Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সামাজিক গল্পে আরিফা খাতুন

maro news
সামাজিক গল্পে আরিফা খাতুন

মানব মডেল টেলিফোন

রোহন রোজকার মতো স্কুলে গিয়েছে তার প্রশ্নের সারি নিয়ে ।রোহন নবম শ্রেণির ছাত্র , সপ্তাহে প্রায় তিন দিন তাদের প্রথম ক্লাস ভূগোলের। রোহন চন্দননগর বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলের ছাত্র ছিল, সেই স্কুলের ভূগোলের স্যার মধ্যবয়সি অরূপ ব্যানাজি একটু রাগী স্বভাবের। সেদিন প্রথম ক্লাস ভূগোলের ছিল পড়ানোর বিষয় ছিল গ্রহ নক্ষত্রের বিষয় নিয়ে । যথারীতি পড়া বুঝিয়ে যাচ্ছেন হঠাৎ রোহন উঠে দাঁড়ায় স্যার একটা প্রশ্ন ছিল। স্যার -" ঠিক আছে বল । রোহন - "পৃথিবী তো একটা গ্রহ যেখানে আমরা মানুষ থাকি"। স্যার - " হ্যাঁ তা কি হয়েছে ? রোহন - "তা হলে অন্য গ্রহে মানুষ থাকে না কেন"? স্যার - " মানুষের বসবাসের জন্য ও বেঁচে থাকার জন্য যে পরিবেশ ও আবহাওয়ায় দরকার তা নেই তাই "। রোহন - " তাহলে স্যার ওখানে এমন কিছু আছে যা পৃথিবীতে নেই"? স্যার - " হ্যাঁ ঠিক । রোহন - "স্যার ঋত্বিক রোশনের কোহি মিল গ্যায়া সিনেমাটা দেখেছিলাম অন্য গ্রহ থেকে একটা যাদু এসেছিল অন্য রকম চেহারা আপনার কি মনে হয় স্যার অন্য কোন গ্রহে এমন কিছু থাকতে পরে?" রোহনের কথা শুনে পুরো ক্লাস হো হো করে হেসে উঠলো । স্যার - প্রচণ্ড রেগে গিয়েও নিজে কে সামলে নিয়ে " হ্যাঁ সব কিছু থাকতে পারে সেগুলো যখন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে জানাবে তখন তোকে বলবো "। রোহন -" আচ্ছা স্যার , মানুষ তো মানুষের মতো চিন্তা করে এ সব আবিস্কার কবে যে করবে তাই ভাবছি"।স্যার - " তোর এখন এ সব নিয়ে ভাবতে হবে না বই বের কর "। রোহন - " না মানে স্যার আজ ভূগোল বইটা আনতে ভুলে গিয়েছিলাম"। স্যার -এটা তোর রোজকার কথা সারা ক্লাস তুই ভুল ভাল প্রশ্ন করিস পড়ার কথা বললে অজুহাত ব্যাগটা নিয়ে উঠে আয় দেখি।রোহন আস্তে আস্তে ব্যাগ নিয়ে উঠে আসে । স্যার ব্যাগটা খুলে দেখে ওমা! সেখানে শুধু কিছু তার আর দুটো পুরনো মোবাইল ফোন ।স্যার- "তোর বই খাতা কই রে ? আর এ সব কি?" রোহন - স্যার আসলে আমি বাড়ীতে এ সব নিয়ে কাজ করছিলাম তো তাই আর কি। স্যার - "মানে টা কি তুই এই সব তার ফোন নিয়ে কি কাজ করছিলিস"? রোহন -" আসলে স্যার একটা জিনিস আমাকে খুব ভাবাচ্ছে ,আমরা যে ফোন ব্যবহার করি সেখানে আমাদের ভাবনা গুলো খুঁজে পাওয়া যায়না । যদি এমন কোন ফোন থাকতো , আমরা যা ভাববো তার উত্তর পাওয়া যেতে"? স্যার - " তা রোহনবাবু আপনি কি ভেবে আবিস্কার করলেন শুনি "? স্যারের আর রোহনের কথা শুনে পুরো ক্লাস উচ্চ স্বরে হেসে উঠে , স্যার একটা বেত নিয়ে উঠে দু চার জনের ব্যাগের উপর ফেলে পুরো ক্লাস একদম চুপ হয়ে যায় । স্যার -" তা রোহন বাবু পুরো ক্লাস তো আপনি মাটি করলেন আপনার আবিস্কারের কাহানী টা একটু শুনি বলুন"। রোহন - এখন যেমন আছে না স্যার facebook, youtube এ আমরা যা সার্চ করি মোটামুটি সব পেয়ে যায়, শুধু আমরা যা চিন্তা ভাবনা করছি সে গুলোর কোন উত্তর পায় না। কিন্তুু যদি স্যার এমন ফোনের আবিস্কার হতো যেটা আমাদের মস্তিষ্কের মেমোরিতে যে চিন্তা করবে ফোনের মেমোরি সেটা সার্চ করে আমাদের সামনে এনে দেবে, যেমন ধরুন আমি মঙ্গল গ্রহ নিয়ে চিন্তা করছি , আর সেটা আমার ফোন বুজে গেলো সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান করে আমাদের সামনে নিয়ে আসলো তার ছবি গুলো। ভালো হবে না স্যার? স্যার প্রচণ্ড রাগে গিয়ে " আমার এখন ইচ্ছা করছে তোর মেরে মাথা ফাটিয়ে দিই এটা যদি আমার বেত বুঝে যায় তোর অবস্থা কি হবে ভাব, আর ক্লাস থেকে এখনি বের হয়ে যা কাল তোর বাবা কে নিয়ে স্কুলে আসবি । রোহনের বের করে দিয়ে খুব অল্প সময় বাকি থাকে একটু পড়িয়ে ক্লাস শেষ করে হেড স্যারের সাথে কথা বলে । আজকে বলে নয় প্রায় ক্লাসে রোহন এমন করে এতে অন্য দের পড়াতে অসুবিধা হয় । হেড স্যার সব শুনে রোহনের বাবাকে কল করে পরের দিন স্কুলে ডাকে । পরের দিন রোহনের বাবা তার নিয়ে স্কুলে আসে , সব শুনে রোহনকে মারতে যায়, স্যাররা থামিয়ে দেয় । স্যারদের কাছে রোহনের বাবা অনুরোধ করে তার ছেলেকে যেন তারা একটু দেখে মেরে বকে যদি পড়াশোনা করানো যায়, রোহন বাড়িতে ও এই সব কাজ করে ওর ঘরে বইয়ের থেকে বেশি ভাঙ্গা জিনিস থাকে কি করবে বুঝতে পারছেনা ওর বাবা মা । সে দিন ওর বাবা বাড়িতে এসে রোহনকে খুব বকেছিল, মা তো দু চার ঘা কষিয়ে দিয়ে ছিল। রোহন প্রায় বকা খেতো আজ তার মার কাছে মার খেয়ে খুব মন খারাপ এত দিন মা যে তাকে সাহস দিতো কেউ বকলে,আজ কি হলো ? রোহন ঠিক করলো এসব আর করবে না , রোহন মন খারাপ করে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রোহন স্বপ্ন দেখে ২০৪০ সাল সংবাদ শিরোনামে চারিদিক শুধু একটাই নাম রোহন ব্যানার্জী, "মানব মডেল টেলিফোন " আবিস্কারের জন্য তাঁকে বিশেষ সম্মান প্রদান করা হল ।।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register