Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩৯)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩৯)

সুমনা ও জাদু পালক

মহা -কচ্ছপ চোখ বন্ধ করে বলতে শুরু করল তার বন্দি হওয়ার কাহিনী--- " এই যে ছোট্ট নদীটা তোমরা দেখতে পাচ্ছ, ,এটার নাম অঞ্জনা। খুব গভীর এটা ।বহুদূরে লাল পাহাড়ি গ্রামের মেঘছুঁইছুঁই পাহাড়ের পূর্ব মাথা থেকে ঝরনা হয়ে বেরিয়েছে। সমতল ভূমিতে নেমে ওই ঝর্ণা নদী হয়ে ছোট-বড় অনেক গ্রাম, ফসলের ক্ষেত , ফলের বাগান, জঙ্গল ইত্যাদি ছুঁয়ে আমাদের এখানে এসেছে।" সুমনা জিজ্ঞাসা করল, ও কাছিম দাদু, এই নদীটা কি চলতে চলতে সাগরে গিয়ে মিশেছে? সুমনার প্রশ্ন শুনে মহা কচ্ছপ কিছুক্ষণ যেন অবাক হয়ে সুমনার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করল। তারপর হঠাৎ হাঃ হাঃ করে হাসতে লাগল। সুমনা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, তুমি হাসছো কেন কাছিম দাদু? ------ রাজকুমারী রত্নমালা, তোমার মুখে 'কাছিম দাদু' সম্বোধন শুনে খুব আনন্দ পেলাম আমি। একদম ঠিক বলেছ তুমি। আমি সত্যিই একটা বুড়ো কচ্ছপ। আমার বয়স কতো জানো? ------কত? ----- একশ পঁচিশ বছর। ------তাই? ----- হ্যাঁ, আমার ঠাকুর্দা এখনো বেঁচে আছে। আমার ঠাকুর্দা আমার বাবাকে এখনো 'খোকা' বলে ডাকে। ------ তোমার ঠাকুর্দা!------কত বয়স তার? ----- আমার মায়ের মুখে শুনেছি, ঠাকুর্দার বয়স এখন একশ বিরানব্বই বছর। এখনো ফী হপ্তায় 'ভোরাই হ্রদে' বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতারের প্রতিযোগিতায় নামে। ------ ভোরাই হ্রদ! সেটা আবার কোথায়? ------ওহো, তোমাকে তো বলতে ভুলেই গেছি যে, আমাদের এই ছোট্ট নদী অঞ্জনা বেশ খানিকটা যাওয়ার পরে গিয়ে মিশেছে ওই ভোরাই হ্রদে। ----- তাই কি এই নদীর জল শুকায় না কখনো? ------হয়তো তাই। অদৃশ্য কন্ঠে বলল, কিন্তু এসবের সঙ্গে জাদুকর হূডুর কি সম্পর্ক? ---- বলছি। তার আগে আমার একটা কথার জবাব দাও তো দেখি। ----- কী? ----- তুমি সামনে না এসে আড়াল থেকে কথা বলছ কেন? তুমি বুঝি রাজকুমারী রত্নমালার দেহরক্ষী? কিন্তু সামনে না এলে তুমি রাজকুমারীকে রক্ষা করবে কিভাবে? ------- দেহরক্ষী!------- হ্যাঁ, তা বলতে পারো।তবে রাজকুমারী রত্নমালা কে স্বয়ং নীলকন্ঠ মহাদেব রক্ষা করছেন, কোন ভয় নেই। হে কূর্ম কুমার, এবারে আমাদের বলতো কি কারণে জাদুকর হূডু বন্দী করেছিল তোমাকে। ----- ওইযে ভোরাই হ্রদের কথা বললাম , ওর নিচে আছে মুক্তা পাহাড়। বহু বছর ধরে হ্রদের বাসিন্দা ঝিনুকেরা ওই পাহাড়ের কাছে গিয়ে নিজের শরীর থেকে মুক্তা খসিয়ে প্রাণ ত্যাগ করে। মুক্তা জমে জমে তৈরি হয়েছে ওই পাহাড়। তোমরা তো নিশ্চয়ই জানো যে মুক্তা খুব দামী রত্ন। ------ হ্যাঁ ,সেটা জানি। জাদুকর হূডু বুঝি ওই ভোরাই হ্রদের নিচ থেকে মুক্তা এনে দিতে বলেছিল তোমাকে ?---- আর তুমি ওর আদেশ মেনে নাওনি বলে ও বন্দী করেছে তোমাকে ।সুমনা বলে। --- হ্যাঁ, সেটা আংশিক সত্যি,, পুরোটা নয়। ----মানে? ওই মুক্তা পাহাড় থেকে সাধারণ মুক্তা এনে দিতে আমাকে বলেনি হূডু। -----তাহলে? ------ ওখানে একটা বড় লাল রঙের মুক্তা আছে। সেটার বৈশিষ্ট্য হলো ,ওটা হাতে নিয়ে তুমি যার কথা ভাববে বা যাকে দেখতে চাইবে, তার প্রতিচ্ছবি ওই মুক্তার গায়ে ভেসে উঠবে। ----বাঃ! দারুন মজা তো। ----- হ্যাঁ রাজকুমারী রত্নমালা, ওই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য মুক্তা পাহাড় থেকে ওই মুক্তা খুঁজে এনে দিতে আমাকে প্রথমে অনুরোধ,পরে আদেশ দিয়েছিল জাদুকর হূডু। হূডু জানতো যে, ওই বিশেষ লাল মুক্তার কথা আমার ঠাকুর্দা, আমার বাবা আর আমি জানি । কিন্তু আমি হূডুর জন্য ওই লাল মুক্তা আনিনি। কারণ আমি জানতাম যে, ওই মুক্তা হাতে পেলে জাদুকর হূডু ওটার সাহায্যে অনেক অন্যায় কাজ করবে। ----- তারপর কি হলো? ----হূডু জাদুবলে আমাকে বন্দী করল নদীর নিচে। সেই থেকে আমি ডাঙ্গায় উঠতে পারিনি। আমার অবস্থা দেখে আমার মা-বাবা খুব দুঃখ পেল। কিন্তু তাদের কিছু করার ছিল না। আমার বাবা আমার ঠাকুর্দা কে ভোরাই হ্রদ থেকে ডেকে নিয়ে এল অঞ্জনা নদীতে।ঠাকুর্দা সব শুনে 'পানি পুঁথি' ঘেঁটে বলল,"ঘোড়ার পিঠে চেপে জনৈক মনুষ্য কন্যা আসবে এখানে । সে খুব ভালো এবং সৎ । সে এসে অঞ্জনা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কোন কারণে বিস্মিত হয়ে হাত তালি দিলে নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠবে। আর সেদিনই মুক্তি পাবে তুমি। ওই বিশেষ গুণসম্পন্ন লাল রঙের মুক্তা তুমি ওই কন্যার হাতে তুলে দেবে।" কথা শেষ করে সেই বিশাল কচ্ছপ খোলের ভেতর থেকে লম্বা গলা বের করে মাথাটা ঈষৎ ঝঁকিয়ে বলল, "হে রাজকুমারী রত্নমালা, তোমার দয়াতে মুক্তি পেলাম আমি। একটু সময় অপেক্ষা করো, আমি ওই লাল মুক্তা এনে দিচ্ছি তোমাকে।ওটা অনেক কাজে লাগবে তোমার।

বিস্মিত সুমনার চোখের সামনে সেই বিশাল কচ্ছপ টা একটু দ্রুত পায়ে নদীর কাছে পৌঁছে চোখের আড়ালে চলে গেল।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register