Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পতে নীল নক্ষত্র

maro news
গল্পতে নীল নক্ষত্র

ভোরের শিশিরকণা‌

এন্তা আজ খুব খুশী । আমার লেখা কোন কবিতা বা গল্প যদি কোন সাহিত্য প্রতিযোগিতা থেকে সম্মাননা পেয়ে যায় তাহলে আর ওকে দেখতে হবে না । একেবারে কিশোরীর মতো লম্ফঝম্ফ শুরু করে দেবে । আগের জন্মে নিশ্চয়ই হনুমান, থুড়ি হনুমতী ছিল। না হলে এই বুড়ো বয়সে এসে এরকম কেউ লাফাতে পারে।

ওকে দেখলে কে বলবে ওর ছেলে গ্রাজুয়েট। ওর হাব্বি খুব ভালো। খুব সুন্দর গান গাইতে পারে। অনেক রেকর্ড বেরিয়ে গেছে। লোকসঙ্গীতের একজন বিশিষ্ট শিল্পী ও সুরকার। আমার একটা গানের কথাতে নিজে সুর দিয়ে নিজেই গানটি রেকর্ড করেছে। কোচবিহারের মাটির ঘ্রাণের সুরে সুরে সেই গান আজ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

"মনের মানুষ খাড়াইয়া আছে ,নদীর কিনার গাছের কাছে , সারা শরীল ঝমঝমায়।*.......

গানের কথা সুরে সুরে ভেসে চলে যায় কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে আমার প্রয়াত পিতা মাতার জন্মভূমির আকাশে বাতাসে। এটাই আমার সুখ। এই সুখ হারিয়ে যাক আমি চাই না । এন্তা জানে আমার মনের কথা। এক অসমবয়সী বন্ধুত্বের এমন অপূর্ব যুগলবন্দী আগে কখনো কেউ দেখেছে বা শুনেছে বলে মনে হয় না। আমার কবিতা পেলেই আবৃত্তি করে ছেলেকে দিয়ে ভিডিও তৈরি করে ফেসবুক আর ইউ টিউবে পোষ্ট করা পর্যন্ত আমার মাথা খেয়ে ফেলবে। এইখানটা ঠিক হচ্ছে না, কেমন হবে তুমি একবার বলো, আমি শুনি। মেয়েদের গলা মিষ্টি , মিষ্টি গলা । সেই কণ্ঠস্বরে কি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার "বল বীর , বল উন্নত মম শির" মানাবে । তার মধ্যে এধার ওধার করে এক যায়গায় দাঁড় করিয়ে দিতে হয়। তখন বলবে তোমার হাতে ও জাদু আছ, গলাতেও জাদু আছে। তুমি হলে আমার জাদুকর। এই পাগলীর পাল্লায় পড়ে আমার জীবনটা গেল। তাও ভাল এখনও চোখের দেখা হয়নি মুখবই এর মুখবন্ধের ওপর দিয়ে চলছে। না হলে এতদিনে আমাকে এই বুড়ো বয়সে দৌড় করিয়ে কম করে দশ কেজি ওজন কমিয়ে দিতো।

দেখা না হলে কি হবে। দিল্লীতে মেয়ের কাছে বেড়াতে গিয়ে ডাক্তার মেয়ের জন্য ক্যানসারের সাথে রীতিমতো একবছর যুদ্ধ করে দশ কেজি ওজন কমিয়ে বীরদর্পে সবে বাড়ি ফিরে এসেছি এমন সময় এন্তার এই আবদার। আমার নি:সঙ্গতা কবিতাটি বাংলাদেশ থেকে সম্মাননা অর্জন করতে পেরেছে । তাই ঐ কবিতাটি ও এখনই আবৃত্তি করে ভিডিও করবে। আমাকে আবৃত্তি করা শিখিয়ে দিতে হবে আজই। আমি বললাম মাথা খারাপ না কি , আমার গলায় ক্যানসার হওয়ার জন্য আমি কথা বলতে পারছি , ভালো করে কিছু খেতে পারছি না । আবৃত্তি করা যায় না কি ? তুমি নিজে যা পারো করো। ষ্টেজে তো ফাটাফাটি নাটক করতে পারো , আর আবৃত্তির বেলায় "পেয়েছি পেয়েছি ধর ব্যাটাকে পাকড়ে ধর।" তখন ঘোড়া দেখলেই সবাই খোঁড়া হয়ে যায় , তাইতো ?

আমি বললাম আমি খালি মডিলিউশনটা বলে দেবো , স্কেল নিজেকে ম্যানেজ করতে হবে । কম বেশি হলে বলে দেবো। ঠিক আছে ।

আজ থেকে বছর কুড়ি আগে কলকাতা থেকে বহুদূরে কোচবিহার জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে সিতাইহাটে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার হয়ে কাজ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে তিন তিনটে বছর থাকতে হয়েছিল ঘর বাড়ি প্রিয়জন, পরিজন সবাইকে ছেড়ে একা একা।পাশেই কাঁটা তারের বেড়া। ওপারে আমার প্রয়াত পিতা মাতার জন্মভূমি বাংলাদেশের মাটি। সেই সময়ে অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছিল ব্যাঙ্কের কাজের জন্য। তাছাড়া আমার আরও একটি পরিচিতি ছিল সেটা হলো আমার কবিতা ও তার আবৃত্তির অনুষ্ঠান। অনেক মানুষের প্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছিলাম।সেই সময়ে ব্যাঙ্কে কর্মরত অবস্থায় একজন সদ্যষৌবনা অবিবাহিতা মহিলার সাথে আলাপ পরিচয় হয়েছিল। আমার তখন শেষ বিকেলের অঙ্গনে আনাগোনার শুরু, ওর তখন রাঙা প্রভাত। তাও আমাকে অবাক করে দিয়ে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখেছিল সে তার পলকহীন দৃষ্টিতে। আমার ভাবনায় তখন একটাই কথা কেমন করে হয় এই অসমবয়সী প্রেম। আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম । নীরবে নিভৃতে খুঁজেছি তারে মনে মনে।। নি:সঙ্গতা দূর করার আহ্বান শুনেছিলাম তার কণ্ঠে।

*প্রাণ চায় চক্ষু না চায়*, কবিগুরুর এই গানটি তখন অনেক বেশি সত্যি হয়ে উঠেছিল। আমার মন মানে না সে কথা । তবু অনুশাসন মেনে চলতে হয়। তার নাম আমি জানি না। সে ছিল মুসলমানী দুহিতা। আমি তার নাম রেখেছিলাম *শবনম*, আমার ভোরের শিশিরকণা‌।আমার এই নি:সঙ্গতার একমাত্র সাথী শুধু_একটু_ভালোবাসা উজাড় করে দিতে চায় বলে।

আমার *নি:সঙ্গতা* কবিতার শেষ স্তবকটা এন্তাকে শোনালাম........

"কে তুমি , কোন মহিয়সী, না দেবী, স্বর্গের কোন দেবী, না নারী ,শুধুই এক নারী ।

তুমিই কি আমার অমানিশার ঘোর অন্ধকার, তুমিই কি আমার কালরাত্রি,

তুমিই কি আমার দু'চোখের ক্লান্তি, নি:সঙ্গতা দূর করার এক আকুল আহ্বান?

দীর্ঘ, অতি দীর্ঘ মনে হয় জীবনের এক একটি পল কে ,এক একটি দন্ডকে।।"

...আমার দীর্ঘ কবিতার হয়তো এটাই ক্লাইম্যাক্স।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register