Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় তন্ময় রাণা

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় তন্ময় রাণা

শেষ চিঠি

আজ বিকালের হটাৎ লেটার বক্সটার দিকে তাকিয়ে একটু অবাকই হয়ে যায় মেঘনা। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে চিঠিরা যখন একদম বিলুপ্তির পথে তখন কে আবার চিঠি পাঠালো। বেশ কৌতুলের সাথে লেটার বক্সটার দিকে এগিয়ে যায় সে বক্সের পাল্লাটা খুলে দেখে একটা ধুলোমাখা নীল খাম,বেশকয়েক দিন এসেছে হয়তো বেখেয়ালে দেখাই হয়নি একদম। চিঠির প্রেরকের নাম টা পড়ে পায়ের তোলার মাটি সরে যায় মেঘনার From আকাশ দত্ত কলকাতা বেশ বুঝতে পারে বুকের ভেতর একটা একটা ধরপকানি শুরু হয়েছে তারসাথে দীর্ঘদিনের জমে থাকা রাগ অভিমান আর ঘেন্না গুলো বেশ চাগার দিয়ে উঠেছে। চিঠি খুলবে কি খুলবেনা এই ভেবে ভেবে খুলেই ফেলে মেঘনা নীল কালিতে পরিচিত সেই সুন্দর হাতের লেখা প্রিয় মেঘ, লিখবো না লিখবো না করে শেষে লিখেই ফেললাম নাহলে হয়তো তোর চোখে তীব্র ঘৃণা নিয়েই এ জগৎ ছেড়ে চলে যেতে হতো সেটা ঠিক চাই না রে.... তাই শেষমেশ লিখেই ফেললাম সব জানতে হলে রাজার হাট ক্যান্সার হসপিটালে পাঁচতলায় ৬নম্বর রুমে চলে আসিস একবার হয়তো একবার শেষ দেখা হয়েও যেতে পারে যদি তাড়াতাড়ি আসিস! খুব দেখতে ইচ্ছা করছে রে তোকে, তার থেকে বেশি সেদিনের আসল সত্যিটা তোকে জানিয়ে যেতে চাই যাওয়ার আগে তোর ঘৃণা নিয়ে এ পৃথিবী ছাড়তে ইচ্ছা করছে না রে! তাড়াতাড়ি আসিস সময় খুব কম ইতি তোর ঘৃনীত আকাশ এক নিমেষেই চিঠিটা শেষ করে ফেলেছি মেঘনা একটা অদ্ভুত উৎকণ্ঠায় মনটা আনচান করতে থাকে তার। কেন এমন হচ্ছে আকাশ কে তো মন থেকে মুছে ফেলেছে সে তীব্র ঘৃণা ছাড়া আর কিছুকেই তো স্থান দেয়নি তার মনে, আকাশের জন্য,আর আজ এতো দিন পর সে তাকে কিই বা জানাতে চায়? ভাবতে ভাবতে মেঘনার মন উড়ে চলে যায় বছর পাঁচেক আগে কলেজের ক্যান্টিনের বন্ধুদের সাথের আড্ডায়,সেখানে তখন সামনের বার্ষিক অনুষ্ঠানে কে কি করবে তাই নিয়েই আলোচনা চলছিল সেই সময় কুনালের সাথে এক মাথা বাবরি চুল ধপধোপে ফর্সা প্রায় ৬ ফুটের কাছাকাছি উচ্চতার এক সুদর্শন যুবক এসে যোগ দেয় তাদের আলোচনায়। কুনাল এসেই চিৎকার করে বলে ওঠে সাইলেন্ট..সাইলেন্ট... সাইলেন্ট আমি আজ তোদের সাথে আলাপ করিয়ে দিতে এনেছি আমাদের কলেজে নতুন ভর্তি হওয়া আমাদের বন্ধু আকাশ দত্তর সাথে। বাংলা অনার্স ১স্ট ইয়ার আর ওর একটা ভীষণ ভালো গুন হলো ও ভীষণ ভালো লেখে তাই আজ আমি তোদের সাথে ওর আলাপ করাতে নিয়ে চলে আসলাম। সেই প্রথম দর্শনেই ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল যা পরবর্তী কালে গভীর প্রেমের পরিণত হয়েছিল। মাঝের আড়াই বছর খুব সুন্দর স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে কেটেছিল মেঘনার আকাশকে নিয়ে সুন্দর ঘর বাঁধার স্বপ্ন বুনেছিল দুজনে। সব কিছু ভালোই চলচ্ছিলো বেশ তারপর একদিন হঠাৎ করেই করেই জেনো কোথায় উধাও হয়ে গেলো আকাশ কোনো খোঁজ পেলোনা কেউ খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো তখন মেঘনা মাঝের বেশ কয়েক দিন ধরেই বুঝতে পারছিল যে আকাশ তাকে এভোয়েড করছে দেখা হলে আবোল তাবোল হারিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলো খুব রাগ করতো মেঘনা সেগুলো শুনে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে বলতো, কেন এমন করিস বলতো আমায় ছেড়ে ছেড়ে এমন করে চলে যাস আর আসলে যত্তসব আমল আবোল তাবোল ক্থা বলিস!