Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ১৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ১৮)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

বাপের বাড়িতে ঢুকে জবালা দেখলেন, সামনের ঘরে ছোকরা মতো একটা ছেলে বসে আছে। যাকে এর আগে সে কোনও দিন দেখেনি। তাই জিজ্ঞেস করলেন, বাবা কোথায়?

সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, বাবা! কে বাবা?
— সে কী! আপনি আমার বাবার বাড়িতে বসে আছেন, অথচ আমার বাবাকে চেনেন না! বলছেন, কে বাবা? আপনি কে?
— আমি চোর।
— চোর? মানে?
— মানে আমি চোর। চুরি করি।

এর কথা শুনে জবালার মনে হল ছেলেটা নিশ্চয়ই মজা করছে। সত্যিই যদি চোর হত, তা হলে এ ভাবে কখনও বলত না। নিশ্চয়ই বাবার পরিচিত। হয়তো আশপাশে থাকে। বাবার কাছে এসেছে। সত্যিই বাবাকে নিয়ে না... আর পারা যায় না। কত দিন বলেছি, যতই পরিচিত হোক, হুটহাট করে কাউকে বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ো না। কে কেমন মানুষ কিচ্ছু বলা যায় না। চার দিকে যা ঘটছে।

এই তো সে দিন, পাইকপাড়ার মতো ও রকম জনবহুল জমজমাট আবাসনের এক ফ্ল্যাট থেকে এক বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। তদন্তে জানা গেল, তাঁদের শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। তার পরে খুনিরা নাকি নিশ্চিত হওয়ার জন্য লোহার রড দিয়ে মেরে মেরে দু’জনেরই মাথা একেবারে থেঁতলে দিয়েছে। যারা এ কাজ করেছে, তারা যে শুধু খোঁজখবর নিয়েই এসেছিল, তা নয়, তারা পূর্বপরিচিতও। ঘরের আলমারি-টালমারি তছনছ করার ধরন দেখে প্রাথমিক তদন্তেই পুলিশরা তা অনুমান করতে পেরেছে।

পরে জানা গেল, যে মহিলাটি ওই বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে পরিচারিকার কাজ করত, সে মাইনে ছাড়াও নানান অভাব-অভিযোগের কথা বলে মাঝে মাঝেই টাকা নিত। তার বর ছিল একেবারে কাঠ-বেকার। কোনও কাজকর্ম করত না। তাই তাদের সংসারের হাল ফেরানোর জন্য একটা রিকশাও কিনে দিয়েছিলেন ওই দম্পতি। তার পরেও আজ বাজার করার টাকা নেই, কাল বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না, পরশু মেয়ের ওসুখ— এই সব বলে, প্রায়ই এসে উৎপাত করত। প্রথম প্রথম ওঁরা টাকা দিতেনও। কিন্তু যখন বুঝতে পারলেন, এটা ওদের অভাব নয়়়, স্বভাব। তখন বেঁকে বসলেন। মুখের ওপরে বলতে শুরু করলেন, না। আর টাকা দিতে পারব না।

ব্যস। সেই হল ওদের রাগ। আর সেই রাগ এত চরমে উঠল যে, দুই বন্ধুকে নিয়ে সেই পরিচারিকার স্বামী একদিন গভীর রাতে তাঁদের বাড়ি ঢুকে একেবারে শেষ করে দিল ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে। আর তা থেকেই আবার প্রমাণ হল, বয়স্ক মানুষ জনদের নিরাপত্তার জন্য গড়ে তোলা কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্পটি কতটা অর্থহীন।
শুধু কী ওটাই? এ রকম কত ঘটনা যে প্রতিনিয়ত আকছার ঘটছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। বিশেষ করে যাঁদের কোনও ছেলেপুলে নেই। থাকলেও একটা কি দুটো। তাঁরা এমন ভাবেই মানুষ করেন, মেয়ে হলে হয় এখানে যোগ্য পাত্র পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে বিয়ে করে চলে যায় বহু দূরে কোথাও। কখনও সখনও বিদেশেও। আর ছেলে হলে কর্মসূত্রে অন্য কোনও রাজ্যে, নয়তো অন্য কোনও রাষ্ট্রে। মা-বাবার থেকে অনেক অনেক অনেক দূরে। ফলে ঘরে থাকেন বুড়োবুড়ি। আর তার মধ্যে যদি একজন ইতিমধ্যেই গত হয়ে থাকেন, তা হলে তো কথাই নেই। সে একেবারে একা। তাঁকে দেখাশোনার জন্য চব্বিশ ঘণ্টা লোক রাখলেও দেখা গেছে, সেই লোকই এ সবের পেছনে কলকাঠি নাড়ে। ফলে তাকে মারতে কতক্ষণ?
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register