Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 সাহিত্য মার্গ || ১৫০ তম উদযাপন || সংখ্যায় রীতা চক্রবর্তী

maro news
T3 সাহিত্য মার্গ || ১৫০ তম উদযাপন || সংখ্যায় রীতা চক্রবর্তী

জীবন যে রকম

ছ'ঘন্টা লেট করে ট্রেনটা যখন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ঢুকল তখন বিদিশার মনে হচ্ছিল - এই ট্রেনেই ফিরে যাই কলকাতা। স্টেশনের আউটারে দাঁড়িয়ে থেকে একটা দিন তো শুধু শুধুই কেটে গেল। বাকি রইল আর তিন দিন। কি দেখব? কতটুকু দেখব? আর তাছাড়া শুভ্রকেও তো একটু সময় দিতে হবে। সেদিন ও যখন বলল যে এবার থেকে ওর কাঁধে তিনটে তারা চমকাবে সেদিন খুব আনন্দ হয়েছিল আমার। এটাই তো ওর স্বপ্ন ছিল । ও যখন আমায় ফোনে বলছিল তখন ওর কন্ঠস্বরে যেন খুশির জোয়ার এসেছিল। বলছিল,"জানো তো ম্যাডাম, এবার থেকে আমার নেমপ্লেটে লেখা হবে - ক্যাপ্টেন শুভ্রনীল কার্ফা।" ওর এই ছেলেমানুষী আনন্দ এবার সেলিব্রেট করবে বলেই তো আমাকে ছুটে আসতে হল। বাড়িতে গেলে তো আমায় সারাক্ষণ কাছে পাবে না। কারণ আমাদের আজো সামাজিক বিয়ে হয়নি। সাতবছর হয়ে গেছে আমার চিত্তরঞ্জন গার্লস হাইস্কুলের চাকরিটার। আমি কলকাতা ছেড়ে পাকাপাকি ওখানেই থাকি। আর শুভ্র বারাক,লামডিং-এর পর এবার টুলুং আর্মি হেডকোয়ার্টারে পোষ্টিং। আমি মনিপাল ইউনিভার্সিটিতে যে বছর ভর্তি হলাম ওর সেটা ফাইনাল ইয়ার। ও তখন অলরেডি চাকরি করছে। ক্যাম্পাসে একজন সুপুরুষ বাঙালি পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম। ধীরে ধীরে ওর ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে, পাগল করেছে। শেষপর্যন্ত একদিন লজ্জার সীমারেখা ভেঙে দিয়ে আমিই প্রোপোজ করে বসি। সেদিন ওর পূর্ণদৃষ্টিতে একটা পাগলাঝোড়ার দুষ্টুমি দেখেছিলাম। আমার হাতে হাত রেখে কথা দিয়েছিল,"পরিস্থিতি যাইহোক না কেন যতদিন এই শরীরে প্রাণ থাকবে ততদিন আমি তোমার।" আমরা দুজনেই মনের কথা বাড়িতে জানালাম। রক্ষণশীল বাবা আমার বললেন,"মেয়েকে তো সম্প্রদান করতেই হয়। ভেবে নেব আমি যমকে সম্প্রদান করেছি।" আর শুভ্রর ঠাকুমা বললেন," উঁচু জাতের মাইয়ার লগে নীচু জাতের পোলার বিয়া অইলে বৈধব্য আহে। তোরা তো আইজ কাইল কিছুই মানোস না। পোলা না থাকলে বৌ দিয়া কি করুম্? " কথাটা কানে যেতেই বুক কেঁপে উঠেছিল। বলেছিলাম, "শুভ্র - তোমাকে ছেড়ে আমি বাঁচব কি করে? সারাজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পারি কিন্তু কোনোভাবেই তোমাকে হারিয়ে ফেলতে পারিনা।" এরপর আমরা কোর্ট ম্যারেজ করে নিয়েছি। তবে বাড়ির কাউকে জানাইনি। ও সপ্তাহ খানেক ছুটি নিলে হোটেল ভাড়া করে নেয় আর আমার ডাক পরে। এতগুলো বছর এভাবেই কেটে গেল। আজো তার ডাকেই সাড়া দিয়ে এখানে আসা। এলোমেলো ভাবনার মধ্যেই মোবাইলটা ভাইব্রেট করে ওঠে। স্ক্রিনে শুভ্রর ছবি দেখে হ্যালো বলতেই বলল," অধম যে দেবীর দর্শন অভিলাষী। বাইরে গাড়িতে আছি। দেরি আর সহে না দেবী। এসো তাড়াতাড়ি। অনেকটা পথ যেতে হবে সাথে নিয়ে নারী। সুরক্ষিত পৌঁছতে হবে ব্যারাকে। আজ আমার আপনজনের সাথে পরিচয় হবে সবার। আমার ট্রান্সফার অর্ডার এসেছে। কাল ভোরে তোমাকে সাথে নিয়েই বেড়িয়ে যাব। একদিন পর জয়েনিং। আমার খুব ইচ্ছে যে তুমি ইন্দো-চাইনীজ বর্ডারে আমার রেজিমেন্টে পৌঁছে দেবে। বল, যাবেতো আমার সাথে? কথা বলতে বলতে বাইরে এসে আমি শুভ্রকে দেখে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরি। কোনো কথা বলতে পারি না। কোথা থেকে হঠাৎ এতো কান্না এল জানিনা। আমি ওর বুকে মুখ লুকিয়ে রাখি।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register