Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় জয়ন্ত দত্ত

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় জয়ন্ত দত্ত

তবু মনে রেখো

মধ্যবয়স্কা শাড়ির আঁচলটা বুকের কাছে ঈষৎ টেনে নিল। ভ্যাপার ছুঁয়ে বৃষ্টির আলো ফোঁটার মতো ঝরছে। অনেকটা মুক্তির মতো। ঋভু আরেকটু পরেই ঝড়ের মতো আসবে। এলো মেলো হাওয়া বইছে। সিন্থেটিকের শাড়িটা যেন অবাধ্যের মতো উড়ছে! চল্লিশের মালবিকা সাতাশের ঋভুর জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার কোনো বয়স নেই। আছে কেবল উত্তেজনা। আর আছে ভয়। বুকভরা সংশয়। হুম। এই সংশয় টা চলছে আজ আট মাস ধরে। মালবিকার রোজকার অফিস ফেরার পথে এই টুকরো গলি। যেখান থেকে দিনের বেলায় ভিক্টোরিয়ার মুন্ডুটা এক টুকরো দেখা যায়। এই পথে সহসাই গাঁজার ধোঁয়ায় সহস্র বুকের যন্ত্রনা বাতাসে মিশে যায়। তাদের কতটা যন্ত্রনা, আর কতটা অ্যাডিকশন তা অবশ্য মালবিকা জানেনা। মালবিকা এদের দলের কেউ নয়। হুম অবশ্যই ঋভু এদের দলের টুকরো একটা অংশ। এই শহর বেশ মজার। এখানে ধোঁয়া ওরে অকারণে। মন পোড়ে নিকোটিনে। আর মালবিকা আসে ঋভুর কাছে। কিসের টানে? আজ সকাল থেকে বৃষ্টি। অফিসে সেভাবে কোনো কাজ ছিলনা বললেই চলে। আজ না আসলে সত্যি করে ভীষণ ভালো হত। সত্যি কি ভালো হত? না হত না তো! লকডাউনের পর থেকেই অল্টারনেটিভ ডিউটি। মালবিকার সপ্তাহে তিন দিন। ফুড কর্পোরেশন ধর্মতলা। তার পর সেখান থেকে মেট্রো ধরে সদন। বাকিটা সময় ঋভু। তারপর সখের বাজার। মানে বাড়ি। গতকাল অফ ডে ছিল। একটা দিন মানে অনন্ত ঘণ্টা, অসংখ্য মিনিট। আর অসহ্য সেকেন্ড। আজ না আসলে আবার দুদিন পর ঋভুর সাথে দেখা। না, এটা জাস্ট ইম্পসিবল। সত্যি বলতে কি, প্রেমে পড়ার পর আজ প্রথম মালবিকার জীবনের স্পেশাল ডে। আজ যে আসতেই হতো তাকে ঋভুর কাছে। শাড়ির পাড়টা হালকা তুলে পায়ের জল কাটিয়ে মালবিকা মুক্ত মঞ্চের পাশে এসে দাঁড়াল। অন্য দিন হলে বেদিটায় বসত। কিন্তু আজ সর্বত্র জলমগ্ন। এখনো ঝরছে। কিন্তু টুপটাপ। আবার একটা ফোন কল। __ ঋভু। আর কতক্ষন দাঁড়াব? এর পর তো আর মেট্রো পাবনা। __ এই তো, জাস্ট এক্সাইড টা পেরোচ্ছি। আর একটু প্লিজ। আজ ঋভুদের দলের কেউই নেই এখানে। রাস্তাটা পুরো ফাঁকা। খুব নিঝুম একটা সন্ধ্যা। শুধু দুটো দোকানে দুচার কাপ চা, আর চাউমিনের ধোঁয়া। হাতে গোনা দু একজন বেপরোয়া মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই। ওই তো ঋভু আসছে। না ওটা ঋভু নয়। ঝড়! ঝড় আসছে! ওর হাঁটার ভঙ্গিটা ঈষৎ হেলে অনেকটা নায়কচিত ভঙ্গিতে। আজ ক্রিম কালারের একটা পাতলা জামা। রোগা পাতলা বুকটার উপর দিকে দুটো বোতাম খোলা। ঈষৎ রোম আর হালকা দাড়ি। দুর থেকে মনে হচ্ছে ঝড় বৃষ্টি পেরিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে