Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩৭)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩৭)

সুমনা ও জাদু পালক

------- হে ত্রিফণা নাগিনী, তুমি শর্ত শোনার আগেই তা পালন করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ কিভাবে? যদি শর্ত তোমার মনের মত না হয় তো? ভয়ঙ্কর নাগিনী যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কোনমতে জবাব দিল, শর্ত শোনার কোন প্রয়োজন নেই। আমি এই অবস্থায় আর থাকতে পারছি না। কাজেই যে কোন শর্তে আমি মুক্তি পেতে রাজি। -------- মুক্তি পাওয়ার পর তুমি যে পলায়ন করবে না অথবা সমস্ত শর্ত মেনে চলবে তার নিশ্চয়তা কি? ------ আমি নাগেশ্বর মহাদেবের নামে এবং নাগরাজ বাসুকির নামে শপথ করে বলছি যে, মুক্ত হওয়ার পরে সমস্ত শর্ত আমি বিনা প্রশ্নে মেনে চলবো। এখন দয়া করে আমাকে মুক্ত করার ব্যবস্থা কর। অদৃশ্য কণ্ঠ সুমনার কানে কানে বলল, তুমি হাতজোড় করে ওই বিল্বপত্র কে তোমার হাতে ফিরে আসতে মনে মনে অনুরোধ করো। সুমনা তাই করল। আর কী আশ্চর্য! ওই ত্রিশূল আকৃতির বিল্বপত্র মুহূর্তে পূর্বের রূপ ধরে ফিরে এলো সুমনার হাতে। নাগিনী ফণা তুলে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পরে বলল, হে অদৃশ্য কণ্ঠ, এবার তোমার শর্তের কথা বলো। অদৃশ্য কন্ঠ বলল, তার আগে তুমি আমাদের জানাও, সবুজ পাখির দ্বীপের রাজ পরিবারের সঙ্গে তোমার কিসের শত্রুতা? কেন তুমি বারে বারে ধ্বংস করো পক্ষীরানীর অণ্ড? ------- আমি নিতান্তই নিরুপায় হয়েই এই কাজ করি। -----মানে? ------যাদুকর হূডু আমাকে এই কাজ করতে বাধ্য করেছে। ---- কিরকম? ------ একবার জাদুকর তার পোষা উটপাখির পিঠে চেপে এই সবুজ পাখির দ্বীপ রাজ্যের উপর দিয়ে নিজের রাজ্যে যাচ্ছিল। জাদুকর হূডু সবুজ রং সহ্য করতে পারে না। ----কেন? ---সবুজ রং হল পবিত্রতার প্রতীক। অশুভ শক্তির প্রতীক জাদুকর হূডু তাই সবুজ রং সহ্য করতে পারে না। এই সবুজ পাখির দ্বীপের ছোট ছোট সবুজ পাখিরা সে কথা জানে না। তারা উটপাখির পিঠে হূডুকে দেখতে পেয়ে ঝাঁক বেঁধে ঘিরে ধরল তাকে।আর ওই সবুজ পাখিদের দেহ থেকে বিচ্ছুরিত সবুজ আলোয় প্রায় ঝলসে গেল হূডুর চোখ।সে কোনরকমে তার জাদুদণ্ডের সাহায্যে কৃত্রিম কুয়াশা তৈরি করে পালিয়ে গিয়েছিল এই দ্বীপ রাজ্য ছেড়ে। নিজের আস্তানায় ফিরে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলো যে, সে একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছে। প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল সে। কিন্তু যেহেতু সে সবুজ রং সহ্য করতে পারত না তাই তার পক্ষে সম্ভব ছিল না সবুজ পাখির দ্বীপে এসে কিছু অনিষ্ট করার। সে তখন সাহায্য নিল তার বান্ধবী স্থেনার।স্থেনা এক ভয়ংকর ডাইনি। দেখতে অসাধারণ সুন্দরী কিন্তু তার মাথায় চুলের জায়গায় কিলবিল করে বিষধর সাপ।স্থেনা যাদুকর হূডুকে আশ্বস্ত করল যে ,সে হূডুর হেনস্থার প্রতিশোধ নেবে। সে একদিন ছদ্মরূপে হাজির হলো সবুজ পাখির দ্বীপ রাজ্যে। এই পাখির আকৃতির পাহাড়টির পিছনে আছে এক সুগভীর গিরিখাত। সেই গিরিখাত এর মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এক জলধারা। যার দুপাশে আছে ঘন জঙ্গল। ওই জঙ্গলের ভিতরে অন্ধকারে নাগ রাজ্য। সেই রাজ্যের রানী আমি।