Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় অভীক দাস

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় অভীক দাস

বিজয়া

এই সব হাবিজাবি লিখে কি পাও? মেয়ে বড় হচ্ছে,সংসারের এই হাল,আর উনি .... - বাকি কথাগুলো আর কানে আসেনি অজিতেশের! দীর্ঘদিন ধরে কটূক্তি শুনে শুনে অভ্যাস হয়ে গেছে। বইগুলো হাতে নিয়ে কাঁধের ঝোলার মধ্যে ঢুকিয়ে,স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে - আসছি বলে বেরিয়ে পড়লেন অজিতেশ! - হ্যাঁ যাও যাও,পুজোর দিনে যত বাউন্ডেলেপোনা! নিশ্চই ওই মেয়েছেলেটাও আসবে,আমায় একটা শাড়ি দিয়ে হয়ে গেলো,আর মেয়েটাকেও ... স্ত্রীর জোর গলা উপেক্ষা করেই অবনীন্দ্র সভাঘরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন অজিতেশ! আজ মহাষষ্ঠী,মায়ের বোধন তাই বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া! ছোট থেকেই কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ অজিতেশের,পত্র পত্রিকার পাশাপাশি ডিজিট্যাল ফরম্যাটে লেখা কবিতা পাঠক মহলে প্রশংসা পেলেও তার নিজের ব্যবসায়ী পরিবারে ব্যতিক্রমী প্রতিভাকে কেউ মান্যতা দেয় নি,তারা প্রত্যেকেই অজিতেশের অক্ষর প্রীতিকে সময় নষ্ট ছাড়া কিছু ভাবে নি। তবুও অজিতেশ লেখা ছাড়েন নি কারণ তার সৃষ্ট ছন্দের অনুপ্রেরণা,তার গুণমুগ্ধ পাঠিকা বিজয়া সেন, তিনি ডিভোর্সী! একাই থাকেন,বিভিন্ন পত্রিকায় অজিতেশের লেখা আগে পড়েছিলেন,তারপর এক সাহিত্য সভায় আলাপ,আস্তে আস্তে ফোনে কথা শুরু,দেখা সাক্ষাৎ,বই পড়ায় কফির সাথে সাহিত্য আড্ডা। অজিতেশ বিজয়ার সখ্যতা তার স্ত্রী আর সমাজের চক্ষুশূল হলেও তারা তাদের সম্পর্কের সীমানা,সত্যতা দুটোই জানতেন। অজিতেশের পারিবারিক ব্যবসার অবস্থা এখন বেশ খারাপ,তবুও সে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি! কিন্তু,পরিস্থিতি আর ভাগ্য তার সাথ দেয়নি।সকলে ভেবেই নিয়েছে কবিতার পিছনে ছোটার ফল!যেটুকু উপার্জন তার সিংহভাগ পরিবারের পিছনে দিয়ে বাকি সামান্য অংশ নিজের সাহিত্যের পিছনে ব্যয় করেন,গত দু'বছর পুজোতে নিজের জন্য কিছু কেনেন নি! এবারেও কিছু টাকা হল ভাড়া আর বই প্রকাশের কাজে বেরিয়ে গেছে, শত প্রতিকূলতা সত্বেও তার কবিতা বাঁচানোর শেষ চেষ্টা বিজয়ার চোরা ইন্ধনে টিকে আছে। অবনীন্দ্র সভাঘরে আজ সাহিত্যক কবিদের চাঁদের হাট,অজিতেশের বই প্রকাশের পাশাপাশি একটি সুন্দর অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়েছে।সবকিছু সেরে আগের পরিকল্পনা মতন দুজনে রেস্তোরাঁয় এসে বসলেন ডিনারের জন্য! কথপোকথনের পরে অজিতেশ কবিতার বইটা দিয়ে বললেন - একবার উৎসর্গটা দেখো! বিজয়া প্রথম দুটো পাতা ওল্টানোর পরে একটা দুই লাইনের ছন্দে নিজের নাম দেখে চোখে জল আসে,তারপর সেও নিজের সাথে থাকা ব্যাগ থেকে একটা প্লাস্টিকে মোড়া পাঞ্জাবি দিয়ে বলে - এটা পুজোয় পড়বে ! এরপর দুজনে দুজনের দিকে ভেজা চোখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বিজয়া রেস্তোরাঁর বাইরে বেরিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে,অজিতেশ ভেতরে বিল মেটানোর সময় আচমকা বাইরে একটা বিকট শব্দ শুনতে পায়! দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে ফুটের ওপরে কিছুটা দূরে পাশের দোকানে একটা গাড়ি ঢুকে আছে,আর ঠিক সামনে ফুটে পড়ে আছে বিজয়ার রক্তাক্ত দেহখানি,পিষে গেছে তাদের জীবনের ছন্দমালা। বোধনে যেন আজ অকাল বিজয়া! দেখতে দেখতে ভীড় জমে গেল,সামনের রাস্তার ওপর কবিতার বইয়ের উৎসর্গ পাতার ওপর রক্তের দাগের নীচে লেখা কিছু লাইন, উৎসর্গ বন্ধু বিজয়া'কে "তুমি হীনা অপূর্ণ,হৃদয়ের কলমে জীবনের খাতায়! বিবেকের বাণী উদ্ভাসিত, মননে আনন্দ ধারায়। রাতের গভীরতা লুকায় চাঁদে,হাসিমুখে প্রতিদান! প্রতিক্ষণে বাঁচার রসদে,দখিনা বাতাসে অভিমান।"
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register