আধুনিক আবর্তে মোড়া কোনো এক প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য আসছে। অভিসারে। এই প্রেমিকার কোমরের দুধার থেকে মাংস পেশি ঝুলে পড়েছে। বুকের বাঁধন আলগা হয়েছে। তবু বুকের নিচের হৃদস্পন্দন এই মুহূর্তে স্পন্দিত হচ্ছে, ঠিক যেন সতেরো। আর একটু কম করে দিলেও ক্ষতি নেই। __কিগো, এই বৃষ্টিতেও তোমাকে দাঁড়াতে হল? বললাম না আজ চলে যাও, রাস্তায় কি জল! ইশ পুরো তো ভিজে গেলাম। অনর্গল কথা কয়ে চলেছে নিকোটিনে পোড়া ঠোঁট দুটো। বিদ্যুতের মতো লাফাচ্ছে চোখ দুটো। ক্রিম কালারের জামা ভেদ করে রোমশ বুকটা যেন সিক্ত উপত্যকা। পুরুষ ওভাবে কেন কথা বলে? এভাবে কেন আজ বৃষ্টি হচ্ছে? মালবিকার শীত করছে। জড়িয়ে ধরবে ছটফটে যুবক টাকে? ঠোঁট দুটোতে কামড়ে দিয়ে বলবে? তুমি জানোনা কিসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি? আকাশের বিদ্যুৎ এই নেশাকে আরেকটু উস্কে দিল। সহসা এক ঝলকে সিন্থেটিকের কালো শাড়ি ভেদ করে সফেন শুভ্র বুকটা জ্বলজ্বল করে উঠল। মালবিকা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। ফর্সা গালের ডানদিকে নুয়ে পড়া সিক্ত চুলটা ঋভু তর্জনী দিয়ে সরিয়ে দিল। মালবিকা কি চায়? ওর চোখ দুটো এই মুহূর্তে সেই সব প্রশ্নের মার্জিত উত্তর। হাত টেনে ঋভু মালবিকাকে নির্জনে নিয়ে গেল। পাইন গাছের নিচে তাজা হাত দুটি মধ্যবয়স্কার চিবুক ছুঁলো। গাছ বেয়ে অঝরে জল ঝরছে ঝর্নার মতো। বৃষ্টির জল। ঋভু একেবারে ঠেসে ধরেছে মালবিকাকে। ওর শক্তি কে ফিরিয়ে দিতে নেই। ফিরিয়ে দেওয়া যায়ও না। এই তো নেশা। এরই তো অপেক্ষা। ভেসে যাচ্ছে। মালবিকা দশটা নখ দিয়ে খামচে ধরছে ঋভুকে। ঋভু এলোমেলো ঠোঁট চালাচ্ছে মালভূমির মাঝে। মালবিকার ব্রেসিয়ারের হুকটা হালকা হল... __ প্লিজ ঋভু। এটা পাবলিক প্লেস। প্লিজ। প্লিজ স্টপ..... ঋভু এতক্ষণে জ্ঞানে ফিরেছে। না এটা জ্ঞান নয়। নেশা। নেশা ভেঙেছে। হালকা তালে দুলছে। বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছে। __ না, না ছাড়ব না। মালবিকা ওর গাল দুটো ধরে হালকা করে ওর কপালে একটা চুমু খেল। তার পর কানের কাছে ঠোঁটটা নিয়ে ফিস ফিস করে বলল __ছাড়তে কে বলেছে? নাওনা আমাকে। একেবারে নাও। ঋভু প্যান্টের বেল্ট টা ধরে কোমর টাকে একটু আপ ডাউন করে নিল। নিজেকে একটু গুছিয়ে পাইনে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। ঋভুর হাত দুটো মালবিকা নিজের বুকের কাছে শক্ত করে ধরে বলল, __ ঋভু, কিচ্ছু চাইনা। একটা সন্তান দেবে আমায়? ঋভুর চোখ দুটো চঞ্চল। ডান পায়ের উপর বাঁ পা তুলে পাইনের বেদিতে বসে আরেকটা সুখটান দিল। এই কথা গুলো উঠলেই ও সহসা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। ঋভুর