Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || কালির আঁচড় পাতা ভরে, কালী মেয়ে এলো ঘরে || লিখেছেন মিঠুন মুখার্জী

maro news
T3 || কালির আঁচড় পাতা ভরে, কালী মেয়ে এলো ঘরে || লিখেছেন মিঠুন মুখার্জী

কন্যাশোক

সন্তান একজন নারীর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ। সন্তানই নারীর জীবনে পূর্ণতা আনে। একটি সন্তানের দায় কত মা যে প্রান হারায় তার হিসাব পাওয়া কঠিন। আবার অকালে সন্তানকে হারিয়ে মায়ের অবস্থা যে কেমন হয়, তা আজ সকলের সামনে তুলে ধরব। আজ এমন একটি দুঃখজনক কাহিনী শোনাব যা শুনলে পাথর হৃদয় মানুষেরও দুচোখে জল দেখা যাবে। মাত্র ঊনিশ বছরের মেয়েটি যমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার পনেরো দিনের মাথায় মাকে চিরদিনের জন্য কাঁদিয়ে চলে যায়। মেয়েটির নাম কৃষ্ণা। ডাকনাম মাম। বাবা-মায়ের অমতে হৃদয় দিয়েছিল বছর চল্লিশের এক রাজমিস্ত্রিকে। ছোটবেলা থেকে মামা বাড়িতে মানুষ। দিদার প্রাণভ্রমরা সে। মামের মা শ্রীমতি। অভাবের সংসার। মামের ভাইকে নিয়ে থাকে। বাবা দিনমজুরের কাজ করে। তাই ওর ছোটমামা ওকে মামা বাড়িতেই রেখে দিয়েছিল। ওখানেই ও পড়াশোনা করত। হাসিখুশি সহজ-সরল মনের ভালো মানুষ সে। জীবনের জটিলতা সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই নেই ওর‌। যখন ওর বয়স পনেরো, তখন একদিন মামা বাড়ির পাশে একটা বাড়ি করতে এসেছিল কয়েকজন রাজমিস্ত্রি। তাদের মধ্যেই সুভাষ নামের একটি লোকের প্রেমে পড়ে সে। চোখে চোখ পড়লেই কৃষ্ণা হেসে দিত। ছেলেটি ওর হাসি দেখে বুঝেছিল-- এই বয়সি মেয়েটির এভাবে তাকানো মোটে স্বাভাবিক নয়। মেয়েটির যে তাকে ভালো লেগেছে সেটি সুভাষ বুঝতে পারে। কিন্তু মাম ছিল সুভাষের হাঁটুর বয়সী। তাই সে ব্যাপারটা তেমন গুরুত্ব দেয় নি। খুবই অল্পদিনের মধ্যেই মাম সুভাষকে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছিল। সুভাষ একদিন ওকে ডেকে বলে --- " দেখ মাম, তুই আমার থেকে অনেক ছোটো। আবেগে ভুল পথে পা বাড়াস না। আমি খুবই গরিব। তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। এভাবে নষ্ট করিস না। আরও পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়া, দেখবি আমার থেকেও অনেক ভালো ছেলে পাবি তুই।" মাম সুভাষের কথাগুলো মেনে নেয় নি।সুভাষকে আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে পনেরো বছর বয়সে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। মধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই বিয়ে পাশ করে ফেলে সে। সুভাষও নিরুপায় হয়ে তাকে বিয়ে করে। সংসার সম্পর্কে অনভিজ্ঞ মাম বিয়ের পর একবছর শাশুড়িকে কাছে পেয়েছিল। তার কাছ থেকে সংসারের সমস্ত কাজ খুব তাড়াতাড়ি শিখে নিয়েছিল সে। বড় বউ হওয়ার সুবাদে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ির পাশাপাশি দুই দেওয়রের দেখাশোনা করতো সে । একবছর পর একদিন হঠাৎ তার শাশুড়ি সংসারের মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন। মাম সন্তানসম্ভবা হয়ে একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করে। মেয়ে হওয়ার পর একবছর সংসার ও মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছিল সে। এক একটি দিন যেন এক একটা বছর মনে হয়েছিল তার। তার প্রথম মনে হয় এত তাড়াতাড়ি বিয়ের দরকার ছিল না। তার এখন আফসোস হলেও কিছুই করার নেই। দেখতে দেখতে তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায়। জীবন সম্পর্কে কিছুটা অভিজ্ঞতা হয় তার। দ্বিতীয় বারের জন্য সে সন্তানসম্ভবা হয়। ডাক্তার তাকে দেখে জানান, তার গর্ভে যমজ সন্তান রয়েছে। অনাদরে- অভাবে যমজ সন্তান বেড়ে উঠতে থাকে মামের ভিতরে। নয় মাসে সে যমজ মেয়ে জন্ম দেয়। মা শ্রীমতি তার কাছে নিয়ে যায় তাদের তিনজনকে। দুই সপ্তাহ পর তিনটি বাচ্চাকে মাতৃহারা করে নিয়তির কাছে পরাজিত হয় সে। ডাক্তার মৃত্যুর কারণ জানান রক্তশূন্যতা। শ্রীমতি হাসপাতালে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। বারবার জ্ঞান হারায়। সুভাষ পাথরের মতো হয়ে যায়। মামকে যখন চিতার আগুন ছাই করে দিচ্ছিল তখন শ্রীমতি ও সুভাষ শোকে আগুনে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিল। তাদের মনের কষ্ট এভাবেই জুড়াতে চাইছিল তারা। কিন্তু অন্যদের হস্তক্ষেপে তারা তা পারে না। কারণ সময় সব থেকে শক্তিশালী।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register