Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ২২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ২২)

কেমিক্যাল বিভ্রাট 

সাত

সক্কালবেলায় চোখ খুলতেই ঔপমানব দেখলেন চোখের সামনে কতগুলো সাংকেতিক চিহ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে। চিহ্নগুলো ভারী অদ্ভুত আকারের। না-গোল। না-চৌকো। না-ত্রিকোণ। প্রত্যেকটার থেকে প্রত্যেকটা আলাদা। কেমন যেন এবড়ো খেবড়ো। এগুলো যে কীসের চিহ্ন খুব ভাল করে দেখেও উনি তা বুঝতে পারলেন না।

আগেও এ রকম হত। আগে মানে অনেক আগে। এত আগে যে মাঝে মধ্যেই ওঁর মনে হয়, এ জন্মের নয়, ওটা গত জন্মের বা তারও আগের কোনও জন্মের ঘটনা। ওঁর বয়স তখন কত হবে! খুব বেশি হলে দু’আড়াই কি তিন বছর। ওঁর বাবা ওঁকে বলেছিলেন, প্রত্যেক দিন স্নান করে উঠে আগে সূর্যদেবকে প্রণাম করবি। তার পর বাকি সব কাজ।

বাবার সেই কথা মতো প্রথম যে দিন উনি প্রণাম করতে গেলেন, দেখলেন সূর্যের রশ্মি থেকে কতগুলো চক্কর বক্কর নাচতে নাচতে তাঁর সামনে এসে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করতে লাগল। কখনও লাফাচ্ছে তো কখনও ডিগবাজি খাচ্ছে। কখনও আবার জিমন্যাস্টিক দে‌খাচ্ছে। উনি বুঝতে পারলেন না ওগুলো কী! কী করেই বা বুঝবেন, তখনও যে তাঁর হাতেখড়ির বয়সও হয়নি।

পরে, তাঁর বাবা যখন তাঁকে স্লেট-পেনসিল কিনে এনে দিলেন, বড় বড় করে অ আ ই ঈ লিখে দিলেন হাত বোলানোর জন্য। দিয়ে, স্কুলে যাওয়ার জন্য ভেতর ঘরে তৈরি হতে যেতেই সেই অক্ষরগুলির দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রথমেই জল-ন্যাকরা দিয়ে সেই অ আ ই ঈ-গুলি মুছে দিলেন ঔপমানব। তার পর যে চিহ্নগুলি তাঁর চোখের সামনে এসে নানা রকম কসরত করে, লাফায়-ঝাপায়, সেই চিহ্নগুলোর আদল মনে করে করে আঁকাবাঁকা হাতে স্লেটের উপরে মোটামুটি একটা এঁকে ফেললেন তিনি।

ওঁর মা-র আর বাবার স্কুল একই সময়ে শুরু হলেও, যেহেতু মায়ের স্কুলটা একটু দূরে, তাই ওঁর বাবা বেরিয়ে যাওয়ার খানিকক্ষণ আগেই উনি বেরিয়ে যান। এই সময় দু’জনেই এত ব্যস্ত থাকেন যে, কেউ কারও সঙ্গে দু’দণ্ড কথা বলার মতো ফুরসতও পান না। যাঁর যখন সময় হয়, তিনি তাঁর মতো তৈরি হয়ে বেরিয়ে যান।

এবং তাঁদের অন্তত একজন না ফেরা পর্যন্ত শুধু তাঁদের একমাত্র ছেলে ঔপমানবকেই নয়, গোটা সংসারটারই পুরোদস্তুর দেখভাল করেন তাঁদের বহু দিনের পুরনো এক কাজের মাসি। বলতে গেলে এই সংসারের হাল তিনিই ধরে রেখেছেন।

বেরোবার আগে একেবারে বাঁধা-ধরা গতে প্রত্যেক দিন দোরগোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে, যিনি পরে বেরোন, তিনি কাজের মাসির উদ্দেশে হাঁক পেড়ে বলে যান, আসছি গো, দরজাটা দিয়ে দিয়ো।

কাজের মাসি কিছুতেই বুঝতে পারেন না, একই কথা এই ভাবে রোজ রোজ বলার কী আছে! ওঁদের এই গা ছাড়া ভাব দেখে তাঁর মনে হয়, ওঁরা সংসার করছেন ঠিকই, কিন্তু সংসারের প্রতি তাঁদের সে রকম কোনও মন নেই। ভীষণ উদাসীন। দু’জন দু’ঘরে বসে সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে কী যে এত পড়েন, কে জানে!

আমি তো জানতাম, ছোটরা পড়াশোনা করে। বিয়ে থা করার পর, বাচ্চাকাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর, খবরের কাগজ ছাড়াও যে লোকে পড়াশোনা করে, এ বাড়িতে না এলে তো জানতেই পারতাম না...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register