নির্বাক ঠোঁট দুটো এই সময় মালবিকার কাছে ভয়নাক অসম্মানের। আজ এই জায়গা টা নির্জন। আঁচড়ে খামচে অসভ্যতা করার মতন। তাই আর দেরি কেন? মালবিকা, ঋভুর জামার কলার টেনে দাঁত খিঁচিয়ে ক্ষিপ্র হয়ে উঠল। __ কি হল? চুপ করে গেলে কেন? প্রেম করা যায়? ভোগ করা যায়? আর ঘরে নেওয়া যায়না? ঋভু এক হাতে সিগারেট টা কায়দা করে ধরে, অন্য হাতের বহু মন্ডলীতে মালবিকাকে, পেঁচিয়ে নিল। __ কমপ্লিট সেক্সের এটাই প্রবলেম। এভাবে ছেড়ে দিলেই তুমি খিঁচ মেরে যাও? এই জন্যেই বাল ভালো লাগেনা। __ ঋভু, প্লিজ। অ্যাম সিরিয়াস। তুমি আমাকে আজ কোনো ভাবেই স্কিপ করবে না। __ ধুর বাল। কিসের স্কিপ? বাল তোমাদের খালি বিয়ে আর বিয়ে? ভালো লাগছে না এই প্রেম? বাল আজ একটুও টান দিইনি সারাদিন। এমনিতেই মাথাটা ধরে আছে। তুমি আর ঝাঁট জালিও না। হালকা আভরণ সরে গেলেই ঋভুর এটা স্বাভাবিক ধরন। মালবিকা এটাতে অভ্যস্থ। কিন্তু আজ কিছুতেই সে ছাড়বে না। উত্তর আজ ওকে দিতেই হবে। এদিকে মালোবিকার ব্যাগের ভিতর থেকে শব্দ যন্ত্রটা বেজেই চলেছে। __ কে ফোন করেছে? তোমার ভাতার নিশ্চয়? শালা বুড়ো মালটার খেয়ে কাজ নেই? __ মুখের ভাষা ভদ্র করো ঋভু,সৌরভ আমার স্বামী। __ তাহলে যাওনা স্বামীর কাছে। আমার কাছে আসো কেন? বিয়ে মারাচ্ছিলে না একটু আগে? আর কিসব বাচ্চা টাচ্ছা? বলোনা ওই লেডিস মার্কা হাফ গান্ডুটাকে। __ ছি ঋভু। তোমার মুখের ভাষা দিন কে দিন খুব বাজে হয়ে যাচ্ছে। __ বেশ করেছি। আমার শালা ঝাট জ্বলে যায় ওই মালটাকে দেখলে। __ তো ঝাট জ্বলে যখন নাওনা আমাকে। পারবে বলতে বাড়িতে? পারবে মা কে বলতে? __ বিয়ে বিয়ে করছ? খাওয়াব কি? গাঁজার খরচা টুকুও তো মাঝে মধ্যে তোমার থেকে জোটে। আর পারবে তুমি তোমার ওই হাফ লেডিস বর টাকে ছাড়তে? শাল্লা। না ঘরকা, না ঘাটকা। __ আর যদি ছাড়তে পারি? __ আগে ছেড়ে দেখাও, তারপর বাতলিং মারতে এসো। __ ভদ্র ভাবে কথা বলো। আবার ব্যাগের ভেতর থেকে যন্ত্র টা বেজে উঠলো। অবাধ্য। অসহ্য। ঋভু রেগে ফায়ার। উল্টো হাঁটতে শুরু করেছে। __ ধুর শালা। ভদ্র মারাচ্ছে। যাও যাও, বাড়ি যাও। আমি চললাম। শালা আগে ঘর সামলাও। মেনি মুখো ব্যাটা টাকে ছেড়ে দেখাও। তার পর এসো আমার কাছে। আমি চললাম.... __ মানে? চললাম মানে? আরে... চললাম মানে টা কি? আমাকে মেট্রো তে কে ছাড়বে?ঋভু, শোনো... দাঁড়াও.... একটা টুকরো মেলোড্রামা ঘটে গেল জমা জলের পথে। এই নির্জন শহরে মালবিকা এখন একা। ভয় করছে। এমন একটা ভয়। যেন এই ভয়ের মধ্যেই মালবিকা থেকে যেতে চায়। এই ভয় টা ভালো লাগছে। ধুর ফোন টা আবার বাজছে। __ কি হয়েছে টা কি? ফোনের ওপার থেকে বছর তেতাল্লিশের সৌরভ __ এত দেরি হচ্ছে কেন মালো? __ কাজ ছিল তাই। __ আজ এত বৃষ্টি। চারিদিকে জল... __ ডুবে মরব। বুঝলে? ডুবে