জানিস না তুই ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারিনা। কেউ তো চিরদিন থাকেনা রে তাই বলি নিজের সাথে নিজে খুব লড়াই আর দ্বন্ধের মধ্যে চলছি রে কিছু ভালোলাগে না আর। প্রচন্ড অভিমান করে সেদিন চলে এসেছিলো মেঘনা। তারপর যথারীতি আবার উধাউ হয়ে গিয়েছিলো আকাশ। সে সময় কুনাল ওকে খুব মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছিলো সব রকম সাহায্য করতো আকাশের সাথে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য। বেশ কয়েক দিন কেটে যাবার পর একদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় কলেজের কমন রুমের সামনের দিয়ে পাশ করার সময় হঠাৎ ই ভেতর থেকে আকাশের গলা শুনতে পায় যেন!সে থমকে দাঁড়িয়ে ভালো করে কান পেতে শোনে, হুমম এতো আকাশের গলার স্বর! সাথে একটা মেয়ের হাসির শব্দও শুনতে পায় সে। ভালো করলে কান খাড়া করে আরও শুনতে থাকে শুনে কান গরম হয়ে আসে মেঘনার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না সে তারপর একটা কিছুক্ষনের নীরবতা নেমে আসে ভেতরে আর কিছু শুনতে পায় না সে! কৌতুলে সোজাকমন রুমের ভেতরে ঢুকে যায় মেঘনা ঢুকে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় তার দেখে ভেতরে আকাশ দুহাত দিয়ে তৃষার মাথাটা ওর মুখের কাছে টেনে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে যাচ্ছে আর তৃষা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিয়েছে এ সব দেখে মাথায় যেন আগুন জ্বলে ওঠে মেঘনার, নিজের পায়ের জুতোটা খুলে সোজা আকাশের মুখে ছুঁড়ে মারে সে। ওরা তাকাতেই কাঁদতে কাঁদতে এক ছুটে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে খালি পায়েই। সেই শেষ, আর কোনোদিন আকাশের সাথে যোগাযোগ রাখেনি সে। আজ বছর খানেক হলো কুনালের সাথে তার বিয়ে হয় হ্যাঁ একমাত্র কুনালই তাকে সামলে তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো সেদিন ভরসা করতে বলেছিলো তাকে সে কিছু মিলে আর আকাশ কে দেখানোর জন্যই কুনাল কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল সেদিন মেঘনা। আজ এতো দিন পর এই চিঠিটা পড়ে মনের মাঝে একটা যেন আবার ঝড় উঠলো দীর্ঘদিন সুপ্ত হয়ে থাকার পর জেগে উঠা আগ্নেয়গিরি থেকে উত্তপ্ত লাভার মতো বিগত আবেগের মুহূর্ত গুলো যেন বেরিয়ে আসতে লাগলো। আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে কুনাল কে কিছু না জানিয়েই বেড়িয়ে পড়লো রাজার হাট ক্যান্সার হসপিটালের উদ্দেশ্যে। ----------"দাদা একটু জোরে চালান প্লিস আরও কতক্ষন লাগবে"? যেতে যেতে বারবার এই কথা গুলোলোই ক্যাবের ড্রাইভার কে বলতে থাকে মেঘনা ঘন্টা খানেক পর একটু বিরক্ত সুরেই ক্যাব ড্রাইভার বলে ------"নিন আসুন এসে গেছে আপনার হসপিটাল সারাটা রাস্তা আমার মাথা খারাপ করে দিলেন একদম"। ক্থা না বাড়িয়ে ক্যাবের পয়সা মিটিয়ে সোজা উদ্ভ্রান্তের মতো ছুট লাগায় লিফ্ট-এর দিকে পাঁচ তলায় লিফ্ট থেকে নেমে ছয় নম্বর রুমে ঢুকে ঢেকে রুম কোনো পেসেন্ট নেই তো সেই রুমে। পাশের নার্স কে জিজ্ঞাসা করতে জানায় এই রুমের পেসেন্ট কাল সকালেই মারা গেছে ওনাকে তো আর দেখতে পাবেন না l আপনি কে হোন ওনার? দাঁড়ান দাঁড়ান আপনি কি মেঘনা? ----- হুমম কিন্তু আপনি কিকরে জানলেন? আপনার উৎকণ্ঠা দেখে বুঝতে পেরেছি দাঁড়ান আপনার জন্য একটা চিঠি লিখে গেছেন ভদ্রলোক।আর আমায় বারবার অনেক অনুরোধ করে গেছেন যে আপনি এলে যেন আপনার হাতে দিই। