Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় ডরোথী দাশ বিশ্বাস

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় ডরোথী দাশ বিশ্বাস

একবারও স্বীকার করিনি কারো কাছে---

মেয়েটা আমার জন্ম থেকেই পরিশ্রমী, না--- ভুল হলো, বলতে হবে জ্ঞানোদয়ের পর থেকেই মা হয়ে আমি তার শ্রম নিই। কি করবো--- বাপটা অলস, শুয়ে শুয়েই পঞ্চাশে পা দিতেই পগারপার। ছেলেটারও বাপের রোগ। শুয়ে শুয়েই মাধ্যমিক পাশ করলো। মেয়েটার নাম রেখেছি উমা, যার মাথার ওপর ছাদ নেই, পায়ের নিচে মাটি নেই, পেটে নেই ভাত, প্রদীপে নেই তেল, বই নেই, খাতা নেই, কলম নেই, প্রাইভেট টিউটর নেই --- নেইএর কবলে পড়েও রোখ দেখো--- ক্লাসে প্রথম হতেই হবে। পেতে হবে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। আছে শুধু ইচ্ছেশক্তি। ইংরেজী অনার্স পেয়েও ছেড়ে দিয়ে পড়লো প্লেন বায়োসায়েন্স, ডিম্যান্ড আছে বলেই। চাকুরীর ইন্টারভিউ বোর্ড ফেস করে স্যাটিস্ফাইড বাট টেকনিক্যাল মিস্টেক বলে হটিয়ে দেয়। অবশেষে ঘরের কোণে শিক্ষকতার চাকুরী। সততার জয়। সংগ্রাম ছাড়া কিছু হয় না। সময়ে সব হয়। সময় না হলে সাফল্য আসে না যে। বয়স পনেরো প্লাস থেকেই সংসারের জোয়াল তার কাঁধে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়ানো, বাজার করা, রেশন আনা, দোকানের বাকি সওদাপাতি আনা, খড়ি-কয়লা-কোলবল-ঘুঁটে আনা, সংসারে সবরকম চাহিদা পূরণ করার কাজ তারই। শিক্ষকতার চাকুরী পেয়েও এসব করতে হয়--- তখন চাহিদা আরো বড় বড়। একটা এরিয়ার পেয়ে সস্তায় তিনকাঠা জমি কিনেছে সে। একদিন নিজেদের বাড়ি হবে--- স্বপ্ন দেখা শুরু। ভাইএর লাগবে লাল টুকটুকে হিরো সাইকেল, খাট ড্রেসিংটেবিল, আলনা, আলমারী--- সবই কাঠের। ডেপুটেড টিচার হিসেবে বি.এড করতে বাড়ি থেকে আট নয় ঘন্টা জার্নির ব্যবধানে যাবার আগে একটা প্যানোরামা পোর্টেবল টিভি কিনতেই হবে। এটাও ভাইএর দাবী। উমা সেটাও পূরণ করলো। কালো মেয়ে। বিয়ে তো হবে না। এক দিকে বাঁচোয়া। নইলে এ চলে গেলে সংসারটার হবে কি? ছেলেটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে--- এ উমারই অবদান। কিন্তু তার কাছে সংসারের অর্থ তুমি আমি সে। মায়ের সেখানে জায়গা নেই। উমারও বিয়ে হলো। কিন্তু শর্ত মেনে। বাপের বাড়িকে দেখতে হবে। শ্বশুর শাশুড়ি বাদেও শ্বশুরবাড়ির অন্যান্যদেরও দেখতে হয়। কারণ অসহায়কে দেখতে গিয়ে যাদের মাথায় তেল আছে অনিবার্যভাবে তাদের মাথাতেও তেল ঢালতে হয় উমাকে। এদিকে বাড়তি বোঝা নিয়ে চলতে অভ্যস্ত উমাকে প্রথমদিন থেকে পেয়ে বসেছে তার কর্মস্থলও। পঠনপাঠনের সর্বোচ্চ লোড চাপানো তার ঘাড়েই, সাথে প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব, স্পোর্টসের সময় রেকর্ডকীপারের ও অ্যানাউন্সারের দায়িত্ব সামলানো, বিজ্ঞানবিষয়ক সমস্ত কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব, সবরকম লেখালেখির ভার--- সব সব সব। একটা সন্তান--- তাকে এক হাতে মানুষ করা, সেখানে আমাদের কারো ভূমিকা নেই। বেচারী নাতি আমার--- দেড় বৎসর বয়স থেকে প্রতিদিন বারো ঘন্টা একা কাটাতো। কোনোদিন সঙ্গ দিইনি আমরা। আজ বৃদ্ধ হয়েছি। উমারও চাকুরী থেকে অবসর নেবার সময় হয়ে এলো। দীর্ঘ জীবন আমার। সাথে পাঁচ বছরের ছোট বোন--- উমার কাছেই আছি। দেখছি--- আজও একা হাতে সব সামলে নিচ্ছে আমার উমা। এ জগত সংসারে এরকম অনেক উমা আছে যাদের অবদান অনস্বীকার্য। মনে মনে জানি তবু একবারও স্বীকার করিনা কারো কাছে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register