্কার নয়। ব্যবসায়িক কারণ, রাজনৈতিক কোন্দল, নাকি পারিবারিক বিরোধ, নাকি এটা নিছকই ত্রিকোণ প্রেমের বলি? কারা মেরেছে, তা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সমস্ত নিউজ চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। সাংবাদিকরা বারবার ফোন করছেন দৌলতাবাদ থানায়। কেউ কেউ সরাসরি ফোন করছেন এস পি ভরতলাল মিনাকে। তিনি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন, পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট পেশ করতে। শুধু থানা-পুলিশের বিবৃতির ওপর ভরসা না করে কলকাতা টিভির সঞ্জয় বিশ্বাস, দৈনিক স্টেটসম্যানের কুশলকুমার বাগচী, এন ই বাংলার বিনোদ পটেল, সংবাদ প্রতিদিনের সুবীর ঘোষেরা রওনা হয়ে গেছেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে। আজ দুপুরেই রণো যাঁকে তার বাড়িতে নিয়ে এসেছিল, যার সঙ্গে অতক্ষণ কথা হয়েছিল, যার কথার ছত্রে ছত্রে ছিল অসংলগ্নতা, যার একটা কথার সঙ্গে অন্য কথার কোনও যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছিল না ও, সেই ভদ্রলোকই কিনা এইভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন! শোনামাত্র ক্যামেরাম্যানকে খবর দিয়ে শুধু সংবাদের জন্যই নয়, একদিনের জন্য হলেও, যখন আলাপ হয়েছিল, সেই মানবিক কারণেই স্টার আনন্দের রাজীব ঘোষ বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল দৌলতাবাদের দিকে। কিন্তু বহরমপুর থেকে বেরোতে না বেরোতেই বানজেটিয়ার কাছে এসে একেবারে বাগরুদ্ধ হয়ে গেল ও। দেখল, হুবহু সেই ছবি। যেটা দেবমাল্য তাকে বলেছিল। কিন্তু মেলাতে না পেরে সে ভেবেছিল, লোকটা ভুলভাল বকছে। একদম সেই ছবি। জিপটা চালাচ্ছে একজন শিখ ভদ্রলোক। মাথায় পাগড়ি বাঁধা। পেছনের সিটে বোরখা পরা দু'জন ভদ্রমহিলা। মাঝখানে অল্পবয়সি একটা বউ। তার মানে বিধ্বস্ত এই মহিলাই দেবমাল্যর স্ত্রী। কিন্তু এই দৃশ্যটা অত আগে দেবমাল্য দেখলেন কী করে! রাজীব দাঁড়িয়ে পড়ল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register