Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩১)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩১)

সুমনা ও জাদু পালক

বারো

আবার উড়ছে দুধরাজ। উড়ছে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাতের আঁধার নামলে কখনো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে কোন নদীর পাড়ে, কখনো বা কোন জঙ্গলের ধারে, কখনো বা চাষের খেতের পাশে। দুধরাজ খায়না কিছু, শুধু পিপাসা পেলে নদীর জল পান করে। আর সুমনা খিদে পেলে বা তৃষ্ণার্ত হলে বাবা মহাদেবের পায়ের তলা থেকে নিয়ে আসা হরিতকীর মালা থেকে একটি একটি করে হরিতকী খুলে মুখে দেয়। মুহূর্তে ক্ষিদে তৃষ্ণা ভোজবাজির মত উপে যায়। শরীরে শক্তি আর মনের জোর ফিরে পায় সুমনা। এমনি ভাবে সূর্য ওঠে, সূর্য অস্ত যায়, আবার এক সময় পাখির কলকাকলির মধ্য দিয়ে ভোরের সূর্য উঠে রাঙ্গিয়ে দেয় চারদিক রক্তিম আভায়। এমন ভাবে কেটে যায় সাত সাতটা দিন।একদিন সূর্য উঠার কিছু পরে যখন উজ্জ্বল সোনালী রোদে ভরে গেছে চারিদিক, হঠাৎ সুমনা দেখতে পায়, দূর থেকে সামনের আকাশ ঢেকে দিয়ে বিশাল লম্বা মালার মতো সবুজ রঙের কিছু একটা এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। ব্যাপারটা কি ভালো করে বোঝার আগেই অদৃশ্য কন্ঠ বলে উঠল ,সাবধান দুধরাজ আমরা সবুজ পাখির দ্বীপের কাছাকাছি এসে গেছি। ওরা ঝাঁক বেঁধে তোমাকে আক্রমণ করতে পারে সামলাতে হবে কিন্তু। সুমনা বলল, সবুজ পাখির দ্বীপ, সেটা আবার কি? ------ এর আগে দুধ নদী পার হওয়ার পর একটা মস্ত বড় সাগর পেরিয়েছিলে, মনে আছে তোমার? ----- খুব মনে আছে। ওই সাগর টা পার হওয়ার সময় আমি তো চোখ বন্ধ করে দুধরাজের গলা জড়িয়ে ধরেছিলাম শক্ত করে। ----- হ্যাঁ, ওটা ছিল ক্ষীর সাগর। ঠিক ঐরকম আমাদের সামনে কিছুটা দূরে আছে লবণ সাগর। ওই সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে আছে বিরাট এক দ্বীপ। সেই দ্বীপের নাম সবুজ দ্বীপ। ছোট-বড় অসংখ্য সবুজ গাছে ছেয়ে আছে সেই দ্বীপ। আর ওই দ্বীপে বাস করে ছোট বড় মাঝারি অসংখ্য পাখি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সব পাখিগুলোর গায়ের রং ঘন সবুজ। ওই দ্বীপে পাখি ছাড়া আর অন্য কোন জীবজন্তু বাস করতে পারে না। পারে না মানে, ওই পাখিরা আর কাউকে থাকতে দেয় না ওখানে। ওই দ্বীপের কাছাকাছি কেউ গেলে হাজার হাজার পাখি ঝাঁক বেঁধে ধারালো ঠোঁট আর নখের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে তাকে। আমার মনে হচ্ছে, আমরা ওই সবুজ দ্বীপের কাছাকাছি চলে এসেছি। অদৃশ্য কন্ঠের কথা শেষ হতে না হতেই সুমনার কানে এসে পৌঁছায় এক পাল পাখির কলকাকলি। সুমনা দেখতে পায়, ওই বিশাল লম্বা মালার আকারের পাখির ঝাঁকটা তাদের আরো কাছাকাছি এগিয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে যেন খুব উত্তেজিত ওরা। সুমনা ভয় পেয়ে বলে, ওরা কি ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে দেবে আমাদের ? অদৃশ্য কন্ঠ বলল, এরা, এই পাখির ঝাঁক সবুজ রঙের যে কোনো জিনিস খুব ভালোবাসে ।সবুজ রঙের কিছু দেখলে তাকে সাধারণত আক্রমণ করে না ওরা। সুমনার মাথায় ঢুকে গেল কথাটা। সে কিছুক্ষণ মনে মনে 'সবুজ' 'সবুজ' কথাটা আওড়াতে-আওড়াতে হঠাৎ বলল, বন্ধু অদৃশ্য কণ্ঠ, আমার একটা কথা মাথায় এসেছে। ----কী? ----- আমরা তো সবুজ পরীর পালকের সাহায্য নিতে পারি । সে তো আমাদের রক্ষা করতে পারে ওই সবুজ পাখির ঝাঁক এর হাত থেকে। ------ কথাটা তো তুমি মন্দ বলনি সুমনা;এক্ষুনি স্মরণ করো সবুজ পরীর পালক কে। সুমনা সবুজ পরীর পালক কে স্মরণ করতেই হাজির হলো সে। সে আসতেই হঠাৎ চারিদিক ভরে গেল সবুজ আলোতে। সেই সবুজ আলোর ছটা গিয়ে পড়ল উড়ন্ত পাখির ঝাঁক এর চোখে। মুহূর্তের জন্য হকচকিয়ে গেল তারা। এত সবুজ আলো কোত্থেকে এলো? সবুজ পরীর পালক বলল, বলো সুমনা ,কেন স্মরণ করেছো আমাকে? সুমনা পুরো সমস্যাটা খুলে বলল সবুজ পরীর পালক কে । সবুজ পরীর পালক বলল, কোন চিন্তা নেই তোমার, এক্ষুনি ওদের আক্রমণের হাত থেকে তোমাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করছি আমি। কথা শেষ করেই সবুজ পরীর পালক এসে আলিঙ্গন করলো সুমনাকে। আর কী আশ্চর্য! প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছোট্ট ছোট্ট সবুজ পাখির পালকে ঢেকে গেল সুমনার শরীর। দূর থেকে দেখে মনে হতে লাগলো, সুমনা ও যেন একটা সবুজ রঙের পাখি। পাখির ঝাঁক মুহূর্তের জন্য যেন স্থির হয়ে গেল। কিচিরমিচির শব্দ করে বেশ উত্তেজিত হয়ে নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করছে ওরা। কিছুক্ষণ পরে ওদের মধ্য থেকে দুটো বড় পাখি এগিয়ে আসতে থাকে ওদের দিকে।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register