Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || লক্ষ্মী পুজো || সংখ্যায় ভার্গবী

maro news
T3 || লক্ষ্মী পুজো || সংখ্যায় ভার্গবী

লক্ষীর সুখ 

একটা তেল চুকচুকে বাঁশের লাঠি হাতে , পরনে নোংরা জামা, খানিক দারিদ্র্য খানিক রোদের তেজে ঝামা হয়ে যাওয়া চেহারার একজন আসতেন সপ্তাহে একদিন লক্ষীদের পাড়ায়, কিছু ভিক্ষার আশায়। দেওয়াও হতো। একদিন হঠাৎ বাড়ির মালিক বাজার সেরে আসছেন আর ভিক্ষুক বললেন, " বাজার করে আসলে বাবু" "হ্যাঁ" "কতদিন ভালো করে খাইনা। একদিন নেমন্তন্ন করে খাওয়াবে বাবু সময় করে।" বাবু গৃহিণীর হাতে বাজারের থলে দিয়েই এক নিমেষে উত্তর দিল "পরের রবিবার আমার বাড়ি আপনার নিমন্ত্রণ। আসা চাই। গৃহস্থ যা পারবে সামন্য আয়োজন করবে। আসবেন কিন্তু।" "সত্যি আসবো বাবু" "অবশ্য আসবেন অপেক্ষা করবো আমরা" বাবুটি পরের রবিবার এলাহী আয়োজন করলেন, শুক্তো, নারকেল দেওয়া ছোলার ডাল,বড়ো মাছের মাথা, চিংড়ি, ভেটকি, মাংস, চাটনি, দই, মিষ্টি, পাঁপর। রবিবার এলো। সকালে ৯ টা নাগাদ ভিক্ষুক আসতেন। এদিন এলেন সাদা ধুতি একটা পুরোনো কিন্তু পরিস্কার ঘিয়ে পাঞ্জাবী পরে ওই বেলা বারোটা নাগাদ। গৃহিণী খেতে দিলেন যত্ন করে একেবারে নতুন বাসনে। যেমন করে দেবতাকে সাজিয়ে দেওয়া হয়। ছোট্ট লক্ষী নুন আর লেবু পাতে দিতে পেরে সঙ্ঘাতিক আলহাদিত। কেন যে খুশী বলতে পারবে না ছোট মেয়েটি। শুধু বুঝেছে আজ বুঝিবা ভারী আনন্দের দিন। ভিক্ষুক পরম তৃপ্তি করে খেলেন। গৃহিণী হাত ধুতে জল দিলেন। গামছা ধরে হাত মুছতে দিলেন। ভিক্ষুক বললেন "এ বার আজ্ঞা কর বাবু। আসি। আর মরতে কষ্ট নাই। আমার সেই রাজার মতো খাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করলে তুমি। বড়ো সুখের খাবার খেলাম আজ। আহা বড়ো শান্তি" না কোনো মঙ্গল কামনা নয় বরং পরম তৃপ্তি নিয়ে বিদায় নিলেন। বাবুটি বললেন "আসবেন আবার" হ্যাঁ না কিছু বললেন না ভিক্ষুক। স্মিত হাসলেন। বাঁশের লাঠির ভরসায় পা বাড়ালেন ফেরার পথে। লক্ষীর সেদিন মনে হয়েছিল এই বুঝিবা বলে সুখের খাওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার আর কখনো তাঁকে দেখা গেল না। আর কখনো ভিক্ষা নিতে আসেন নি। দিন যায় দিনের নিয়মে। লক্ষী এখন নিজেই ঘরণী। সকলকে খাইয়ে তবে খেতে বসে রোজ। ভাগ্নে শান্তুনুর বড়ো প্রিয় তার লক্ষী মামী। একদিন ওদের খেতে দিয়ে অপেক্ষা করছে লক্ষী ছেলে মেয়ে ভাগ্নে খেয়ে উঠলে তবে খাবে। শান্তনু বায়না করে তাদের সাথেই খেতে হবে। লক্ষী ওর আবদার মেনে নেয়। আদরটুকু সবারই বড়ো প্রিয়। লক্ষীর পাতের দিকে চোখ পড়ে শান্তনুর। শান্তনু: "একি তুমি কি খাচ্ছ? কুমড়ো তরকারি কেন? আমাদের তো দিলে পনির, চিকেন ফ্রায়েড রাইস।" মামী: "রয়ে গেছিল সোনা ফেলে দেব?বল? খাবার ফেলতে নেই " শান্তনু: "অদ্ভুত তো।" মুখে বিরক্তি। আমাকেও দাও। নয়তো এই খাবার খাও। সামান্য একটু ফ্রয়েড রাইস ছিল রান্নাঘরে সেটাই সাদা ভাতের উপর ছড়িয়ে নিল শান্তনুর মামী, বললো, "এই দ্যাখ হয়েছে শান্তি এবার ,খাচ্ছি বাবা" শান্তনু: "হ্যাঁ এবার ঠিক আছে" খুব শান্তি করে খেলো আজ লক্ষী। কোনো রাজশাহী খাবার সে এতো আরাম করে খায়নি কখনো। আহা কি স্বাদ। শান্তনু রান্না করেনি, খাবার বেড়ে দেয় নি, অনেকটা ছোট সে এসবের জন্য। কিন্তু তার একটা প্রশ্ন আজ খাবার খাওয়ার সুখ বুঝিয়ে গেল লক্ষীকে, স্বাদ বুঝিয়ে গেল খাবারের। ফাইভস্টার হোটেল দামী খাবার পাবে সব্বাই কিন্তু লক্ষী মামী মানে সেদিনের সেই ছোট লেবু নুন দিয়ে আনন্দ পাওয়া মেয়েটা আজ জানে সুখের খাবার কেমন স্বাদের হয়।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register