মরব। রাখো ফোনটা। বলে ফোনের এপার থেকে ঝাঁঝিয়ে উঠল মালবিকা। অসহ্য লাগছে। এই ভাবে ঋভু কিভাবে একা এই নির্জন পথে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল? যাওয়ার পর একটা ফোন অবধি করল না। আর আজকের স্পেশাল দিনটা? ভুলে গেল? ঋভু এভাবে ভুলে যেতে পারল? নিথর পা দুটি এগিয়ে চলেছে মেট্রো স্টেশনের দিকে। সারা রাস্তা এক গভীর সঙ্কট। দোলাচল। অভিযোগ। অনুযোগ। পা চলছে। বাস দুলছে। দিদি একটু সরে দাড়ান। দাদা এখানে বাঁধবেন। আস্তে... আস্তে লেডিস..... উফ্। অসহ্য এক শব্দ। গভীর অনুযোগ মালবিকাকে অস্থির করে তুলছে। কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কেন আজ থেকে পনের বছর আগে সৌরভকে বিয়ে করতে গেল? ওই টুকু জেদকে কি উপেক্ষা করা যেত না? পূর্ব প্রেমের বিচ্ছেদ যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে প্রেমিকের চোখের সামনে ভোলাভালা সৌরভকে পাঁচ দিনের মধ্যে বিয়ে করে দেখিয়ে দিয়েছিল মালবিকা? আর সেই জেদে আজ দু দুটো জীবন নষ্ট হয়ে গেল। দুটো কি? না না তিনটে। তবে আর নয়। আজই সব জানিয়ে দেবে সৌরভকে। সবটা। আর নয়। মিথ্যে সম্পর্ক। সব মিথ্যে। সব মিথ্যে? সব? ঋভুই সত্যি? সব বলে দিলে ঋভু তাকে আপন করে নেবে? তুলবে ঘরে? ভাবতে ভাবতে রাস্তা শেষ। বাস স্ট্যান্ডে কে দাড়িয়ে? এই নির্জন রাতে। দুর্যোগ মাঝে। ছাতা ধরে। কে ওটা? সৌরভ না? হ্যাঁ তো... __ তুমি আবার আসতে গেলে কেন? __ চিন্তা হচ্ছিল যে। __ কিসের চিন্তা? আমি কি বাচ্চা মেয়ে? তার পরেই দুজন চুপ। মালবিকা উচ্চস্বরে কথা বললে আজকাল সৌরভ চুপ করে যায়। ঘরে ফিরে ফ্রেশ হয়ে মালবিকা খাবার টেবিলে থালা সাজাচ্ছে। সৌরভ রান্না ঘর থেকে এক এক করে সব বয়ে আনছে। মালবিকা কি ঋভুর কথাটা খাবার টেবিলেই বলবে? না থাক সারাদিন পর খাওয়াটা ঠিক মতো হোক। বিছানার চাদর ঝাড়তে ঝাড়তে একটু নিচু হতেই সৌরভের উন্মুক্ত বুকের দিকে মালবিকার নজর গেল। __ কি হয়েছে সৌরভ? বুকে ওটা কি? ইশ। দেখি দেখি... হ্যাঁ। ফোসকা। ফোসকা তো। ইশ... কিভাবে হল এটা? __ আর বোলো না, মাছের তেল ছিটকে... __ কিছু লাগিয়েছ? __ হ্যাঁ, ওই.. __ কই দেখি? ইশ কি করেছ? মালবিকা অস্থির হয়ে উঠল, মলম এনে লাগাতে গেলে সৌরভ ইতস্তত বোধ করল। মালবিকা সৌরভের হাত টেনে ধরল। __ চুপটি করে এখানে বসো। সারাদিন বাড়িতে কি করো? নিজের দিকে খেয়াল রাখতে পারোনা? __ তুমি অফিসে থেকে সারাদিন নিজের খেয়াল রাখতে পারো? __ বাড়ি আর অফিস এক নয় সৌরভ। __ সবটাই কাজ মালো। সারাদিন কি কম কাজ থাকে বাড়িতে? কত দিন হলো বাড়িতে থাকোনা। ছুটির দিনেও না। __ সৌরভ তোমার সাথে আমার একটা কথা আছে। __ আমারও আছে। একটা না। তিনটে। __ তোমার আবার কি কথা? __ আগে তোমার টা শুনি। __ না, আগে তুমি