Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় অলোক মুখোপাধ্যায়

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় অলোক মুখোপাধ্যায়

এই শরতে কে কোথায়

“এই শরতে কে কোথায় যাচ্ছেন?” নিছক মজা করেই ক্যাপশনটা লিখে একটি ভ্রমণ গ্রুপে পোস্ট করেছিলাম। বিভিন্ন কমেন্ট সাজেশন এসব নিয়ে বেশ মজাই হচ্ছিল। হঠাৎ একজন প্রশ্ন করলো –আঙ্কেল আমার ডেট অফ্‌ জার্নি ২২ তারিখ। ট্রেনের ডিপারচার টাইম ১২-৪০ এ এম। তাহলে আমাকে কবে কখন স্টেশনে পৌঁছতে হবে? জার্নি ডেট আর ডিপারচার টাইমের সাথে এ এম/পি এম ব্যাপারটা গুলিয়ে গেলে কি যে হয় না! ছেলেটির সাথে আমাদের ব্যাপারটাও এভাবে মিলে যাবে কে জানতো! বেড়িয়ে এসে কাহিনী তো লিখেছি অনেক তাহলে বেড়ানোর আগে একটা গল্প বা কাহিনী হলে কেমন হয়! প্রোফাইলে ঝটপট লিখে ফেললাম -আমরা ষাট পয়ষট্টির চনমনে চার যুগল এই শরতে কোজাগরী পূর্ণিমায় ভাসতে চলেছি। অক্টোবরের ২৬ ডিপারচার ১২-০৫ এ এম। অতএব ২৪ তারিখ প্রতিমা নিরঞ্জন হলেই বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় ২৫ তারিখ বিকেল পর্যন্ত। তারপর ডিনার সেরে গন্তব্য হাওড়া স্টেশন। প্ল্যাটফরমে ট্রেন দিলেই উঠে বসে অপেক্ষা কত ক্ষণে ঘড়ির দুটো কাঁটা ১২টার ঘরে মিলবে। ২৫ তারিখ রাত ১২টা মানেই তো ২৬ তারিখ। ক্যালকুলেশন ভুল হলেই ট্রেন মিস! ট্রেন ছাড়লেই হালকা হাসি চোখে জল তারপর বার্থে শুয়ে পরদিন সকালে ট্রেন থেকে নামার অপেক্ষা। আচ্ছা পরের দিন সকাল মানেও তো ২৬ তারিখ! ধ্যুস সকাল কেন? সারাদিনই তো ২৬ তারিখ। এই পর্যন্ত লিখে গ্রুপের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে পোস্ট করে দিলাম। এক বন্ধু লিখলেন –ধাঁধা টা চমৎকার! ২৬ তারিখ ১২টা ০৫, এই টাইমিং টা খুবই ভয়ঙ্কর মানে ২৫ তারিখ রাত ১২টা পেরোলেই ২৬ এর ঘরে পা। এই ডেট এবং টাইমিং সঠিক ভাবে ফলো করতে না পারলে নাকের জল চোখের জল এক করে দেয়। বিশাখাপত্তনম স্টেশনে আমি নিজের চোখে দেখেছি মশাই। টাইম শিডিউল ১২ টা কুড়ি এ এম জার্নি ডেট ডিসেমবরের ৩০ তারিখ। ছোট বাচ্চা নিয়ে দুটি পরিবারের সে কি দিশেহারা অবস্থা! জার্নির তারিখ ৩০ হলেও ট্রেনের টাইমিং অনুযায়ী ২৯ রাত ১২টার পর থেকেই দিন ও তারিখ বদলে যাচ্ছে সেটা মাথায় ছিল না। তাদের ট্রেন তো আগের রাতেই চলে গিয়েছে। সেদিন খুব বড় একটা শিক্ষা হয়েছিল জানেন তো! ভদ্রলোকের কমেন্ট পড়বার মধ্যেই মুঠোফোনে ক্রমাগত পিক পিক শব্দ। বুঝলাম গ্রুপের আরও কয়েকজন বন্ধু কিছু লিখেছেন। অতএব ভার্চুয়াল গেম টা বেশ জমে গিয়েছে। এই সব গ্রুপে থাকার বড় সুবিধা হচ্ছে কেউ কাউকে চিনি না জানি না অথচ তাদের পোস্টানো বেড়ানোর ছবি, ভ্রমণ বৃত্তান্ত দেখে এবং পড়ে খুব ভালো সময় কাটে। ক্ষেত্রবিশেষে আবার স্মৃতি রোমন্থনের কাজটাও হয়ে যায়। কিছু ক্ষণ বিরতি দিয়ে প্রোফাইলে ঢুকলাম। একজন ভদ্রমহিলা লিখেছেন, মনে হচ্ছে আপনি খুব রসিক মানুষ এবং আপনার সঙ্গে যারা যাচ্ছেন বেড়ানোর দিনগুলো তারা সবাই খুব