Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৯৪)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৯৪)

সুমনা ও জাদু পালক

রাজা রুদ্র মহিপালের আদেশে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলো ,পরীরাণীর চাহিদা মত ঢাকা সমেত একটা মাঝারি আকৃতির তামার ঘট । এক টুকরো লাল রঙের বস্ত্র খন্ডও এল সেই সঙ্গে। তখনো হূডুর জ্ঞান ফেরেনি। পরীরানী তার মায়াদণ্ডটি হূডুর দিকে তাক করে বেশ জোরে জোরে কি যেন মন্ত্র বলতে শুরু করলেন সুর করে, কিন্তু দুর্বোধ্য ভাষায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মায়া দন্ডের মাথা দিয়ে ঝর্ণার মত জলের ধারা নির্গত হতে শুরু করল। সেই জল তীব্র গতিতে গিয়ে পড়ল হূডুর মাথায় ,চোখে মুখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে পেল হূডু। সে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। পরীরানী হেসে বললেন, চেষ্টা করে কোন লাভ নেই হূডু, আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না তুমি। আমার মায়া দন্ড থেকে নির্গত মায়া জলের প্রভাবে তোমার সমস্ত শরীর ভারী হয়ে গেছে। হূডু এবার হাতজোড় করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, আমার কৃতকর্মের জন্য আমি তোমাদের সবার কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা চাইছি। আমার জাদু দণ্ড তোমরা কেড়ে নিয়েছো, ভেঙে ফেলেছো। এখন তো আর কিছু করার শক্তি আমার নেই। তাহলে আমাকে ছেড়ে দিচ্ছ না কেন? আমি কথা দিচ্ছি, আমি কক্ষনো আর কারো ক্ষতি করব না। হূডুর কথা শুনে পরীরানী উচ্চৈস্বরে হেসে উঠলেন। হূডু আবার করুণ স্বরে বলল, তুমি হাসছো কেন পরীরানী ?আমাকে মুক্ত করে দিলে আমি আর কক্ষনো কারো ক্ষতি করব না, কথা দিচ্ছি। রাজা রুদ্রমহিপাল বললেন, তুমি এ যাবৎ কাল কক্ষনো কারুর কোনো উপকার করো নি হূডু, নিজের স্বার্থ চিন্তা করে গেছো শুধু। নিজের স্বার্থ পূরণের জন্য অন্যের ক্ষতি করেছ কেবল। কোনদিন কারো মঙ্গল চিন্তা করো নি তুমি। অথচ তুমি সাধনার মাধ্যমে যে ক্ষমতা অর্জন করেছিলে, তা জগতের কল্যাণকর্মে লাগাতে পারতে। তা না করে তুমি শুধু অন্যের ক্ষতি করেছ আর অহংকারে মত্ত হয়েছো। আজকে এই অবস্থায় পড়ে তুমি যে কথা বলছো, তা শুধু কথার কথা। পরীরানী বললেন, এখন আর ওসব কথা বলে কোন লাভ হবে না হূডু। -----আমি তোমাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইছি, আমাকে মেরো না তোমরা। ------না হূডু,তোমাকে মারবো না, তোমাকে বন্দী করে রাখবো আমি। তবে হ্যাঁ, বন্দী করার আগে তোমাকে আমি একটা শেষ সুযোগ দিতে চাই। ------কী সুযোগ ? -----তুমি যদি দেব হরিহরের মূর্তির কাছে গিয়ে,ওঁর চরণ স্পর্শ করে শপথ নিতে পার যে, তুমি আর কখনো কোন অন্যায় কাজ করবে না, তাহলেই দেখবে মুক্ত হয়ে গেছো তুমি। -----অসম্ভব! ------কী অসম্ভব হূডু? ------আমি তোমাদের ওই মাটির পুতুলকে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি অন্ধকারের দেবী 