বলো। __ বলছি লেখো। __ মানে? __ তেল শেষ, বারান্দার বাল্বটা চেঞ্জ করতে হবে। তোমার হরলিক্স যা আছে এই মাসের শেষ টুকু চলে যাবে। তোমার থাইরয়েডের ওষুধ প্রায় শেষ। ইলেক্ট্রিক বিল টা অবশ্য আমার টিউশনির টাকায় কমপ্লিট করে দিয়েছি। আর হ্যাঁ তুমি যে আংটি টা বানাতে দিয়েছ, আজ ফেরার পথে স্যাঁকরা আমাকে ডেকে বলল, ওটা কমপ্লিট হয়ে গেছে। সময় করে নিয়ে আসতে। মালো। আর একটা কথা বলব? যদি কিছু মনে না করো। __ বলো __ আমার জন্য অত দাম দিয়ে একটা আংটি না বানালেই পারতে। মালবিকার পায়ের তলার মাটি সরে গেল। গত মাসেই ঋভুর জন্য ওই আংটি টা বানাতে দিয়েছে সে। এক গভীর মায়ায় মালবিকার বুকটা আচ্ছন্ন হয়ে গেল। এই মায়া ঋভুর জন্য নয়। সৌরভের জন্য। কি সরল। নিষ্পাপ। একে ঠকাতেও যে বুক কেঁপে যায়। মালবিকা বহুদিন পর সৌরভেরর মুখের দিকে স্পষ্ট করে তাকাল। চোখের কোনে কালি পরেছে। অনেকটা পাতলা হয়ে গেছে। নিস্তেজ শরীরটা আরো বেশি মলিন। আরো বেশি বিকর্ষিত। নারী শুলভ এই পুরুষ টি যেন আজ তার স্বামী না। তার পরিচর্যায় রত আজন্ম এক নিবেদিত প্রাণ। মালবিকার মা বেঁচে থাকলে হয়ত আজ এভাবেই.... এ এক ভয়ঙ্কর মায়া। এই মায়ায় না জানি কি আছে। কর্তব্য? দায়িত্ব? নাকি ভালোবাসা? রাতে শুয়ে দুটি প্রাণ নিথর দেহে একে অপরকে প্রশ্ন করল।... __ মালো। __ বলো। __ কি বলবে বলছিলে? __ কাল বলব। __ আজি বলোনা। __ না থাক। তুমি বলো তোমার দ্বিতীয় কথাটা। __ শুভ জন্মদিন মালো। __ সৌরভ... তুমি মনে রেখেছ? __ কখনো ভুলেছি মালো? __ কেন মনে রেখেছ? __ আমার যে আর কেউ নেই। বুকের পাষান খসে সন্ধ্যার জমা জল চোখের কার্নিশ বেয়ে নামছে। মাঝে মধ্যে আলমারি ঝেরে পুরাতন মলিন বস্ত্রে মুখ গুঁজে বসে থাকতে ইচ্ছে করে। ছিঁড়ে কুটে জীবনের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে- জীবন, তুমি না গেলে আমায় ছেড়ে। না দিলে আমায় ছাড়তে। কেন তুমি এমন। কেন এমন...!! আজ সৌরভকে কেন জানিনা বহুদিন পর বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু দূরত্ব যে এতোটাই বেড়ে গেছে। মালবিকা রাগে ক্ষোভে সৌরভের উপর আছড়ে পড়ল- __আজ সারাদিন পর তুমি আমাকে উইশ করছ? আমার দাম আছে কারোর কাছে? আর তো কয়েক ঘন্টা পর দিনটা শেষ ই হয়ে যাবে। __ মালো, কাল রাতে যতবার উইশ করব ভেবেছি ততবার তুমি ব্যালকনি তে ফোনে ব্যস্ত ছিলে। আজ সকালে উঠেই অফিস গেলে। আর দামের কথা বলছ? দর দাম তো কখনো করিনি মালো। আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি। দুটি শরীর এখন মুখোমুখি। অভ্যেস। অনেকটা বন্ধুর মতো। অনুত্তেজিত সুপ্ত কামনায় জর্জরিত দুটি নিন্মাঙ্কের পারদ। এর শিখর গভীরে। অনেক গভীরে। যা ইচ্ছে করলেই উপড়ে ফেলা যায়না। এরই নাম মায়া। মালবিকা