Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় আলোক মণ্ডল

maro news
T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় আলোক মণ্ডল

লাটাই

সন্ধ্যার ঝিঁঝি পোকার ডাক থেমে গেলে প্রেম গুলো বাউন্স ব্যাক করল, আনন্দ গুলো করল না।করে না,করে না জানি কখনও।তবু কোন এক ঝিরি বৃষ্টির দিনে যখন গাছের পাতাগুলি নিজঝুম মন মরা তখন জানালার শিক ধরে দৃষ্টি উড়িয়ে দিই,ফিরে আসে কৈশোরেরে সেই দিন গুলি। রঙ-বেরঙের কত ঘুড়ি নীল আকাশ ছুঁয়ে।হরতন ইস্কাপন বুকে। আকাশে ঘুড়ির ঝাঁক।পেট কাটি,চাঁদিয়াল, মোমবাতি, মক্কা - কত কি নাম তাদের।একটি ঘুড়ি আর একটি ঘুড়ির কাছে যাচ্ছ আবার সরে আসছে আবার যাচ্ছে তারপর শুধু ঘুরতে ঘুরতে দূরে চলে যাচ্ছে।একটু পরেই ভো- কাট্টা চিৎকার ওপারের ছাদ থেকে।মনমরা ঘুড়ি মরা মাছের মতো ভাসতে -ভাসতে কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে! নীচে এক দঙ্গল ছেলে ঝাঁটি বেড়া নিয়ে সেই পড়ন্ত ঘুড়ির পিছুপিছু দৌড়ে যখন দেখল ঘুড়িটা পড়ল না আটকে রইল ইলেকট্রিক তারে অথবা বড় গাছের মাথায় তখন কী কান্না ঘুড়ি লুটতে না পারার কান্না। ভীষণ কেঁদে ছিলাম সেদিন। লম্বা একটা লেজ ঘুড়ির পেছুনে বেঁধে, বাঁ দিকে কান্না বেঁধেও যখন ওড়াতে পারিনি।বারাবার লেজ কেটে ছোট করি ঘুড়ি কিন্তু ওড়ে না। তখন ক্লাস সেভেন আরও ছোট্ট বোনটি ঘুড়ি ধরে উড়িয়ে দিল আর আমি লাটাইয়ের সূতো ছাড়তে ছাড়তে মাঠের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে দৌড়চ্ছি তো দৌড়চ্ছি ঘুড়ি কিন্তু উপরে উড়ল না,বারবার গোত্তা মেরে পড়ে যাচ্ছিল ঘুড়ি। হাল ছাড়েনি ছোট্ট বোনটি, উড়িয়ে দিচ্ছিল।তাতেই তার কী আনন্দ! আমার কিন্তু চোখ ছলছল। কৈশোর পেরিয়ে সবে যুগসন্ধি। ভালো লাগে খুউব দু'তিনটা বাড়ির পাশে ফর্সা রঙের পষ্পিতাকে।টোঁটে ছিল কালো তিল, ডাগর দু'টি চোখে ছিল পাথরার জল। ও' আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেই বুকের থেকে নেমে আসতো হিমশীতল বারি, কেঁপে উঠত সারা শরীর। ওরও লাজুক চোখ খুঁজতো আমাকে জানি,সবুজ ঘাসে,কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়। যখন হেঁটে যেত নূপুরের ধ্বনি তুলে আমার পাশ দিয়ে বুকে মাঝে বেজে উঠত অজস্র শব্দের কলধ্বনি তবু মুখ ফুটে বলতে পারিনি কোনদিন,' পুষ্পিতা আমি তোমাকে....' একদিন ভাবলাম, ঘুড়ির গায়ে লিখে দিলে কেমন হয়! নিশ্চয়ই ও' দেখতে পাবে- যখন ভো-কাট্টা ঘুড়ি ছিঁড়ে পড়বে ওদের বাগান বাড়ির গাছে আর ও' কুড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে পড়ার ঘরে! সন্তর্পণে, যখন কেউ থাকবে না,পড়ার ঘরের জানালা- দরজা বন্ধ করে ও' তখন নিশ্চয়ই আমার মনের গোপন কথাটি পড়ে ফেলবে! তখন কী যে হবে! আকাশ থেকে ঝরে পড়বে হয়তো অজস্র তারা না কি মাটি ভেদ করে উঠে আসবে সিগ্ধ ফোয়ারার জলরাশি,কি জানি! ও কি ঘুড়িটা বুকের উপর জড়িয়ে ধরে গান গেয়ে উঠবে, না কি নেচে উঠবে, 'শ্রাবণের গগনের গায়, বিদ্যুৎ চমকিয়া যায়...? জানি না! জাবি না! যেমন ভাবনা তেমনিই কাজ।