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কে হয় আপনার বলেছিলো আমার মনের আকাশের মেঘ। আমি বলেছিলাম যদি কেউ না আসে? উনি বলেছিলেন আসবে ঠিকই আসবে ওকে যে আসতেই হবে। অনেক অপেক্ষা করেছিল আপনার জন্য শেষে কাল আর লড়াই করতে পারলেন না জীবনের সাথে। চিঠিটা হাতে নিয়ে পাশের চিয়ারটায় ধোপ করে বসে পড়ে মেঘনা নীল খামটা খুলে পড়তে থাকে... আমার মেঘ, এই চিঠিটা যখন তোমার হাতে পড়বে ততক্ষনে আমি আর থাকবো না যদিও অনেক চেষ্টা করেছিলাম থেকে শেষ একবার তোমাকে দেখতে কিন্ত তা আর হলো না জানি তোমার চোখে আমি আজ একজন চরম ঘৃনীত মানুষ তবুও তোমাকে গোপন করা অজানা কিছু সত্যি তোমাকে এই চিঠির মাধ্যমে জানাতে চাই যাতে আমার সম্পর্কে এই তোমার ধরোনা কিছুটা হলেও বদলায় কেননা তা না হলে আমি পরপারে গিয়েও কোনো শান্তি পাবনা। এবার আসল কথায় আসি, তোমার সাথে যখন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জানতে পারি আমি ব্লাড ক্যান্সারের মারণ থাবায় আক্রান্ত! খুব বেশি হলে ২বছর আর আয়ু। খবরটা জেনে সেদিন জানো আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায় খুব কাঁদি আমার নিজের করুণ এই নিয়তির জন্য। কিন্ত তারপর নিজেকে শক্ত করি আর তুমি যাতে আমার এই জীবনের সাথে না জড়াও সেজন্য দূরত্ব বাড়াতে থাকি তোমার সাথে কেননা আমি জানতাম তুমি সব জেনেও তোমাকে আমার থেকে কিছুতেই আলাদা করবে না তাই তোমাকে চরম একটা আঘাত দেবার জন্য কলেজের কমনরুমে অনেক কষ্টে তৃষাকে রাজি করিয়ে তোমার সামনের অমন একটা দৃশ্য উপস্থাপন করি তোমার আমাকে জুতো ছুঁড়ে মারার পর আমি নিশ্চিন্ত হই যে তুমি এবার আমার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে। খুব কষ্ট পেয়েছি জানো সারাটা শরীর জুড়ে শুধু জ্বালা পোড়ার যন্ত্রণা।তোমার পছদের বাবরি চুল গুলোও সব উঠে যেতে থাকলো শেষের দিকের কেমো গুলো আর নিতে পারছিলাম না।তোমাকে এই জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে সেদিন এটা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলো না। অনেক কষ্টে এই চিঠিটা লিখেছি তোমাকে সব জানাতে। আমি জানতাম কুনাল তোমাকে খুব পছন্দ করতো আমার বিশ্বাস ছিলো আমি সরে গেলে কুনাল তোমাকে ঠিক আপন করে নেবে। আর আমার সেই বিশ্বাস পুরোপুরি ভাবে সত্যি হয়েছে জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। জানো।আমি জানি এই চিঠিটা পড়ে তোমার আমার প্রতি যতো ঘৃণা ছিলো সব মুছে যাবে আর তখনি হয়তো আমার আত্মার শান্তি পাবে। এই বিশ্বাস নিয়েই তোমার থেকে বিদায় নিলাম lআর একটা ক্থা মনে রাখবে চলে গেলেও আমি তোমার মাথার আকাশ হয়ে চিরদিন তোমার মাথার ওপর ছেয়ে থাকবো তোমায় সব সময় দেখবো তুমি কষ্ট পাবে না একদম খুব ভালো থেকো ........ ইতি তোমার হতোভাগ্য আকাশ। চিঠিটা পড়ে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে মেঘনা তখন শক্ত দুটো হাত ওকে ধরে তুলে দাঁড় করায়। কুনালকে দেখে আরও কাঁদতে থাকে মেঘনা বলে তুমি...!! তুমি এখানে? তোমার টেবিলে ছেড়ে আসা চিঠিটা পড়ে আমি তখনি বুঝতে পারি যে তুমি ঠিক এখানে এসেছো তাই তৎক্ষণাৎ আমিও বেরিয়ে পড়ি এখানে আসার জন্য । কুনালকে জড়িয়ে কাঁদতে আরও থাকে মেঘনা। ওকে শান্ত করতে থাকে কুনাল, কেঁদো না প্লিস শান্ত হও। ওপর ওলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাদের তো কিছু করার নেই বলো। তুমি এভাবে কাঁদলে তোমার গর্ভে যে আসছে তার তো ক্ষতি হবে তাই না। দেখো হয়তো ওই ফিরে আসছে তোমার কাছে নতুন রূপে। কথাটা শুনে একটু শান্ত হয় মেঘনা চুপ করে থাকে। তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে তখন কুনাল আসতে করে বলে চলো এবার ফেরা যাক।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register