Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || আমার উমা || 26য় শঙ্কর তালুকদার

maro news
T3 || আমার উমা || 26য় শঙ্কর তালুকদার

আমার উমা

ব্রহ্মা,বিষ্ণু ও মহেশ্বর সৃষ্টি-পালন-লয়ের তিন দেবতাএই মহা ব্রহ্মান্ড ধারণ করে চলেছেন হিন্দুশাস্ত্র সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী।ইতিমধ্যে ধ্যানের দ্বারা দেবগণকে সন্তুষ্ট করে, তাঁদের আশীর্বাদবলে মহিষাসুর পরম বিক্রমশালী হয়ে ওঠে।তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সব দেবদেবীরা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন।তখন সব দেবদেবীর সম্মিলিত শক্তিতে দুর্গার সৃষ্টি।জ্যোতিশাস্ত্র অনুযায়ী পৃথিবীর দশটি দিকের প্রতিভূ হিসেবে তিনি দশভূজা এবং প্রতিটি ভুজের নিমিত্ত এক একটি অস্ত্র প্রস্তুত করা হয়। বিষ্ণুর বোন বা শিবের স্ত্রী- পার্বতী, দুর্গা রূপে মহিষাসুরকে বধ করেন। তিনি আদি পরাশক্তি, অন্যান্য দেবী তাঁর অংশ হতে জাত। কয়েকটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে দাক্ষায়নীকে ( শিবের প্রথম স্ত্রী) উমা বলা হলেও, রামায়ণে পার্বতীকে উমা বলা হয়েছে।পার্বতীর সহস্র নামের মধ্যে দুর্গা, উমা ও অপর্ণা নামটি সর্বাধিক প্রচলিত। অর্থাৎ আমার উমাকে ঠিক কোন রূপে চিত্রিত করা সঠিক সে সংশয় থেকেই যায়। উমা যখন দুর্গা তখন তিনি দুর্বার হিংসার প্রতীক। তিনি দুর্গতি বা সংকট থেকে আমাদের রক্ষা করেন এবং অসুরকে বধ করেন। কিন্তু উমা আবার মাতৃত্বের প্রতীক।তিনি গর্ভে ধারণ করেন ও পালন করেন। তিনি শান্ত, সৌম, ধীর, স্থির মাতা।তিনি যখন দয়াময়ী তাঁর পরিচয় কাত্যায়নী, অন্নপূর্ণা, মহাগৌরী,কমলা, ভুবনেশ্বরী ইত্যাদি।কিন্তু যখন ভয়ংকরী তাঁর পরিচয় দুর্গা, কালী, চামুন্ডা, তারা, চন্ডী ইত্যাদি। ভারতবর্ষের নানান প্রদেশে ও বাংলাদেশে এই পূজা মহোৎসবের ন্যায় পালন করা হয়।এমনকি বিশ্বের যেখানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করেন এই উৎসব অতি উৎসাহের সঙ্গে পালন করেন। এই উৎসবের দামামা বেজে ওঠে মহালয়ার দিন থেকে, অর্থাৎ আঁধার থেকে আলোক উত্তরণের লগ্ন থেকে।পূর্বপুরুষদের নামে তর্পণ করে সেই যাত্রার শুরু। ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে আশ্বিন মাসের মহা ষষ্ঠী তিথিতে তাহেরপুরে অকাল বোধনের মাধ্যমে রাজা কংস নারায়ণ দেবী দুর্গার প্রতিমা গড়ে প্রথম দুর্গাপুজোর সূত্রপাত করেন। আবার অনেকের মতে রাজা ভবানন্দ মজুমদার প্রথম এই পূজা শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক আঙ্গিক দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িত হয়।যেমন ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই অক্টোবর স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপুজোর অষ্টম তিথিতে প্রথম কুমারী পূজার সূচনা করেন। প্রাচীন কাল থেকেই দুর্গাপুজোর সময় চন্ডী ও মঙ্গলচন্ডী পাঠের রীতি চলে আসছে। এই চন্ডী পাঠের তথ্য অনুযায়ী দুর্গা সব দেবদেবীর শক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছেন, এটা কাল্পনিক ধারণা ছাড়া আর কিছু নয়।বরং চন্ডী হচ্ছেন মহাকালী, মহালক্ষ্মী ও সরস্বতীর সমন্বয়। আর সেই চন্ডীই হচ্ছেন দুর্গা। আরও মজার ব্যাপার হল, চন্ডীতে মহিষাসুর বধের কোনও উল্লেখ নেই। আছে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের কথা। নিশুম্ভ পার্বতী বা দুর্গাকে বলেন তোমাদের নীতির ঠিক নেই। তোমরা কতজন মিলে আমার ভাইকে মেরেছ। এর উত্তরে দুর্গা যা বলেন, তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসল সত্য। তিনি বলেন, কে বলেছে আমরা অনেকে মিলে শুম্ভকে মেরেছি।আমি এক এবং অদ্বিতীয়।জগতে নানান রূপে আমি বিদ্যমান। অর্থাৎ যিনি পার্বতী তিনিই দুর্গা, তিনিই উমা, তিনিই অপর্ণা এবং তাঁর আরও বিবিধ রূপ। প্রতীকী ভাব হল, অন্যায় যখন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে সব শ্রেণীর মানুষ এক হলে তার বিনাশ অবশ্যই সম্ভব। অসুরকে বধ করা হয়েছে সকল শ্রেণীর প্রতিবাদের সমন্বয়ে। আমার উমার তাই আধারের শেষ নেই। তিনি ভয়ঙ্কর হয়েও সুন্দর, ধ্বংসের প্রতীক হয়েও রক্ষাকর্তা এবং মাতার ন্যায় স্নেহশীল।সহজ কথায় তিনি আমাদেরই ভাব ধারণার প্রকাশ- আমার উমা ঘুড়ি হাতে ছুটছে মাঠে ঘাটে, আমার উমা ঘরের কোণে খেলনা পাতি হাতে, আমার উমা মুচকি হেসে বসছে আমার পাশে, খড়্গ হাতে আমার উমা ফুঁসছে দেখ রাগে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register