স্থেনা আমার রাজ্যে গিয়ে আমাকে প্রস্তাব দেয়, আমার দলবল নিয়ে সবুজ পাখির দ্বীপ রাজ্যের সমস্ত সবুজ পাখির ডিম ধ্বংস করতে। আমি সেই কাজ করতে অস্বীকার করি। তখন সে নির্বিচারে আমার নাগরাজের প্রজাদের হত্যা করতে শুরু করে।স্থেনার সারা শরীর এতটাই বিষাক্ত যে ওর গায়ের রং ঘন নীল।ফলে নাগেদের বিষে তার ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা আমাদের ছিলনা। শেষে স্থেনা আমার দশটি বাচ্চাকে ধরে তার মাথায় কিলবিল করা সাপেদের ফাঁকে লুকিয়ে দেয়। আমার কোনো ক্ষমতাই ছিল না আমার বাচ্চা গুলিকে উদ্ধার করার। তাই শেষ পর্যন্ত স্থেনার সঙ্গে একটা চুক্তি করি। সবুজ পাখির দ্বীপের সব পাখিদের নয়, শুধু রানী পাখির ডিম নষ্ট করবো আমি। আর সেটা দশম দিনে। কারণ ওই দিন ডিমের ভিতর বাচ্চা সবুজ পাখি সম্পূর্ণ দেহ ধারন করবে। এবার হে অদৃশ্য কণ্ঠ, আমাকে বলুন যে আমার উপায় কি? অদৃশ্য কন্ঠ বলল, আমরা ওই হূডূর রাজ্যে যাচ্ছি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন যে, রাজকুমারী রত্নমালা জাদুকর হূডুকে পরাস্ত করবেই।আর এই ঘটনা জানার পরে ডাইনী স্থেনাকেও শাস্তি দেবে রাজকুমারী রত্নমালা। ত্রিফণা নাগিনী বলল, আমি আমার ইচ্ছের বাইরে এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। এবার হে অদৃশ্য কণ্ঠ আমাকে বলো যে কি কি শর্ত পালন করতে হবে আমাকে? ------ প্রথম শর্ত হলো ,যে সমস্ত সবুজ পাখিরা তোমার বিষে অচেতন হয়েছে, তাদের জ্ঞান ফেরাতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো, আজকের ঘটনা কাউকে বলা যাবে না, এমনকি তোমার নাগরাজ্যে ও নয়। কারণ,হূডুর রাজ্যে আমরা পৌঁছানোর আগে তার কানে যেন এই ঘটনা না পৌঁছায়।তাহলে ও সতর্ক হয়ে যাবে। তৃতীয় শর্ত হলো, এই সবুজ পাখির দ্বীপ রাজ্যে তুমি আর কোনদিন আসবেনা। রাজকুমারী রত্নমালা মহাদেবের প্রসাদী বিল্বপত্র রেখে যাবে এই গুহায়। তুমি কোনদিন তোমার শর্ত ভেঙে এখানে এলে ওই বিল্বপত্র শাস্তি দেবে তোমাকে। ------না না, আমি কোনোদিন আসবো না এখানে। আমি তোমার সব শর্তে রাজি। তবে আমার বাচ্চাদের রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে তোমাদের। ----- বেশ, তাই হবে। ত্রিফণা নাগিনী বাইরে এসে তার ছুঁড়ে দেওয়া বিষ ফিরিয়ে নিল। সমস্ত পাখিরা ফিরে পেল জ্ঞান। তারা গাছের ডালে বসে আবার ডাকাডাকি শুরু করলো। সেনাপতি ঈগল ফিরে এলো নিচে । ত্রিফণা নাগিনী ফিরে গেল তার আস্তানায়। সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা সুমনাকে বলল, রাজকুমারী রত্নমালা ,আমি তোমাকে একটা অদ্ভুত সবুজ পালক দেবো। ওই পালক তুমি যেকোনো লড়াইয়ে বল্লমের মত ছুঁড়ে ব্যবহার করতে পারবে।ওই পালক থেকে বিচ্ছুরিত আলো তোমাকে অনেক সমস্যা থেকেও রক্ষা করবে। সবুজ পাখির দ্বীপের রানী বলল, রাজকুমারী রত্নমালা, আমিতো এখন তোমাকে কোন উপহার দিতে পারছিনা। হূডুর রাজ্য থেকে ফেরার পথে আমাদের এখানে আবার আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তখন আমি তোমাকে একটা সুন্দর উপহার দেব। সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা গুহার মাঝে দাঁড়ানো সবুজ গাছটার একটা কোটর থেকে অদ্ভুত দেখতে একটা সবুজ রঙের ছোট্ট পালক এনে সুমনার হাতে দিল। সুমনা হাত বাড়িয়ে ওটা নিতেই ওটা উড়তে উড়তে গিয়ে সুমনার চুলের খোঁপায় আটকে গেল।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register