Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || লক্ষ্মী পুজো || সংখ্যায় উত্তম বনিক

maro news
T3 || লক্ষ্মী পুজো || সংখ্যায় উত্তম বনিক

অনাকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্মী

দিদিমণি ও দিদিমণি আমাকে কালকের দিনটা একটু ছুটি দেবে গো? মুখার্জি বাড়ির পরিচারিকা বাসন্তীর এক করুণ আর্তি মুখার্জি ম্যাডামের কাছে। কেনো রে, ছুটি নিয়ে কি করবি? বলছি কাল যে বাড়িতে লক্ষ্মীপূজা সেটা কি ভুলে গেলি? তাছাড়া বাড়িতে পোয়াতি মেয়ে আমার, যখন তখন বাচ্চা হবে ওকে নিয়ে দৌড়োতে হবে হাসপাতালে। বলছি এগুলো কে করবে? তাছাড়া ঘরের এঁটো বাসন, কাপড় কাচা দুনিয়ার কাজ বাদ দিয়ে ছুটি কাটানোর ভান করা হচ্ছে তাইনা? না.. না.. দিদিমণি সেটা নয়। আসলে কালকে আমার মেয়ে বনানীর জন্মদিন তাই ওকে একটু ভালো রান্না করে খাওয়াতে বড্ড মন চাইছে। আর ওকে নিয়ে একটু রক্ষাকালীর মন্দিরে নিয়ে যাবো, মানত করেছিলাম কিনা তাই। উউউ ন্যাকামি হচ্ছে, যেই না নোংরা বস্তির এক মেয়ে তার নাম আবার বনানী! এ যে কানা পোলার নাম পদ্মলোচন। ছেলে হলে তাও এক কথা ছিলো, একেই মেয়ে তাও কালো। আর তার জন্য এত আদিক্ষেতা। বলি কি হবে এইসব করে যা কথা না বাড়িয়ে কাজ কর গিয়ে। কোনো ছুটি হবেনা। আর ছুটি নিলে কাজে আসতে হবেনা। যা এখান থেকে মুখপুরি। বাসন্তী ভাবছে পরিচারিকাদের জীবন বুঝি এমনই হয়! দুটো ভাতের আশায় নিজের জীবনের সমস্ত সখ, ফুর্তি আনন্দ ত্যাগ করে মানুষের এঁটো বাসন মাজতেই জীবন শেষ হয়ে যায়। অথচ আমাদেরও তো একটু ইচ্ছা করে চোখে কাজল দিয়ে, ঠোঁটে একটু লিপস্টিক লাগিয়ে, একটা নতুন শাড়ি পরে আয়নায় নিজেকে একটু দেখি! আমাদের প্রকৃত রূপ কি? যে হাতে কড়া পরে গেছে বাবুদের বাড়ির বাসন মাজতে মাজতে সে হাত দিয়ে দুটো হাত ধরে একটু ভালোবাসার আলিঙ্গন পেতে! তোমরা যে রক্ত মাংস দিয়ে গড়া, আমরাও তো তাই দিয়ে গড়া। তাহলে কিসের এত বিভেদ? কে কোথায় গেলি রে.... তাড়াতাড়ি আয় মিষ্টির বুঝি প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে! তাড়াতাড়ি একটা গাড়ি নিয়ে আয়। বাসন্তী হকচকিয়ে উঠে এক দৌড়ে গাড়ির ব্যবস্থা করে ছোটে হাসপাতালে। ডাক্তার বলেন তাড়াতাড়ি এক বোতল রক্তের ব্যবস্থা করুন। বাসন্তীর কালো চেহারার লাল রক্তে মিষ্টি দিদির এক ফুটফুটে কন্যা পৃথিবীর আলো দেখলো‌। ডাক্তার সাহেব বললেন এযে স্বয়ং মা লক্ষ্মী এসেছে। মুখার্জি ম্যাডামের চোখে তখন এক অনাবিল আনন্দ। তার একমাত্র মেয়ের জীবন যে বাসন্তী না থাকলে কি হতো তা বুঝি একমাত্র স্বয়ং ইশ্বরই জানতেন। কইরে মা, বাসন্তী এদিকে একটু আয়। দু'চোখ ভরে আমায় একটু তোকে দেখতে দে। কতই না অন্যায় করেছি তোর প্রতি, মুখ বুজে সব কিছু মেনে নিয়েছিস তুই। আজ আমি তোর কাছে করজোড়ে মাপ চেয়ে নিচ্ছি। পারবি না মা এই বৃদ্ধা মাকে একটু ক্ষমা করতে? এতকাল বাসন্তী কেঁদেছে শুধু নিজের অভাবের দুঃখে কিন্তু আজ বুঝি প্রথম চোখে জল এসেছে আনন্দে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register