Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২৮)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২৮)

সুমনা ও জাদু পালক

দৈত্য সেনাপতির পিছু পিছু সুমনাকে পিঠে নিয়ে দুধরাজ দুলকি চালে চলছিল । কিছুক্ষণ চলার পর দৈত্য সেনাপতি একটা মস্ত পাহাড়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। ন্যাড়া পাহাড়। দৈত্য সেনাপতি ইশারায় থামতে বলল দুধরাজ কে । দুধরাজ দাঁড়িয়ে গেল। এরপর দৈত্য সেনাপতি সেখানে দাঁড়িয়ে খুব জোরে একটা চিৎকার করলো। কি ভীষণ সেই চিৎকার। পাহাড়ের গায়ে আছাড় খেয়ে সেই চিৎকারের শব্দ গমগমে হয়ে ফিরে এলো প্রতিধ্বনি হয়ে । কিছুক্ষণ পরে পাহাড়টার যে পাশে ওরা দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তার বিপরীত দিক থেকেও অনুরূপ একটা আওয়াজ ভেসে এলো। সুমনার মনে হল , ওই আওয়াজ এর মাধ্যমে যেন কোনো বার্তার আদান-প্রদান হল।

এরপর দৈত্য সেনাপতি ইশারায় আবার দুধরাজকে তার সঙ্গে যেতে বলল। দুধরাজ অনুসরণ করলো তাকে ।পুরো পাহাড়টাকে একবার পাক দিয়ে এবারে যেখানে এসে দৈত্য সেনাপতি দাঁড়ালো, সেখানে পাশাপাশি অনেকগুলো গুহার মুখ দেখা যাচ্ছিল। রক শেল্টার এর মতো গুহাগুলোর সামনের দিকে বড় বড় পাথরের চাতাল বেশ কিছুটা এগিয়ে এসেছে ছাতের মত। ঝড়-বৃষ্টি বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানে যেন একসঙ্গে অনেকে দাঁড়াতে পারে সে রকম ব্যবস্থা করা আছে ।সেই চাতাল গুলোকে ধরে রেখেছে মস্ত বড় বড় পাথরের চাঁই, ঠিক যেন এক একটা বড় প্রাকৃতিক থাম। একটা বড় গুহার সামনে এসে দাঁড়ালো দৈত্য সেনাপতি ।গুহাটার ঢোকার মুখটা অপ্রশস্ত। সেই অপ্রশস্ত পথ দিয়ে গুড়ি হয়ে গুহার ভিতরে অনায়াসে ঢুকে গেল দৈত্য সেনাপতি। দুধরাজ থমকে দাঁড়ালো। সুমনা ইতস্তত করছিল ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না ভেবে। অদৃশ্য কন্ঠ অভয় দিয়ে বলল, ভয় করো না সুমনা,আমি তো আছি তোমার সঙ্গে। দুধরাজ, এগিয়ে চলো সাবধানে, রাজকুমারী রত্নমালার যেন কোনো আঘাত না লাগে। আবার বিস্মিত হলো সুমনা। কে রাজকুমারী রত্নমালা ? কোথায় সে? কেন তার কথা বারবার বলছে অদৃশ্য কণ্ঠ? এই নিয়ে অদৃশ্য কণ্ঠকে কিছু বলার আগেই সুমনা অবাক হয়ে দেখতে পেল যে, বিশাল বড় সাদা ঘোড়া দুধরাজ নিজেকে অনায়াসে ছোট করতে করতে একটা ছোট্ট খেলনা ঘোড়ার মত হয়ে গেল। এতটাই ছোট হল সে যাতে তার পিঠে বসা অবস্থায় সুমনা অনায়াসে গুহার ভিতরে ঢুকতে পারে। তবু সুমনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে মাথা নীচু করলো। একটু পরেই অদৃশ্য কন্ঠের নির্দেশে চোখ খুলে দেখল যে সে একটা বিশাল গুহার মধ্যে চলে এসেছে। ততক্ষনে দুধরাজ আবার ফিরে পেয়েছে তার আগের আকৃতি। গুহাটি বিশাল লম্বা ।এখানে দাঁড়িয়ে তার শেষ প্রান্ত দেখা যাচ্ছে না। গুহাটার উচ্চতাও বিশাল । সুমনা মনে মনে চিন্তা করে যে, গুহার ভিতরে তো অন্ধকার হওয়ার কথা। কিন্তু গুহার ভিতরটা যথেষ্ট আলোকিত। আলোর উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তার চোখে পড়ল যে, গুহার ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গোলাকার চকচকে সাদা পাথর বসানো আছে। আর সেই পাথরের বুক থেকেই ছিটকে বেরিয়ে আসছে আলো। গুহার শেষ মাথায় দুটো মস্ত বড় বড় পাথরের উপরে বসে আছে দুজন। একজন পুরুষ ও একজন নারী। অদৃশ্য কণ্ঠ সুমনার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল ,ওই যে দেখছো দূরে পাথরে বসে আছে দুজন,ওরাই দৈত্যরাজ ডিম্যান আর তার রানী দিতি। দৈত্যরাজ ডিম্যান প্রায় দশ ফুটের কাছাকাছি লম্বা। গায়ের রং উজ্জ্বল হলুদ, কাঁচা হলুদের মত। দৈত্য হলেও ডিম্যানের মুখটা দেখতে কিন্তু ভয়ঙ্কর নয়, বরঞ্চ কেমন যেন বিষন্ন। মনে হয় অসুস্থ দৈত্য রাজপুত্রের কথা ভেবেই হয়তো মনের জোর হারিয়ে ফেলেছে। দৈত্য রানী দিতির দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল।। দৈত্যরাজ ডিম্যান একটু যেন বিরক্ত হয়ে বলল,, সেনাপতি, এ কাদের ধরে নিয়ে এসেছ তুমি, আর এভাবে কেন এনেছ, বন্দী না করে? দৈত্য সেনাপতি মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ডিম্যান এবার যেন একটু রেগে গিয়ে বলল, কি হলো, উত্তর দিচ্ছ না কেন? অদৃশ্য কন্ঠ বলল, দৈত্যরাজ, তোমার সেনাপতি রাজকুমারী রত্নমালা কে বন্দি করতে ব্যর্থ হয়েছে? ------ কে তুমি কথা বলছ? আড়ালে কেন, সামনে এসো। ----- আমি সামনে এলে ও আমাকে চিনতে পারবে না তুমি। তোমার সেনাপতির মুখ থেকে সমস্ত ঘটনা আগে জেনে নাও। ডিম্যান বলল, সেনাপতি ,এখনি পুরোটা খুলে বল আমাকে ,নইলে তোমার প্রাণদণ্ড হবে। সেনাপতি হাতজোড় করে বলল, আমি এক্ষুনি পুরোটা জানাচ্ছি আপনাকে ।আমাকে ক্ষমা করে দিন দৈত্যরাজ। দয়া করে কোন শাস্তি দেবেন না আমাকে।আমার কিচ্ছু করার ছিল না। ----- বেশ, সব ঘটনা খুলে বল আমাকে।

