Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || লক্ষ্মী পুজো || সংখ্যায় সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

maro news
T3 || লক্ষ্মী পুজো || সংখ্যায় সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী

লক্ষ্মী

মেয়ের পায়ে ছটা আঙুল,দুপায়ে ছটা ছটা বারোটা । ধাই পূর্ণা কথাটা বলা মাত্র ঢুকরে থেকে বুকফাটা সবরকম সরুমোটা গলায় কান্নার রোল পড়ে গেলো ভীড়ের মধ্যে।আধো আচ্ছন্নতার মধ্যেই পার্বতী শুনলো সবই কিন্তু ঠাহর করতে পারছিলোনা ব্যাপারটা ঠিক কি।চক্রবর্তী বাবু সকাল থেকে লাঠিটি হাতে নিয়ে উঠোনে বসে, ধমকে উঠলেন...চোওওপ, মরাকান্না কিসের, ঘরে আমার লক্ষ্মী এসেছে! সেই থেকে লক্ষ্মী,দাদুর দেওয়া নামটাই বহাল।অবশ্য বাঁদরী বললেও বেমানান হতো না!পাড়ার লোক তো সে মেয়ের ধিঙ্গিপনায় অতিষ্ঠ।সমবয়সী ছেলেগুলোর সর্দার সে, কার বাগানের পেয়ারা, কলা কখন পাকলো সেসব তার নখদর্পণে।আর মস্তানি করার সুযোগ পেলে তো আর কথাই নেই।ধামু মদ খেয়ে বউকে পেটাচ্ছে ,খবর পেয়েই দলবল শুদ্ধু লক্ষ্মী সেখানে,নেহাতই বউ সতী হাত জড়িয়ে না ধরলে হয়তো কঞ্চি পেটা করেই ধামুর অবস্থা খারাপ করে দিতো।তবে সেদিন থেকেই ধামুও নাকখত! বাবা সুখময় ধুলিয়ান থেকে ঘরে এসে মেয়ের গল্প শুনে মিটিমিটি হাসে।দাদুর যেমন নাতনি অন্ত প্রাণ, সুখময় অতোটা দেখায় না।তবে রাতে পার্বতীর মুখে আঁচলচাপা বিলাপ শুনলে চাপা গলায় ধমকায়...আহ্!তবে এমনটি যে হতে পারে কেউ ভাবেনি,নিত্য গালমন্দ করা ঠাকুমা ফেলারাণী ও না! গঙ্গার ধারেই বসত, পাড়ভাঙা নৈমিত্তিক ঘটনা।মানুষ অতো গা করেনা, একটু পেছিয়ে যায় শুধু।গিলতে লাগলে যে নদীও রাক্ষসী হয় তা না দেখলে বিশ্বাস হবেনা।রোজকার মতো দলবল নিয়ে নদীতে দাপাচ্ছিলো লক্ষ্মী,হঠাৎ ঝপাং করে একটা জোর আওয়াজ।দেখে মাটির ঘর আর গোয়াল শুদ্ধু জলে পড়ে ভেসে যাচ্ছে সনাতনের।সুরভী গলায় খুঁটলাগানো ,কাতর ডাকছে হাম্বাআআআ।সনাতন তো ঘরে থাকেনা এসময়,ঘরে পোয়াতি বউ আর বছর দুয়েকের ছেলে আরেকটা.. লক্ষ্মী না মাছ কে জানে,গায়ে এতোদিনে শ্যাওলা পড়ে যাওয়ার কথা।পায়ের ছ ছটা করে বারোটা আঙুলের জোরে যেন মাছের পাখনাই।ছেলে গুলোকে সাথে নিয়ে ঠিক টেনে পাড়ে তুলেছে সুরভী শুদ্ধু সব কজনকে।ততক্ষণে পাড়ে লোকারণ্য। ভারী ভয় পেতো ফেলারাণী, এমন অলক্ষী নাতনিকে নির্ঘাত শ্বশুরবাড়ির থেকে ফেরৎ পাঠাবে আর এখন ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া সোনার মেডেল রোজ আঁচল ঘষে চকচকে করার দায়িত্ব তারই।আর পাড়ার গিন্নীমহলে রোজই একবার করে শোনান, আঠারো বছর বয়স হলেই পুলিশ হওয়ার পরীক্ষা দেবে লক্ষ্মী,কমিশনার নিজে বলে গেছেন..এমন সাহসী ছেলে মেয়েই তো খুঁজি আমরা। চক্রবর্তী বাবু গর্ব করে বলেন, আমার নাতনি, হুঁ হুঁ বাবা, বলেছিলাম না বংশ উজ্জ্বল করবে!সুখময় বাড়ি ফিরলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে...লক্ষ্মী মা আমার! ঘর ভরে যায় কোজগরী আলোতে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register