নিজের হাতের তালুটা সৌরভের বুকে ওপর রাখল। __ ফোসকা টা জ্বালা করছে? আরেকটু মলম লাগিয়ে দেব? __ না। কিচ্ছু লাগবে না। তুমি শুধু একটু আমার কাছে থাকো। একটু বুকে হাত বুলিয়ে দাও। দেখো, সব ঠিক হয়ে যাবে। মালো। তুমি বরং তোমার কথাটা বলো। __ কোন কথা? __ ওইযে বলছিলে, কি যেন কথা আছে। __ সে বলব ক্ষণে। আগে বলো তুমি আমাকে এবছর কোনো গিফ্ট দিলেনা কেন? __ দেব তো। তোমাকে তোমার জন্মদিনের গিফ্ট দিইনি, সেটা কখনো হয়েছে? __ তাহলে দাও? __ ওইযে বললাম তিনটে কথা আছে। তার মধ্যে তো দুটো কথা শেষ। আমার তৃতীয় কথাটাই তোমার জন্মদিনের সেরা গিফ্ট। তবে সেটা আজ নয়, কাল দেব। তুমি বরং তার আগে তোমার কথাটা শেষ করো। __ না আগে আমার গিফ্ট। তার পর সব কথা। __ সেই ছেলে মানুষটাই রয়ে গেলে মালো। দুটি প্রাণ আবার নিশ্চুপ। কিছু পর মালবিকা আরেকটু কাছে এল, __ সৌরভ __বলো __ আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে? __ এই তো দিচ্ছি। পাগলী একটা। ঘুমাও তুমি। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তন্দ্রার ঘোরে মালবিকা বহুবার সৌরভকে জড়িয়ে ধরেছে। এই তার ক্লান্ত পথের শেষ আশ্রয়। যার নিবিড় সংযোগস্থলে মাথা গুঁজে মালবিকা ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতি রাতের মতো সে রাতেও মালবিকা তার আর্জেন্ট কথাটা সৌরভকে আর বলতে পারেনি। কিন্তু সৌরভ তার তিন নম্বর কথাটি তার পর দিন সকালেই বলে দিয়েছে। সকলে উঠে মালবিকা বিছানায় চিঠিটা কুড়িয়ে পেয়েছে। হাতের লেখাটা সৌরভের। খুব অল্প কথার মাত্র কয়েকটা লাইন। মালো, আমি বহুবছর তোমাকে এই বাঁধনে আটকে রেখেছিলাম। আমাকে তো একটা সময়ের পর সরে যেতেই হত। কি ভয় হত জানো? আমার অবর্তমানে তোমাকে এভাবে যদি কেউ কেয়ার না করে! তবে এই ভেবে অহেতুক তোমায় সারা জীবন আটকে রাখার কোনো মানেই হয়না। আমি জানি ওই আংটিটা তুমি আমার জন্য বানাও নি। তবু ওই সুখ টুকু নিলাম। ছিনিয়ে। প্রতিবারের মতো। আমি অপারগ জানি। তবু আমি কারোর সাথে তোমায় ভাগ করতে পারব না মালো। তুমি কাল রাতে যে কথা বার বার বলেও বলে উঠতে পারোনি, সেই কথার মুক্তি আমার কলমে ঘটল আজ। নিজের খেয়াল রেখো। জানিনা কে তোমায় আমার থেকে আরো বেশি সুখে রাখবে। তবে এই মুক্তি তোমার প্রয়োজন ছিল। আমি তো তোমায় ভালোবেসেছি। তাই সব সময় তোমার সুখ টুকুই চেয়েছি। আজ ও তাই চাইলাম। এটাই তোমার গিফ্ট। কাল থাকব কি না জানিনা। তবে আর দেখা হবে না। যদি ভুলে যাও কোনো সুখের রাতে। আমাকে বিস্মৃত মনে আবছা আলোয়। তবু ছিলাম আমি। একলা তোমার। শুধুই তোমার। মালো। যদি ভুলেও যাও চিরতরে। তবু জেনো আমার আর কেউ ছিল না তুমি ছাড়া। মালো... তবু মনে রেখো।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register