Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় সোনালি

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় সোনালি

আমার উমা

আজ মহা ষষ্ঠী। বরাবর এমন দিনে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে শুনতে পেতাম, "বা" মানে আমার বাবামশাই, আগমনী গাইছেন, --- " গিরি গনেশ আমার শুভকারী , আমি পুজে গনপতি পেলাম হৈমবতী , আমার উমার কোলে গণেশ যেন শশীর কোলে শশী..." আমাদের বাড়িতে দোতলার সিঁড়ির ল্যান্ডিংটা লম্বা। পাশাপাশি দুটো ফ্রেঞ্চ উইন্ডো,তাতে রঙ্গিন কাঁচের আর্চ লাগানো , তারপরে আবার সিঁড়ি। উঠেই সুন্দর সাজানো খাবার জায়গাটা, সেইখানে ডাইনিং টেবিলে বসে সকালের জলখাবারের থালা সামনে নিয়েই “বা” সুর ধরেন। আমি তখন নতুন শাড়ির কুঁচি, কোলে ছেলে, বাঁ হাতে মেয়েকে নিয়ে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠি। সারা বছরের সমস্ত মালিন্য, সব ক্ষোভ , সব সব ধুয়ে যায়ে সেই সুরের সঙ্গে... আমার তখন আবার মনে পড়ে, সেই এক শারদীয়ার সকাল। ঠাকুর ঘরে বসে আছি আঁচল টেনে নিয়ে। বর্ণনা শুনতে পাচ্ছি। অতসী কুসুম বর্ণা। চাঁচর চুলের বাহার পিঠে। সবুজ পাতায় ছলকানো রোদের মাঝে কেমন মানিয়েছে সে মেয়েকে। বর্ষার জলে ধোয়া ঝকঝকে সবুজ দুর্বার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ঘাসের ওপর তারার মত ফুটে রয়েছে কমলার ছিটে দেওয়া ঝরা শিউলি ফুলেরা। সব মিলিয়ে একটি পরিপূর্ণ ছবি। পুরোহিত মশাই বললেন, ঐ ছোট মেয়েটি ষষ্ঠী দেবী। হবেওবা। তাকে দেখতে পেয়ে আমার ভারি আনন্দ হয়েছিল। আমি দুহাত পেতে বললাম, "এসো মা গো,সোনা মেয়ে। আয় রে কোলে নিই।" আমার তো তুমিই উমা রানী। আমার মা জননী যেমন চিরকাল আমায় তাঁর উমারানী বলেন। সেই নরম মত গরম মত মেয়েটা টুপ করে আমার কোলের মধ্যে বসে পড়ে বলল, "মা"। সেই শরতের সোনা রোদ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। মনে হল আকাশ বাতাস ও হাসছে। নীল টুকটুকে আকাশ বারান্দা দিয়ে ঘরের মধ্যে মুখ বাড়িয়ে দিল। সেও হেসে বলল, "মা"। আমি ছোট্ট আলোর কুচিকে বুকে জড়িয়ে বললাম, "এসো এসো সবাইকে আদর করি।সব্বাই ভাল থাকো। " এমন সময় গুটগুট করে পায়ে পায়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা হাফপ্যান্ট পরা দস্যু হাওয়া ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে বলল, " আর আমি? আমি কেউ হই না বুঝি?" ও বাবা! কি তার গাল ফোলানো, ঠোঁট ফোলানো অভিমানের ঘটা। সব আলো টালো ঢেকে এক পশলা ছাই ছাই মেঘ দেখি ঝুরঝুর করে বৃষ্টি ছড়াচ্ছে। আমার মা-জননী তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে বললেন, "ওমা সেকি কথা। তোমার জন্যেই তো আমরা সবাই হাপিত্যেস করে বসে আছি। তুমিই তো আমাদের সোনার গোপাল। তোমায় ছাড়া ঘর যে শুনশান হয়ে থাকে।" সবার মুখে মিষ্টি হাসি। বাবামশাই তাঁর ভরাট গলায় বলে উঠলেন," আর পাবো কোথা,দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা "। পেঁপে গাছ, পেয়ারার ডাল, নিম গাছের ইকড়ি মিকড়ি পাতারা আল্লাদে অস্থির। বাবাই বাইরের ঘরে আগমনী সুর ভাঁজতে লাগলেন, গিরি গণেশ আমার শুভ কারী আমি পুজে গণপতি পেলাম হৈমবতী আমার উমার কোলে গণেশ যেন শশীর কোলে শশী...... সেই থেকে জানি বিল্বমূলে বোধন হয়ে সেই যে লাল চেলী জড়ানো ছোট্ট মেয়েটি ঘুম চোখে উঠে হাসে, সেই উমা রানী আমাকেই মা বলে ডাকে। আমিও তাকে বলি সোনা মা, আনন্দময়ী, এসো এসো, ভাগ্যিস তুমি আমায় মা বলে ডেকেছিলে। তাই চেষ্টা করে চলেছি, যত যত ব্যথা, কালি, ক্লেশ, মাত্রাহীনতাকে টপকে যেতে, মুছে ফেলতে আলো দিয়ে। তবেই না সেই ডাক শুনতে পাবো। ....মা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register