'কালভৈরবী' মাতার শক্তিকে। শুধু তাঁর সাধনা করেই আমি এতখানি শক্তি লাভ করেছিলাম। তিনি যদি দয়া করেন তো আমি আবার আমার শক্তি ফিরে পাবো। তাই তোমাদের অনুরোধ করছি যে, ছেড়ে দাও আমাকে। আমাকে আবার সাধনা করে শক্তি অর্জন করতে হবে। -----সাধনা করার জন্য কোথায় যেতে চাও হূডু? -----আমি পবিত্র জর্ডান নদীতে স্নান করে মাউন্ট নেবোর গুহাতে তপস্যা করতে চাই। ------তপস্যার শেষে যে শক্তি লাভ করবে তা দিয়ে কি করতে চাও তুমি? ------আমি এই পৃথিবীর অধীশ্বর হতে চাই। আমি চাই , সমস্ত রাজা-বাদশা সুলতানরা আমার আদেশ মেনে চলুক। হূডুর কথা শুনে আবার জোরে হেসে উঠলেন পরীরানী। রাজা রুদ্র মহিপাল বললেন, এর অর্থ এই যে, তোমার মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি হূডু। আমি জানিনা পরীরানী তোমাকে নিয়ে কি করবেন। তবে আমি যেমন তোমার মৃত্যু চাইনা, তেমনি চাইনা তুমি আবার কোন মানুষের কোন ক্ষতি করার সুযোগ পাও। পরীরানী বললেন, আমিও আপনার সঙ্গে সহমত হে রাজন। আর সে কারণেই তামার ঘট এবং লাল বস্ত্র খন্ড আমার প্রয়োজন। -----কিন্তু ওগুলো নিয়ে কি করবেন? ------একটু অপেক্ষা করুন, সব দেখতে পাবেন। পরীরানী এবার হূডুকে বললেন, তুমি এমন কোন মানবিক গুণ আজ পর্যন্ত দেখাও নি, যাতে তুমি আর মানুষ থাকতে পারো। আমি তোমাকে আমার এই মায়া দণ্ডের সাহায্যে অন্য জীবে পরিবর্তিত করে দেবো। বল কোন জীব হতে চাও তুমি, স্থলচর না জলচর ,না উভচর? ------আমি মানুষ রূপেই থাকতে চাই। ------তা আর হবেনা হূডু। বেশ, তুমি যখন কিছু বললে না, আমি তোমাকে উভচর জীবে পরিণত করে দিচ্ছি। কথা শেষ করেই পরীরানী আবার তাঁর মায়াদন্ড হূডুর দিকে তাক করলেন। এবার মায়াদণ্ড থেকে বেরিয়ে এল কটু গন্ধযুক্ত নীল রঙের জল। সেই জল হূডুর গায়ে লাগতেই হূডু একটা ছোট্ট কুৎসিত ব্যাঙে রূপান্তরিত হল। পরী রানী এবার তামার ঘটটা তার সামনে ধরতেই ব্যাঙটা টুক করে ঢুকে গেল ঘটের মধ্যে। পরীরানী ঢাকনা দিয়ে ঘটের মুখ বন্ধ করলেন। তারপর লাল বস্ত্রখন্ড দিয়ে ঘটের মুখটা ভালো করে বেঁধে দিলেন। এরপর তার হাতের দন্ডটি মন্ত্র পড়তে পড়তে ঘটের ওপরে ঘোরাতেই লাল বস্ত্র খন্ডটি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। সেই আগুন নিভতেই দেখা গেল যে, ঘটের মুখ নিশ্ছিদ্র রূপে বন্ধ হয়ে গেছে, যেন লাক্ষা দিয়ে সম্পূর্ণ সিল করা হয়েছে ঘটের মুখ। পরীরানী এবার রাজা রুদ্র মহিপাল কে বললেন, মহারাজ, এইবার এই ঘটটি আপনার রাজ্যের সবচেয়ে দুর্গম এলাকায় যে নদী প্রবাহিত হচ্ছে, তার নিচে কোথাও ডুবুরি দিয়ে পুঁতে দেবার ব্যবস্থা করুন। আর হ্যাঁ, সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে সেই জায়গায় বুদ্ধিমান এবং সাহসী কিছু সৈনিক দিয়ে চব্বিশ ঘন্টা পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। কেউ যেন কখনো হূডুর হদিস না পায়, সেটা নিশ্চিত করবেন। -----তাই হবে হে পরী রানী। চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register