Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৮১)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৮১)

সুমনা ও জাদু পালক

রাজা রুদ্র মহিপাল পরীরানীকে বললেন, হে পরীরানী, আপনি তো আমার পুত্রকে অভিশাপ মুক্ত করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আপনার কাছে চির ঋণী হয়ে রইলাম। এবার দয়া করে এই পুষ্পনগর রাজ্যের রানী মায়াবতীকে দুষ্টু জাদুকরের মায়াজাল থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক করে দিন। পরীরানী বললেন, আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব হে রাজন। কোথায় আছেন রানী মায়াবতী? ----- রাজপ্রাসাদের রন্ধনশালায়। চলুন ,আমরা সেখানে যাই। সুমনা বলল, মহারাজ, আপনি অনুমতি দিলে আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই । -----অবশ্যই বলবে রত্নমালা। তুমি এবং চন্দ্রকান্তা যেভাবে একের পর এক সাহায্য করে চলেছ আমার রাজ্যকে অভিশাপ মুক্ত করতে, আমি তোমাদের কাছেও ঋণী হয়ে আছি। আমি জানি, তোমাদের যে কোন পরামর্শ আমার ও আমার রাজ্যের মঙ্গলের জন্যই হবে। ------রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা শঙ্খধ্বনি করার পর সেই ভীষণ আওয়াজ শুনে জাদুকর হূডু কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়েছে। সে এখনো ফিরে এসেছে কিনা আমরা জানিনা। পরী রানীকে এখনই রাজপ্রাসাদের ভিতরে না নিয়ে যাওয়াই মঙ্গল।হূডু পরী রানী কে দেখতে পেলেই ছলে বলে কৌশলে তাঁকে বন্দী করার চেষ্টা করবে। তার চেয়ে আমরা কোথাও অপেক্ষা করি, আপনি মহারানীকে কৌশলে রন্ধনশালা থেকে বের করে এখানে পরীরানীর কাছে নিয়ে আসুন। ----- উত্তম প্রস্তাব। চলো তাহলে আমরা এই গুপ্ত এলাকা থেকে বেরিয়ে ফিরে যাই সুরঙ্গের মুখে, সেই রক্তবর্ণ বেদীর কাছে। তোমরা কিছুক্ষণ ওখানে অপেক্ষা করবে। আমি কৌশলে রানী মায়াবতীকে রন্ধনশলা থেকে নিয়ে আসবো এখানে। এবার সবাই মিলে হাঁটতে হাঁটতে সুরঙ্গের মুখে সেই রক্তবর্ণ বেদীর সামনে উপস্থিত হল। রাজা রুদ্র মহিপাল সুরঙ্গের অন্য পথ ধরে রন্ধনশালার দিকে অগ্রসর হলেন। সুমনা লক্ষ্য করল, হিরন কুমার বেদীর উপরে চন্দ্রকান্তার পাশটিতে গিয়ে বসলো। মৃদু হাসি খেলে গেল সুমনার মুখে। সে পরীরানীর সঙ্গে দুষ্টু জাদুকর হূডুকে নিয়ে কথা বলতে লাগলো। ওদিকে হিরণ কুমার রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা কে বলল, তুমি এখন আমাদের রাজ্যে কিছুদিন থাকবে তো রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা? ----- কেন? ------- আমাদের পুষ্পনগর রাজ্যের পশ্চিমে খুব সুন্দর একটা পাহাড় আছে আর আছে অসংখ্য ঝর্না। অসংখ্য ময়ূর বাস করে ওই পাহাড়ে। ঝর্নার জল খেতে আসে হরিণের দল। আমাদের রাজ্যের উত্তর প্রান্তে খুব সুন্দর একটা মিষ্টি জলের হ্রদ আছে। নানা বর্ণের অনেক পাখি আছে সেখানে।তুমি যদি আমাদের রাজ্যে কিছুদিন থাকো, তাহলে আমি তোমাকে সব দেখিয়ে দেবো। ------ কিন্তু রাজকুমার, আমার যে থাকার উপায় নেই। ----- কেন, উপায় নেই কেন? ------ বললাম না আমাদের সবুজের দেশ রাজ্যটাকে দুষ্টু জাদুকর হূডু মন্ত্র বলে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। আমার বাবা ও মাকে গাছ বানিয়ে দিয়েছে। উত্তপ্ত মরুভূমির বুকে তারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে কষ্ট সহ্য করে। হূডু কে পরাজিত করে ওর জাদুদণ্ড কেড়ে নিতে না পারলে আমার মা, বাবা আমাদের রাজ্য অভিশাপ মুক্ত হবে না। ওদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত কোন কিছুই ভালো লাগবে না আমার। কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলল চন্দ্রকান্তা। হিরণ কুমার অত্যন্ত আন্তরিকভাবে বলল, কেঁদো না রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা। আমি তোমার মনে আঘাত দেওয়ার জন্য কিচ্ছু বলিনি। তবু আমার কথায় তুমি দুঃখ পেয়ে থাকলে আমায় ক্ষমা করে দিও। ওদিকে চন্দ্রকান্তা কে কাঁদতে দেখে সুমনা দ্রুত পায়ে ওর কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, দুঃখ পেওনা চন্দ্রকান্তা, তোমার বাবা মাকে এবং তোমার রাজ্যকে অভিশাপ মুক্ত করবোই, এই আমার প্রতিজ্ঞা। রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা সুমনাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। ঠিক সেই মুহূর্তে রানী মায়াবতীকে নিয়ে উপস্থিত হলেন রুদ্র মহিপাল। রানী মায়াবতী হিরণ কুমারকে দেখে দ্রুত পায়ে তার দিকে 'পুত্র', 'পুত্র আমার' বলে প্রায় ছুটে গেলেন। কিন্তু জাদুকরের মায়ায় বদলে যাওয়া খর্বাকায়, কুৎসিত দর্শন, প্রৌঢ়া মায়াবতীকে হিরণ কুমার চিনতেই পারল না। সে চিৎকার করে উঠলো, কে, কে আপনি? আমাকে পুত্র বলে সম্বোধন করছেন কেন? একথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন মহারানী মায়াবতী। রুদ্র মহিপাল বললেন, কী বলছো পুত্র হিরণ! তুমি তোমার মাকে চিনতে পারছ না? হিরণ কুমার ভালো করে অভিশাপগ্রস্থ বিকৃত চেহারার মায়াবতীর দিকে তাকিয়ে কিছুতেই তার নিজের মায়ের সঙ্গে মেলাতে পারল না। রুদ্র মহিপাল তখন পরী রানীকে করজোড়ে বললেন,হে পরী রাজ্যের রানী, আপনি এবার দয়া করে রানী মায়াবতী কে অভিশাপ থেকে মুক্ত করে দিন। ----- আমি চেষ্টা করছি মহারাজ। পরী রানী এবার রানী মায়াবতীকে বেদীর উপরে বসতে বললেন। রানী মায়াবতী বেদীর উপরে বসতেই পরীরানী তার হাতের জাদু দন্ডটিকে রানী মায়াবতীর কাছাকাছি আনতেই হঠাৎ কালো ধোঁয়া আর তীব্র কটু গন্ধে ভরে উঠলো জায়গাটা।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register