Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

maro news
অণুগল্পে পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি

নমস্কারি

আজকাল নমস্কার, প্রণামের পরিবর্তে ‘হাই হেলো’র রেওয়াজ হয়েছে, তাও আবার মেসেজে। সেই সমাজে মাগগি-গণ্ডার বাজারে যাদের উপরি আয় বা কালো টাকা নেই তাঁরাও কেন এখনো বিয়েতে নমস্কারি দেওয়ার প্রথা বজায় রেখেছেন তা ভাবতে আশ্চর্য লাগে। যাকে হয়তো বছরে একবারও ফোন করা হয় না নমস্কারির সংখ্যা বাড়াতে তার নামও তালিকাতে বেমালুম স্থান পায়। আর সত্যি কথা বলতে কি নমস্কারি শাড়ি বা প্যান্ট কিনতে গিয়ে ছেলে বা মেয়ের বাপ পছন্দের কথা ভুলেও মনে আনেন না। এক গড়পরতা বাজেট করাই থাকে। যা হোক একটা কিনতে পারলেই হলো। আর সেই বিষয়টা বুঝে নমস্কারি নেওয়ারও কোন গরজ থাকে না তালিকায় থাকা নিকট আত্মীয়ের। আর নিলেও আলমারির নীচে পড়ে থাকে অনাদরে। বছর কুড়ি আগে আমার বাড়িতে প্রথম ভাড়াটে আসে। উড়িষ্যার ছেলে। আমার বাড়ির কাছেই এক ফ্যাক্টরির ইঞ্জিনিয়ার। নববিবাহিত। স্ত্রীও ভুবনেশ্বরের মেয়ে এবং ধনী পরিবারের। মেয়েটির মাসি আমাদের এলাকায় থাকেন। মাসি এবং মেসোমশাই দুজনেই শিক্ষক। সেই সূত্রেই আমার বাড়ি পছন্দ করে দিয়েছেন বোনঝি-জামাইয়ের জন্য মাসি। কিছু দিন পরেই নবদম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। একবার মেয়েটি বেশ কিছুদিনের জন্য ভুবনেশ্বর চলে যায়। ফিরে এসেই আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করে। দাদার বিয়েতে আমার স্ত্রীর জন্য নমস্কারি শাড়ি বরাদ্দ হয়েছিল। পাওয়া সেই শাড়ি আজ দুই যুগ হয়ে গেলো ভাল করে খুলেও দেখেনি আমার স্ত্রী। মনে মনে হয়তো ভেবেছিল- বাড়িউলির জন্য নমস্কারি আর কেমন হবে? এই ঘটনা আমি শুনে থাকলেও এখন আর কিছু মনে নেই। কয়েকদিন আগে আমার একমাত্র ভাগনের বিয়েতে বরযাত্রী হিসাবে যাওয়ার সময় আমার স্ত্রী সাজগোজ করে আমাকে এসে জানতে চায় শাড়িটা কেমন লাগছে। আমি এসব ব্যাপারে পারদর্শী নই। আমতা আমতা করছি দেখে স্ত্রী আমাকে বলল, “এই শাড়িটা আগে তুমি দেখেছো? কে কিনে দিয়েছিল?” আমি কুলকিনারা পেলাম না। শুধু বললাম, “খুব ভালো শাড়ি।” স্ত্রী আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, “এটি আমাদের প্রথম ভাড়াটে সরমার দেওয়া নমস্কারি।” সেই দিন বিয়েবাড়িতে আমার স্ত্রীর শাড়ি অনেকেরই আলোচনার বস্তু হয়েছিল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register