Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণে রোমাঞ্চ ধারাবাহিকে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩০)

maro news
ভ্রমণে রোমাঞ্চ ধারাবাহিকে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৩০)

তীর্থভূমি বীরভূম, ভ্রমণ তীর্থ বীরভূম

হান্টার সাহেবের 'The Annals of Rural Bengal' গ্রন্থে রামনাথ ভাদুড়ির আগমন এবং মন্দির নির্মাণের উল্লেখ আছে। কিন্তু সেখানে বলা হয়েছে যে, ১৭৯৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত 'প্রদানের কারণে রামনাথ ভাদুড়ি এই অঞ্চলে এসেছিলেন। কিন্তু এই তথ্যটি সঠিক নয়। কারণ বিভাণ্ডীশ্বর শিব মন্দিরের প্রধান ফটকের মাথায় যে মন্দির লিপিটি আছে তার অর্থ হল এই যে, ১৬৭৬ শকাব্দ অর্থাৎ ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে রামনাথ ভাদুড়ি এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। ওই লিপিতেই আরো উল্লেখ আছে যে, ভাণ্ডীশ্বর শিবের দর্শন পেয়ে একান্ত ভক্তিতে এই ইটের মন্দিরটি নির্মিত হল। প্রায় এক মানুষ সমান উচ্চতায় মন্দিরটির ভিত। তার উপরে মন্ডপ। প্রধান দরজা দিয়ে নিচে নেমে গর্ভগৃহ। মন্দিরের উত্তর দিকে ভাগে একটি কুণ্ড ছিল, এখন নেই। উত্তর মুখে সামান্য পায়ে হাঁটা পথ অতিক্রম করলেই ময়ূরাক্ষী নদীর দেখা মেলে। মন্দিরের সামনেই রয়েছে ভৈরবনাথের পবিত্র আশ্রম। একটি বিশাল পাকুড় গাছের নিচে বটুক ভৈরব অবস্থান করছেন। অনেকগুলি ভাঙ্গা মূর্তির অংশ ছড়িয়ে আছে এখানে সেখানে একটি প্রবাদ বচনে উল্লেখিত আছে------"বীরভূমৌ সিদ্ধনাথো রাঢ়ে চ তারকেশ্বরঃ।" তবে বীরভূমের এই বিখ্যাত সিদ্ধ নাথ ভান্ডীর বনের সিদ্ধনাথ কিনা সে বিষয়ে মতভেদ আছে। কারোর কারোর মতে, ময়ূরেশ্বর থানার অন্তর্গত কোটাসুরে। যে অনাদি লিঙ্গ সিদ্ধনাথ শিব অবস্থান করছেন, তিনি বীরভূমের সেই প্রমাণ প্রসিদ্ধ শিব। বীরভূমের মন্দির গুলির মধ্যে নানুর থানার অন্তর্গত চারকোল গ্রামে তিনটি সুন্দর মন্দির আছে। এর মধ্যে দুটি মন্দিরের ফলক বা প্রতিষ্ঠালেখ খুব তাৎপর্যপূর্ণ। মন্দির নির্মাণের খরচ ও স্থপতিদের নাম উল্লেখ করা আছে ওই লিপিতে। নানুর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পূর্বে , নানুর থানার অন্তর্গত চারকলগ্রাম একটি ব্রাহ্মণ প্রধান গ্রাম। এই গ্রামের মন্দির তিনটির মধ্যে প্রথমটি ব্রাহ্মণপাড়ায় ইটের নির্মিত এবং পোড়ামাটির সামান্য অলংকরণযুক্ত পূর্বমুখী ভগ্ন নবরত্ন মন্দির। দ্বিতীয়টি চট্টোপাধ্যায় পাড়ায় অবস্থিত, পোড়া মাটির অলংকরণ যুক্ত, পূর্বমুখী, পঞ্চরত্ন শিব মন্দির, যা মন্দির গাত্রের লিপি ফলক অনুসারে ১২৪৫ বঙ্গাব্দে ৺দেবী চরণ চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই বহুল অলংকৃত দেবালয়ের নির্মাণ খরচ যে বর্তমানের তুলনায় কত অল্প ছিল তা গর্ভ গৃহের পশ্চিম দেওয়ালে উৎকীর্ণ একটি লিপিতে উল্লেখ করা আছে। লিপিটি এইরকম:--"শ্রী শ্রী৺উমাকান্তেশ্বর শিবায় নম ঃ। শ্রীদেবীচরণ চট্টোপাধ্যায় স্থাপীত। সন ১২৪৫ সাল তারিখ ১১ আসাড়। এই কারখানার খরচ অনেক দফায় ৪৪৫ টাকা সাত আনা।" এই মন্দিরের সম্মুখভাগে নিবদ্ধ পৌরাণিক, সামাজিক ও কৃষ্ণলীলা বিষয়ক পোড়ামাটির বহুমুখী ভাস্কর্যের শিল্পশৈলী কিন্তু আধুনিক ও প্রকৃতির। তৃতীয় মন্দিরটি এই মন্দির সংলগ্ন দক্ষিণে অবস্থিত সমতল ছাদের এক পাকা চন্ডী মন্ডপ। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা লিপিটি তথ্যবহুল ও অভিনিবেশযোগ্য। "শ্রী শ্রী৺দুর্গা শিব শ্রী চরণ সরনং। শ্রীদেবীচরণ দেবশর্মনং তদ পুত্রা ঃ। শ্রী হরি নারায়ন দেব শর্মনং উত্তরাধিকারীগণ সকলে ভক্তিপূর্বক নির্বিরোধে। সারদিয় মহা পূজা করিবে। এই চন্ডী মন্ডপ নির্মিত শ্রী ব্রজনাথ রাজ ও শ্রী গোপীনাথ রাজ সাং সাওতা ।সন ১২৬৬ সাল। তারিখ ১৩ আস্বীন বুধবার" চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register