Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৪৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৪৮)

দেবমাল্য

দৃশ্যটা দেখে ও শিহরিত হয়ে গেল। চোখের সামনে সব কিছু যেন তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগল। হুবহু এই দৃশ্যটাই তো গতকাল রাতে জানালা থেকে ও দেখেছিল! তবে জিপটাকে তখন খেয়াল করেনি। তবু এটা কী করে হয়! ও যখন এ সব নিয়ে ভাবছে, তানিয়া বলল, কী গো, হাত নাড়াও।  দেখছ না, ওঁরা টা টা করছেন। ও হাত নাড়াতেই মনে হল, কারা যেন ধুপধাপ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। তানিয়া দরজা খুলেই, কথার এমন এক-একটা অগ্নিবাণ ছুড়ছিল যে, তানিয়া তো নয়ই, আত্মরক্ষা করার জন্য সে কী বলবে, সেই শব্দ হাতড়াতে হাতড়াতে ঘরে ঢুকে দরজাটা পা দিয়ে পিছন দিকে ঠেলে দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ছিটকিনি দেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল দেবমাল্য। দরজাটা খোলা পেয়ে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ল তিন-চারটে ছেলে। তাদের একজনকে দেবমাল্য চিনতে পারল। সে দিন তার কারখানায় মাছ স্বপনের সঙ্গে যারা এসেছিল, তাদের মধ্যে ছিল এই ছেলেটি। এর কথা বিশেষ করে মনে আছে এই জন্যই যে, এই ছেলেটাই একটা মোবাইল নিয়ে মাছ স্বপনের পেছনে দাঁড়িয়ে কী সব খুটখাট করছিল। মাছ স্বপনের কথায় ও মোবাইলটা অন করার কয়েক মুহূর্ত পরেই এই ছেলেটাই বলেছিল, আপনার ফোন তো সুইচ অফ। যাওয়ার সময় এ-ই বলে গিয়েছিল, ল্যান্ড ফোনটাও ঠিক করে রাখুন। বাড়ির ফোনটাতেও ফোন করলে যেন পাই। তারা ঢুকে কোনও কথা বলল না। বাকিরা দরজা আগলে দাঁড়িয়ে রইল। যাতে ওরা দৌড়ে পালাতে না পারে। শুধু এই ছেলেটা দু'পা এগিয়ে এসে, যেন রুমাল বের করছে, এমন ভঙ্গিমায় পকেট থেকে একটা ছ'ঘড়া বের করে ওর দিকে তাক করল কি করল না, টিগার টিপে দিল। তানিয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেবমাল্য এক ধাক্কা মেরে তানিয়াকে ও দিকে ঠেলে মুহূর্তের মধ্যে নিজেও সরে গেল জানালার সামনে থেকে। আবার গুলি। গুলিটা কোথায় লাগল কে জানে! দেবমাল্য মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। একটা নয়, দুটো নয়, পর পর বেশ কয়েকটা গুলির শব্দ শুনতে পেল দেবমাল্য। কাল রাতে যেমন শুনেছিল, ঠিক তেমন। চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে গেল। তার পরেই সব অন্ধকার। তারই মধ্যে খুব ক্ষীণভাবে ও শুনতে পেল, তার বউয়ের কান বিদীর্ণ করা আর্তনাদ। তার পর আর কিচ্ছু মনে নেই। মৃদু ঝাঁকুনিতে আচ্ছন্নের মধ্যে ও শুনতে পেল, খুব কাছাকাছি জোরে কোথাও সাইরেন বাজছে। কিন্তু কোথায়! কার কী হয়েছে! কোনওরকমে চোখ মেলে দেখল, অন্য কেউ নয়, সে নিজেই শুয়ে আছে একটা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে। নাকে অক্সিজেনের মাস্ক লাগানো। মাথার কাছে সাদা ধবধবে পোশাক পরা একজন বসে আছেন। সম্ভবত নার্স। তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! কী হয়েছে তার! তানিয়া কোথায়! এ রকম হাজার প্রশ্ন তার মাথার মধ্যে কিলবিল করতে লাগল। কিন্তু মুখ ফুটে একটা শব্দও বেরোল না। যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register