মার্গে অনন্য সম্মান মিতা দাস বিশ্বাস (সর্বোত্তম)
অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ১০৬
বিষয় - সাহিত্যিক
আমার চোখে শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় লেখক।সেই কৈশোর থেকে আমি শরৎচন্দ্রের বই হাতে নি।একটু ভুল বললাম মেজদা পাঠ্যবই থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে আমার পথ চলা।শরৎ বাবু আর শ্রীকান্ত কে যে কাকে নিয়ে বলে সেটাই জানার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে আমি শ্রীকান্তের চারখন্ড পড়ি।একটা ভবঘুরে চরিত্র এই শ্রীকান্ত। বড়দিদি পড়েছিলাম তারপর ।মেয়ে হিসেবে বড়দিদি আমাকে টানে। এমন চরিত্র শরৎ বাবু ছাড়া মনে হয় কেউই রচিতে পারত না। প্রেমিক শরৎ চন্দ্র।তার গল্প নারী প্রধান।নারী চরিত্র নানা ভাবে তার গল্পে ধরা পড়ে।সে চরিত্র বিধবা ,পতিতা যাই হোক।নারীর ভালোবাসা নিয়ে সেই সময় তার কলম দিয়ে অনেক সাহসী লেখা বেড়িয়েছে।
পরিনীতা আমি আজো পড়ি ।দুই পুরুষের ভালোবাসা এক নারীকে নিয়ে অথচ সেই নারী খেলাচ্ছলে যে বিয়েটা হয় তাকে আঁকড়ে জীবনের ঝড়ঝঞ্জা পেরিয়ে অবশেষে তার মনের মানুষকে কাছে পায়। এমন ভালোবাসা এই ডিজিটাল যুগে রুপকথা।
ক্লাস টেনে লুকিয়ে পড়িছিলাম দেবদাস।পার্বতী আর দেবা দার ভালোবাসা তো মুখ্য এই উপন্যাসে।একটি পুরুষ এমন উজার করে ভালোবাসতে পারে তাই দেবদাস না পড়লে বোঝা যায় না।অথচ তার মধ্যে চন্দ্রমুখী নামক বাইজির ভালোবাসা অমলিন নয়।সে পেশাগত বাইজি হলেও দেবদাসের প্রতি তার পবিত্র ভালবাসা আজো বলে চন্দ্রমুখী কজন হয় ?পারো সেতো হতেই পারে। এভাবে শরৎ বাবু তার কলমের ঝর্নাধারায় আমাদের সিক্ত করেছে।
তার লেখা দত্তা, চরিত্রহীন,বিরাজবৌ,বিন্দুর ছেলে,পল্লীসমাজ,অরক্ষনীয়া, গৃহদাহ, নিস্কৃতি , দেনাপাওনা আরো কতো উপন্যাস। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মেছিলেন হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।বাবার বাড়ি ছিল উত্তর ২৪পরগনার কাকুরগাছিতে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাবার নাম মোতিলাল চট্টোপাধ্যায় মা ভুবনমোহিনী দেবী। কথাসাহিত্যেকের বাবা দরিদ্র ছিলেন বলে মাতুলালয়ে তিনি বড়ো হন। তাঁর ডাকনাম ছিল ন্যাড়া।১৯২৩ সালে তিনি জগত্তারিনী পদক পান। উনি "অনিলা দেবী"ছদ্মনাম ব্যাবহার করতেন।
বাংলা ভাষার এই সর্বশ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী,অমর ঔপন্যাসিক মনিষী শরৎ চন্দ্র ১৯৩৮ সালের ১৬ই জানুয়ারী অমৃত লোকে যাত্রা করেন।
শরৎ বাবু বলতেন, সংসারে যারা শুধু দিলে পেলে না কিছুই যারা বঞ্চিত যারা দুর্বল,উৎপীড়িত , মানুষ যাদের চোখের জলের কোনো হিসাব নিলে না, নিরুপায় দুঃখময় জীবনে তারা কোনোদিন ভেবেও পেলে না, সমস্ত থেকেও কেন তাদের কিছুতেই অধিকার নেই-এদের বেদনাই দিলে আমার মুখ খুলে ,এরাই পাঠালে আমাকে মানুষের কাছে মানুষের নালিশ জানাতে।।
0 Comments.