দৈত্য সেনাপতি এক এক করে পুরো ঘটনাটা খুলে বলল দৈত্যরাজ কে। সবটা শোনার পর দৈত্যরাজ বিস্মিত কন্ঠে বলল, কি বলছো তুমি, আমাদের হলুদ তীর বিদেশীর কোন ক্ষতি করতে পারেনি! ---- না দৈত্যরাজ। ---- তাহলে এদের ধরে এনেছো কেন? ----- আমি ওদের ধরে আনিনি হুজুর,ওরা স্বেচ্ছায় এসেছে এখানে। অদৃশ্য কন্ঠ বলল, দৈত্যরাজ ডিম্যান, আপনি যে কারণে বিদেশীদের ধরে আনছেন এখানে ,সে পথটা ঠিক নয়। ------ আপনি জানেন কি কেন আমি বিদেশিদের ধরে আনি ? আপনি জানেন কি যে....? ------ জানি দৈত্যরাজ, আপনার একমাত্র ছেলে গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু তাকে সুস্থ করার জন্য রাজগুরু যে বিধান দিয়েছেন, তা একেবারেই ঠিক নয়। -----মানে? -------ওভাবে আপনার ছেলে সুস্থ হবে না। অদৃশ্য কন্ঠের কথা শেষ হতে না হতেই দৈত্য রানী দিতি হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। অদৃশ্য কন্ঠ বললো, কাঁদবেন না রাণীমা, আপনার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে।

দৈত্যরাজ ডিম্যান বলল, কিন্তু কিভাবে? অদৃশ্য কন্ঠে বলল, একটু ধৈর্য ধরুন দৈত্যরাজ, সব বলছি।

(চলবে)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register