Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৮৩)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৮৩)

সুমনা ও জাদু পালক

রাজা রুদ্র মহিপাল তার দলবল নিয়ে পৌঁছে গেলেন জলাশয়ের পাড়ে দেব হরিহরের মূর্তির কাছে। সেই নয়নাভিরাম মূর্তি দেখে রানী মায়াবতী আনন্দে বাক্যহারা হয়ে গেলেন। এতদিন তাঁর স্বামীকে বারংবার বলেও পুষ্পনগর রাজ্যে মহাদেবের মন্দির অথবা একটি শিবলিঙ্গও প্রতিষ্ঠা করাতে পারেননি। অথচ আজ চন্দ্রচূড় মহাদেব স্বয়ং তাঁদের রাজ্যে এসেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর স্বামীর ইষ্ট দেবতা এবং এই রাজ্যে এযাবৎকাল পুজিত চতুর্ভুজ বিষ্ণু মূর্তি ফেরত এসেছেন। হরি ও হরের মিলনে অপূর্ব হরিহর মূর্তি সৃষ্ট হয়েছে। আশা করা যায়, এবার এই রাজ্যের সমস্ত বিপদ দূর হয়ে যাবে।

রানী মায়াবতী তাঁর বিকৃত দেহ নিয়ে অতি কষ্টে উপুড় হয়ে দেব হরিহরের চরণে প্রণতি জানান। দেব হরিহরের মূর্তি স্পর্শ করে অঝোর ধারায় কাঁদতে শুরু করলেন তিনি। তাঁর চোখের জল মূর্তির চরণ স্পর্শ করল। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘটলো এক অলৌকিক কান্ড। উজ্জ্বল আলোক রশ্মি বেরিয়ে আসতে শুরু করল দেব হরিহরের মূর্তি থেকে। সেই আলো এতটাই উজ্জ্বল যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। রাজা রুদ্র মহিপালসহ সেখানে যারা উপস্থিত ছিল সবাই ভয়ে চোখ বন্ধ করল। রাণী মায়াবতী অজ্ঞান হয়ে ভুমিতে পড়ে গেলেন।

আর তারপরেই ঘটলো এক অভূতপূর্ব কাণ্ড। দেব হরিহরের মূর্তি থেকে নির্গত উজ্জল পবিত্র আলোকরশ্মি যেই মুহূর্তে রানীর শরীর স্পর্শ করলো, সঙ্গে সঙ্গে রানীর শরীরের ভিতর থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসতে শুরু করল কালো ধোঁয়া। বিচ্ছিরি কটু গন্ধ সেই ধোঁয়ার ।ধোঁয়াতে আচ্ছন্ন হয়ে গেল চারিদিক।

চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সবাই কিছুক্ষণ থাকার পর কটু গন্ধ মিলিয়ে যেতেই সুমনা চোখ খুলে বলল ,কি আশ্চর্য! এ কী দেখছি আমি!

এক এক করে সবাই চোখ খুলল। সুমনার মত সবাই বিস্মিত হল। দেব হরিহরের চরণের সামনে ভূমিশয্যায় শুয়ে আছেন এক অপূর্ব সুন্দরী নারী। তাঁর পরিধানে দৃষ্টিনন্দন মহামূল্যবান বস্ত্র। মূল্যবান রত্ন খচিত স্বর্ণালঙ্কারে শোভিত তাঁর দেহ।

রাজা রুদ্র মহিপাল চিৎকার করে উঠলেন, জয় দেব হরিহরের জয়।তাঁর দয়াতেই শাপমুক্ত হয়েছেন রানী মায়াবতী। কিন্তু মায়াবতী ওভাবে ভূমিতে পড়ে আছে কেন? রাজপুত্র হিরণ কুমার ,'মা' 'মা' বলে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যাচ্ছিল ভূলুণ্ঠিত মায়ের কাছে। পরী রানী তাকে বাধা দিয়ে বললেন, হে রাজকুমার, তোমার মা সম্ভবত জ্ঞান হারিয়েছেন। ওঁকে আগে দেখতে দাও আমাকে। ওঁকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে দাও, তারপর তুমি অবশ্যই যাবে তোমার মায়ের কাছে। হিরণ কুমার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, রুদ্র মহিপাল তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, পরীরাণী ঠিকই বলেছেন কুমার। আগে তোমার মাকে সুস্থ হতে দাও।যান পরি রানী, ঐ সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার জন্য যা করণীয় আপনি করুন। ----- হ্যাঁ মহারাজ, আমি আমার কর্তব্য করব, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

পরী রানী দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন রানী মায়াবতীর কাছে।তাঁর পাশে বসে বিড়বিড় করে কি যেন মন্ত্র পড়লেন। তারপর নিজের হাতের জাদুদণ্ডটি রানীর মাথার উপরে মন্ত্র পড়তে পড়তে ঘোরাতে শুরু করলেন । দন্ডের ভেতর থেকে শিশির কণার মত জলবিন্দু টুপটাপ করে ঝরে পড়তে থাকলো রানীর মাথায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখ মেলে তাকালেন রানী । হঠাৎ আকাশের তাকিয়ে সুমনা দেখতে পেল এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register