সত্যি সত্যিই একদিন ঢাউস একটা ঘুড়ি কিনে এনে স্কেচ পেন দিয়ে ঘুড়ির গায়ে খুব যত্ন করে লিখে দিলাম আমার মনের কথাটি।যত্ন করে পুষ্পিতার নাম আর আমার ঠিকানা লিখলাম,আঁকলাম এক তীরবিদ্ধ লাল হৃদয়।গোপন কথাটি আর থাকল না গোপনে।ভাসতে -ভাসতে উড়ে গেল আকাশে। একটা নীল রঙের ঘু্ড়ি তক্কে-তক্কে ছিল, শক্ত ধারালো কাঁচগুঁড়ির মাঞ্জা দেওয়া ঘুড়ি, পাক লাগিয়ে ধরল আমার ঘুড়ির সূতো। সুতরাং বাধ্য হয়েই সূতো ছাড়তে লাগলাম,ছাড়ছি তো ছাড়ছিই, ঘুরতে- ঘুরতে দুটো ঘুড়িই ক্রমশ অনেক দূরে ছোট্ট আাকার নিল তারপর হঠাৎ ভো -ক্কাট্টা। হ্যাঁ, আমারটাই বাঁধন ছিঁড়ে হারিয়ে গেল।কিন্তু এতো দূরে! এ পাড়ায় নয়, ও পাড়ায় নয়, অন্য আর এক পাড়ায়! কী করে কুড়িয়ে পাবে? কী করে পড়ে নেবে আমার না-বলা বাণীর আকুলতা! পুষ্পিতা, আমি যে কতবার বলতে চেয়েছিলাম, কতবার মনে মনে কাছে ডেকেছিলাম।কতবার বলতে চেয়েছিলাম আমার মনের কথাটি! ভো-কাট্টার চিৎকার কম হতেই ধ্বস্ত মন নিয়ে নেমে এলাম ছাদ থেকে। আবার ভয়ও গ্রাস করল সারা মন,শিউরে উঠলাম এই ভেবে,এই রে! যদি অন্য কেউ কুড়িয়ে পায়, যদি অক্ষত ঘুড়িটা নিয়ে সটাং চলে আসে পুষ্পিতার ঘরে? তাহলে কী হবে! তাহলে যে পিঠের চামড়া আস্ত রাখবে না, চাবকিয়ে চামড়া তুলে দেবে ওর বাবা! ভীষণ রাগী মানুষ। তবু এই ভেবে স্বস্তি পেলাম, যাক বাবা,কোথাও তো ওর পুরো নাম বা ঠিকানা লেখা নেই! আর পুষ্পিতা নামে কত মেয়েই তো আছে এ শহরে! এরকম সাত -পাঁচ ভাবতে -ভাবতে একদিন বিকেলে যখন রোদ পড়ে এসেছে,এক পশলা বৃষ্টির পর মেঘলা ভাঙা রোদ দূরের শালবনের মাথায় সোনা ঝরিয়ে দিচ্ছে,লাটাই-ঘুড়ি নিয়ে এলাম ফুটবল মাঠের ধারে ঐ কৃষ্ণচূড়া গাছটার তলে।ফুরফুর বাতাসে আমার ঘুড়ি উড়ে চলেছে মুক্ত আকাশে,আমারটি ছাড়া আর কোন ঘুড়ি নেই আকাশে, ভো-কাট্টার ভয় নেই। সূতো ছেড়ে চলেছি তো চলেছিই... এক্কেবারে কানের কাছে এসে কে যেন বললে,আলোক দা একবার লাটাই টা আমায় দেবে? আমি ওড়াবো! তাকিয়ে দেখি,পুষ্পিতা।তাড়াতাড়ি আমি লাটাইটা ওর হাতে তুলে দিয়ে মনে মনে বললাম, আমার জীবন ঘুড়ির লাটাইটাও তুমি নাও না! আমাকে যেমন খুশী ওড়াও! তবে এবারও মুখ ফুটে বলতে পারলাম না সে কথা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register