Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

জন্মাষ্টমী স্পেশাল এ শম্পা সাহা

maro news
জন্মাষ্টমী স্পেশাল এ শম্পা সাহা

নতুন পুঁথি লেখা!

রাত বাড়তে বাড়তে যখন নিশুতি, যখন বাইরে অন্ধকারের মোটা চাদর গায়ে রাত মুখ লুকোচ্ছে, ভয়ে অপমানে! বৃষ্টি ফোঁটারা ঢেকে দিতে চাইছে সব দৃশ্যপট, যাতে কারো চোখে না পড়ে , এই রাত তার কোলে কী এমন লুকোতে চায়? কোনো শব্দ নেই, কোনো জীবন নেই, কোনো চলমানতা নেই,স্থবির সব! কীসের এ অপেক্ষা? বাইরে তুমুল বৃষ্টি! ঝড়ের দাপটে বড় বড় বৃক্ষরাজি এক বার মাটি লেহন করে আবার স্বস্থানে! সেই এক ভারী অদ্ভুত পবিত্র মুহূর্ত! আকাশে দেখা যায় না রোহিনী নক্ষত্রের উপস্থিতি, কৃষ্ণপক্ষের সেই ঘনঘোর রাত্রির সপ্তম প্রহর শেষে অষ্টম মুহূর্ত আগত! রোহিনী নক্ষত্র ও অষ্টমী তিথির মিলিত জয়ন্তী যোগে, মা দেবকী কেঁপে উঠছেন বারবার! তার স্ফিতোগর্ভ ধীরে ধীরে প্রশমিত! চারিদিকে অদ্ভুত শান্তি! দশদিক উদ্ভাসিত আলোর বন্যায় কংসের কারাগারের উঁচু প্রাকার বিলুপ্ত যেন! এই আলোয় মা দেবকী তাকালেন কারাগারের ছাদের দিকে! একি! বাইরে প্রবল বৃষ্টি অথচ মাথার উপরে আলোক ছত্র শিরে কে উনি?? শঙ্খ, চক্র, গদা,পদ্ম হাতে কে ওই বিপুল জ্যোতিধর, যার আবেশে দেবকী ভুলে গেলেন, তার অষ্টম গর্ভজ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে! শ্রী বাসুদেব ভুলে গেলেন, এই অষ্টম গর্ভজ সন্তান নিয়ে সেই অমোঘ দৈববাণী! ভুলে গেলেন, এই শিশু সম্পর্কে সেই নিষ্ঠুর,অত্যাচারী কংসের সতর্কবার্তা! এ তো স্বয়ং শ্রী বিষ্ণু ! সমগ্ৰ কারাগার, ঝড়ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ নিশুতি রাত সাক্ষী রইলো বিশ্ব জগতের পটপরিবর্তনের সূচনা মুহূর্তের! হঠাৎ তিক্ষ্ণ কন্ঠে শিশু কান্নার আওয়াজে সচকিত সদ্য সন্তানপ্রাপ্ত যুগল! এ কী ঈশ্বরিক মায়া! উঁচু পাথর প্রাকারে কই সে দেবালোক? কই সে দেবরূপ? কই সে পদ্মনাভ? সদ্যোজাত শিশুর কান্না তীব্রতর হয়! সার ফিরে কেঁপে উঠেন জনিতৃদ্বয়! এই বার কী হবে? কী করে বাঁচাবেন এই শিশুকে! শিশু তো রোদন ভুলে ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নেড়ে যেন মহরা দিচ্ছে বিশ্ব নিয়ে খেলবার! এই কি সেই? এই কি অত্যাচার বিনাশকারী, কংস হন্তা? মা দেবকী, শিশুর মুখপানে চেয়ে স্নেহ রসসিক্ত, কিন্তু বাসুদেবের সে উপায় নেই! না! না! আর দেরি নয়! এখনি এই শিশুকে রক্ষা করতে হবে, বাঁচাতে হবে আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে! কিন্তু কীভাবে? কীভাবে তা সম্ভব?" ইচ্ছে করে কারাগার প্রাচীরের পাথরে মাথা কুটি! যদি কোনো উত্তর পাই!" -এতো বিচলিত হয়ো না বাসুদেব! এ ভাবনার সময় নয়! এ কর্মের সময়! এখুনি এ শিশু রেখে এসো তোমার পরম মিত্র ও ভ্রাতা নন্দরায়ের ঘরে! তার স্ত্রী যশোদার গর্ভে যে সুলক্ষণা শিশুকন্যা জন্মেছে, তাকে নিয়ে এসে সঁপে দাও দেবকীর ক্রোড়ে! কী ভাবছো অত? শীঘ্র যাও! সম্বিত ফিরে দেবী যোগমায়ার বাণীতে উদ্যম গ্ৰহন করেও নিরস্ত বাসুদেব। -কিন্তু দেবী, বাইরে যে প্রবল প্রহরা! ঝড় বৃষ্টিতে এ শিশুকে নিয়ে কী করে আমি যমুনা পার, গোকুলে পৌঁছাবো? -সব পূর্বেই রচিত বাসুদেব! আমার মায়ায় তুমি ব্যতিত, সমগ্ৰ বিশ্বচরাচর এখন গভীর ঘুমে! কোনো মনুষ্যকুলসদস্য এখন জাগ্ৰত নয়! সময়, যে পবিত্র কর্তব্য তোমার হাতে অর্পণ করেছে তাতে আর দেরী কোরো না! বাসুদেব একবার পরম মমতায় তাকায় ঘুমন্ত দেবকীর দিকে! সন্তানোৎপাদন জনিত ক্লান্তি, নাকি দেবী যোগমায়ার মায়ায়, তার দুই চোখ বোজা, মৃদু মৃদু কাঁপছে নাসাপল্লব, স্ফীতোবক্ষ মৃদু মৃদু প্রসারিত! আহা! কী পরম প্রশান্তি সেই মুখে! এক হাতে আঁকড়ে ধরেছে শিশু, আর অন্য হাত অবহেলায়! -আহ! বাসুদেব! এত বিলম্ব কেন? দেবী যোগমায়ার কন্ঠে ভর্ৎসনা যেন! না আর দেরী নয়। বাসুদেব নিজের মায়া, মমতা, পিতৃত্ব সব ছুঁড়ে ফেলে এগোলেন শিশু কোলে গোকুলের দিকে! গভীর রাত্রি, উত্তাল যমুনা, প্রবল ঝড়ে, ঘুমন্ত বিশ্বচরাচরের এক জাগ্ৰত যাত্রী মানবকুলের রক্ষাকর্তাকে বাহুর বাঁধনে আগলে পা বাড়ালেন দেবী যোগমায়া নির্দেশিত পথে! মেঘমন্দ্রিত আকাশ থেকে বারিধারা, অমৃতধারা হয়ে যেন ঝরে পড়তে লাগলো বাসুদেব আর তার সদ্যোজাত পুত্রসন্তানের উপর! দূরে,অন্য কোথাও, অন্য কোনো নক্ষত্ররাজিতে, অন্য কোনো ঈশ্বর তার পুঁথিতে লিখে রাখলেন, "পৃথিবীতে আজ ঈশ্বরের জন্ম হলো, এই শুভ মুহূর্তে! যতদিন এ মহাবিশ্ব আছে ততদিন, এই মাহেন্দ্রক্ষণ বন্দিত হবে, জন্মাষ্টমী হিসেবে"!

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register