Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সেরার সেরা)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব - ১৩৬ বিষয় - খিদের জ্বালায়

আগাছা

ভোরবেলায় মর্নিং ওয়াক করতে বেড়িয়ে দেখলাম ছেলেটি প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ বিলি করে।আমাদের বাড়িতেও দোতলার বারান্দায় ছুঁড়ে দেয় কাগজটি।দারুণ টিপ আছে ছেলেটির হাতে। একদিন আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে কি মনে হয়েছে,সে কলিং বেল বাজালো। বাইরে এসে বললাম কি ব্যাপার রে? ছেলেটি আমতা আমতা করে বলল, বলছিলাম কি আণ্টি আপনার বাগানটি শুকনো পাতায় ভরে গেছে। পরিস্কার করে দেওয়ার কেউ নেই ? যদি বলেন তো আমি লেগে যাই। আমি ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম না না কোন দরকার নেই, আর রোজ সকালে তুই বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ দিয়ে বেড়াস কেন? খিদের জ্বালায় গো আন্টি। কেন তোর বাবা মা কি করেন? থাকিস কোথায় তুই? বাবাকে তো দেখিনি কোনোদিন। মা আর আমি ওই বসতিতে থাকি।মায়ের কাছে একজন কাকু আসে সেই আমাকে এই কাগজ বিলির কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। মা তো বাড়ি বাড়ি ঠিকা কাজ করে। মায়ের খুব জ্বর।আর আজকে কাগজ ছাপা হয়নি, কাল নবরাত্রির ছুটি ছিল। কাগজ বিলি করলে তবেই কিছু পাই। তুই পড়াশোনা করিস না? হ্যাঁ এবার মাধ্যমিক দেব। পাশ করে কি করবি। আরও পড়ার ইচ্ছে আছে। বাহ বেশ ভালো তাই করিস। করুন স্বরে ছেলেটি বলল,প্লিজ আন্টি বাগানটা সাফ করে দিই। নরম সুরে বললাম ঠিক আছে লেগে যা।কতো টাকা নিবি? টাকা লাগবে না আন্টি, শুধু খাবার দিলেই হবে। ঠিক আছে যা, খুব ভালো করে পরিস্কার করবি কিন্তু । (মনে হল বেচারা আজ কিছু খায়নি।) দুইঘন্টা ধরে বাগানের শুকনোপাতাগুলো ও ভালো করে সাফ করে এসে বলল পেটে ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে। খাবারটা এবার দাও। খাবার এনে বললাম এখানে বসে খা। লাগলে আরও দেবো। না আন্টি, বাড়িতে মা আছে, খুব অসুস্থ, মাকে খাবার খাইয়ে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব।ফ্রিতে ওষুধ পাওয়া যায় শুনেছি। কথা বলতে বলতে ছেলেটি পকেট থেকে একটা পলিথিন বের করে তার মধ্যে খাবারগুলো ভরে নিল। আমি তার হাতে আরও একশো টাকা গুঁজে দিলাম। সে খুব খুশি হয়ে চলে গেল। এরপর একদিন পাশের বাড়ির পরেশের মুখে শুনলাম ছেলেটি কলেজে ভর্তি হয়েছে।শুনে খুশি হয়ে বললাম বাহ বেশ ভালো তো।কত কষ্ট করে মায়ের সেবা যত্ন করে কলেজের পড়া পড়ছে। ইদানিং বাগানটায় আবার আগাছা ভরে উঠেছে। তা দেখে ছেলেটির কথা মনে পড়ল।একদিন পরেশকে দেখে বললাম হ্যাঁ রে ওই ছেলেটির খবর কি? পরেশ বলল পিসি আর বোল না।ও এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাজনীতি করছে।আমি বললাম মানে? কলেজে যায় কিন্তু কোন ক্লাশ করে না।ইউনিয়ন রুমে বসে সময় কাটায়।শুনে আমার আশঙ্কা হল গরীবের ছেলে আবার কোন বিপদে না পড়ে । কারণ রাজনীতি তো আজকাল অহিংস নয় সহিংস। পরেশের মুখে শুনলাম সেদিন কলেজের ইউনিয়নের ভোট ছিল।ভোটের আগের দিন দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল, পুলিশ এসেছিল।পরের দিন ভোটিং এর সময় কলেজে বোমা পড়েছে।ছেলেটির একটি পা নাকি যখম হয়েছে।আহারে! শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। যা আশঙ্কা করেছিলাম তাই হল।কি ভয়ঙ্কর রাজনীতি!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register