আনন্দে থাকবেন। একবার ভাবলাম লিখি যে, এই বয়সেও বেড়াতে গিয়ে কি আনন্দ যে আমরা করি! কিন্তু মস্তিস্ক সায় দিল না। আনন্দ তো কত রকমের হয় তাই না? তাছাড়া আনন্দের কোন নির্দিষ্ট গন্ডি কিংবা সংজ্ঞা আমার জানা নেই। তবে সব কিছুরই যে একটা ফুল স্টপ দরকার সেটা আমি ভীষণ ভাবে মেনে চলি। যাই হোক ভদ্রমহিলাকে একটা স্মাইলি দিয়ে ছেড়ে দিলাম। পরের পর কয়েকটা কমেন্ট এসেছে এই রকম: জনৈক বন্ধু লিখেছেন -আপনি দলবল নিয়ে জল না জঙ্গল কোথায় যাচ্ছেন? ছবি পোস্ট করবেন কিন্তু। এক সময় খুব ঘুরতাম জানেন! আমাদেরও তিন ফ্যামিলি্র গ্রুপ ছিল। ছেলে মেয়ের সংসার পাহারা দিতে গিয়ে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলাম। এখন আর সেভাবে হয়ে ওঠে না। ঘরে বসে গ্রুপের বিভিন্নজনের পোস্ট পড়ি, ছবি দেখি এই আর কি! কেউ বেড়াতে যাচ্ছে শুনলেও খুব ভালো লাগে। আরেক বন্ধুর কমেন্টটা একটু অন্যরকম। তিনি আমাদের গন্তব্যের সম্ভাব্য স্পট আন্দাজ করে লিখেছেন- স্যার, হাওড়া থেকে রাত ১২টা ০৫ এর ট্রেন ধরছেন? এটা বোধ হয় স্পেশাল ট্রেন তাই না! গন্তব্য দার্জিলিং না পুরী? রুম বুক করেছেন তো? দুটো জায়গাতেই এবার পুজোর আগে পরে কিন্তু খুব ভীড়!” প্রফেশনাল অ্যাটিচুড নিয়ে পরের জন লিখেছেন -দাদা যে কোন দরকারে আমায় ৯১২৪৩৪৫৬ ডট ডট নম্বরে কল করুন। গাড়ি, হোটেল, সাইট সীয়ীং, ক্যাম্পফায়ার, বার বি কিউ, হার্ড সফট সব ব্যবস্থা একদম গুছিয়ে করে দেব। আপনারা শুধু এনজয় করবেন ব্যাস। জল না জঙ্গল কোথায় যাচ্ছি জানতে চাওয়া ভদ্রলোকের প্রোফাইলে ক্লিক করলাম। ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে বয়সে উনি এবং আমি প্রায় সমান অথবা সামান্য এদিক ওদিক। ভ্রমণের শখ এবং আনন্দে ফুল স্টপ দিয়ে ছেলে মেয়ের সংসারে ওয়াচম্যান হয়ে আছেন। একবার ভাবলাম বলি যে, বিদ্রোহ কেন করছেন না আপনারা? একদিন একদিন করে তো শেষের দিকে এগোচ্ছেন, যে কটা দিন আছেন ভ্রমণের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে চান না একথা ছেলে মেয়েদের কেন বলছেন না? কী প্যাডে আঙ্গুল দিতে গিয়েও থেমে গেলাম! ওপেন ফোরামে ব্যাপারটা একদম ঠিক হবে না। ওনাকে একটা স্মাইলি আর হার্ট এর ইমোজি দিলাম। গন্তব্য দার্জিলিং না পুরী জানতে চাওয়া প্রৌঢ় ভদ্রলোককে দিয়ে দিলাম বুড়ো আঙ্গুল তোলা ইমোজি। ফোন নম্বর দিয়ে খেজুর করা তৃতীয়জনকে জাস্ট ইগনোর করলাম। সবাই সমান নয়, ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে। তবুও পাঁচ সাতশ টাকার জন্য উনি এবং এই ধরণের ওনারা যে কি করতে পারেন সেই অভিজ্ঞতা আমার আছে। এর মধ্যেই বার তিনেক পিক পিক করে উঠলো মুঠোফোন। আমারও দেখছি বেশ নেশা চেপে গিয়েছে। ক্লিক করে দেখি একজন লিখেছে –জেঠু তোমরা কি সত্যিই বেড়াতে যাচ্ছ না কি কায়দা করে ময়দা ভাঁজছ! আমার মনে হয় তুমি ঘুরিয়ে জেনে নিতে চাইছ এবার পুজোয় কার কি ট্যুর প্ল্যান! কি, ঠিক বলছি তো? প্রেরকের প্রোফাইলে খরগোশের ছবির নিচে লেখা “আঁকিবুকি”। বেমক্কা বাউন্সারে মাথাটা যেন একটু ঘুরে গেল! চেনা জানা নেই হুট করে জেঠু বলছে। আপনির বদলে একেবারে তুমি তে নেমে এসেছে। ভাবলাম লিখি তুমি কে হে চাঁদু? কিন্তু ওই যে ওপেন ফোরাম! সো বি কেয়ারফুল। আরেক জনের কমেন্ট পড়তে যাব ঠিক তক্ষুনি “আঁকিবুকি” কিছু একটা পাঠালো। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে টাচ করলাম। একটা স্মাইলি আর ভেংচি কাটা মুখের ইমোজি দিয়ে “আঁকিবুকি” লিখেছে –আমি না একটু ফিচেল টাইপের বুঝলেন জেঠু। মাঝেমাঝেই একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলি। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন প্লীজ। গ্রুপ অ্যাডমিন অলরেডি আমাকে এলার্ট করেছে। তাই আর কেস খেতে রাজি নই। অতএব এবার গলিতং না হয়ে উপায় নেই! যাই হোক খেলাটা ক্রমশ জমে উঠেলেও এবার রেফারী হয়ে শেষ বাঁশি বাজানোই সমীচীন। আপাতত পাওয়া সর্বশেষ বন্ধুর কমেন্টটাও আমার খেলা শেষের বাঁশির পক্ষে সহায়ক। তিনি লিখেছেন, ২৫ তারিখ রাত ১২টা ০৫ আপনারা সম্ভবত হাওড়া চক্রধরপুর ধরছেন। কারণ ঐ টাইমে ইস্টার্ন কিংবা সাউথ ইস্টার্নে অন্য কোন ট্রেন নেই। মনে হচ্ছে কোন না কোন স্পটে দেখা হয়ে যাবে। আমরা যাচ্ছি ২৬ সকালের ট্রেনে। আমরা শুরু করব দলমা দিয়ে। তার পর রঘুনাথপুর সার্কিট হয়ে শেষ হবে অযোধ্যা সার্কিটে। তো দাদাভাই আপনারা ফিরছেন কবে? আমিও ই্নস্ট্যান্ট রিপ্লাই দিলাম। কি বললেন ফিরছি কবে? এই এক মুশকিল। ট্যুর শুরু হতে না হতেই ফেরার দিন জানতে চাইলে সত্যি বলছি আর খেলব না কিন্তু। যাই হোক প্রশ্ন যখন করেছেন তখন উত্তর দেবার দায় আমার থেকেই যায়। অক্টোবরের ২৬ থেকে ২৯ চারদিন আমাদের জম্পেশ প্রোগ্রাম। ৩০তারিখ দিনভর টোটো কোম্পানী, নৌকা বিহার, দেব দেবীর মন্দির দর্শন। যদি শরীর পারমিট করে তাহলে টিলার উপরে চড়ে বসা। সব শেষে ভ্রমণের মধুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যায় আসানসোল থেকে ট্রেনে হুইশ……রাত ০৯-৩০ হাওড়া স্টেশন। তার পর পরিবার ভিত্তিক ভাড়া গাড়ি ছুটবে সুখী গৃহকোণে। কলকাতার দক্ষিণে টালিগঞ্জ ট্রামডিপো পর্যন্ত যেতে যেতে প্রায়শই কোন না কোন গাড়ি থেকে ভেসে আসবে উল্লাস –এই যে আমদের দ্যাখ…….এদিকে। পাশ থেকে মন কেমনিয়া মুখে হাত নাড়িয়ে এগিয়ে যাবে অন্য পরিবার। দলছুট হয়ে একটা গাড়ি থামবে কুঁদঘাটে। দুই পরিবার নিয়ে একটা গাড়ি বাঁশদ্রোনীতে, আরেকটা গাড়ি গড়িয়া নরেন্দ্রপুর হয়ে থামবে রাজপুর পাশ্চাত্যপাড়ায়। শেষে লিখলাম -আমরা কোথায় কোথায় যাচ্ছি গেস করতে পারলে উপহার এক নদী শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা। আর বেড়ানোর আগেই বেড়ানোর এই গল্পটা কেমন লাগলো বন্ধুরা জানালে খুশি অন্তহীন। কিছুক্ষণ আগেই দেখলাম আমার পোস্টে লাইক চারশোর কাছাকাছি আর একশ ছাব্বিশটা মজাদার কমেন্ট! বাঙালির রঙ্গ-রসের ভাঁড়ারে কোন খামতি নেই! শুধু উসকে দিলেই হলো।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register