Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সর্বোত্তম)

maro news
মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক গল্প প্রতিযোগিতা পর্ব - ১৩৪ বিষয় - একটি দুর্যোগের রাত

দুর্যোগের রাতে

জানতে পারলাম নীলা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে।এখন সে সুস্থ আছে।কৌতূহল হয়েই ফোন করলাম আমি তাকে। জিজ্ঞেস করলাম কি ঘটেছিল সেই দুর্যোগের রাতে? সে বলল, বৃষ্টি তখন সবে ধরেছে।বাইপাসে বাঁচাও চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলাম। এগিয়ে গেলি মানে ? তরুণীকে উদ্ধার করতে ভরসার হাত বাড়িয়ে দিলাম। এইভাবে নিজের বিপদ ডেকে আনে কেউ রাতদুপুরে। সেই মুহূর্তে বুঝতে পারিনি, দাঁড়িয়ে ছিল শিওরে বিপদ আমার।আচমকা গাড়ির ধাক্কায় পা ভাঙল আমার। সেকি! কি করে গাড়ি ধাক্কা দিল তোকে ? ই এম বাইপাসের রাস্তাতেই যে গাড়ি থেকে তরুণীকে বাঁচাতে যাই আমি,সেই গাড়িটাই ধাক্কা মেরেছিল। তাকে বাঁচাবার কি দরকার ছিল? কি করব? স্থির থাকতে পারলাম না। রাতের অন্ধকারে ভেসে এসেছিল এক তরুণীর চিৎকার। মনে হল গাড়ির ভিতর থেকেই শব্দটা আসছিল। বিপদে পড়েছে ভেবে, কোভিডের পরিবেশেও ছোঁয়াচের আশঙ্কার কথা ভুলে তরুণীকে উদ্ধার করতে গাড়ির দিকে ছুটেছিলাম। আমি গাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। গাড়ির ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়লাম। আমার পায়ের উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে চম্পট দিল ড্রাইভার। আমি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি ই এম বাইপাসে, আনন্দপুর থানা এলাকায়।

নিজের ক্ষমতা ছিল না উঠে দাঁড়াই।অনুভব করলাম ওই গাড়ির চাকায় পায়ের হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল কি?

এক তরুণী আমার কাছে ছুটে এসেছিল। তার মুখ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম সেও আতঙ্কে রয়েছে। জানতে চাইলাম তার পরিচয়। বলল গাড়ির ভিতর থেকে সেই চিৎকার দিয়েছিল। চলন্ত গাড়ির দরজা খুলতেই সে ছিটকে পড়ে। কিভাবে সে এখানে জানতে চাইতেই বলল, গাড়ির চালকের নাম অমিত। পাঁচ মাস আগে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। সেদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁরাও বাড়ি ফিরছিলেন কিন্তু ঝড় জলে পথে আটকে গেছিল। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে। তুই সেদিন ওখানে কেন? মায়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান সেরে ওই আবাসন থেকে বেরিয়ে স্বামী প্রদীপ ও মেয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলাম আমি। সেই সময়ে আবাসনের কাছেই আমাদের গাড়ির পিছনে দাঁড়ানো একটি গাড়ির ভিতর থেকে ওই তরুণীর চিৎকার শুনতে পেলাম প্রদীপ ও আমি। তারপর কি করলি তোরা? নিজেদের গাড়িটিকে আমরা পিছনের গাড়ির সামনে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে দিলাম। নিজেদের বিপদের কথা একবারও ভাবলি না? তখন ওত ভাবার সময় ছিল না।তুইও গাড়ি থেকে নেমে পিছনের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলি এই বয়সে? এতো সাহস আসে কোথা থেকে তোর? পিছনের গাড়ির সামনে যেতেই গাড়ি চলতে শুরু করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল আমায়। আর প্রদীপও গাড়ি থেকে নেমে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে দেখলাম। ইতিমধ্যে ওইগাড়ির লোকটা জোর গতিতে বাঁক ঘুরিয়ে চম্পট দিয়েছিল চালক। আর তুই রাস্তায় পড়ে ছটফট করছিলিস তখন। কি বিপদ গেল সেদিন তোর বল? ‘পায়ের বদলে মাথার উপর দিয়ে গাড়ির চাকা গেলে সব শেষ হয়ে যেত।’’ ভাগ্য ভালো। হ্যাঁ খুব জোর প্রাণে বেঁচেছি। বৃষ্টিমুখরিত রাতের অন্ধকারে নিস্তব্ধ বাইপাসের উপরে দাঁড়িয়ে তখন আমরা। কাছেই এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রদীপ ফোন করল অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে ১০০ ডায়াল করেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্র্যাফিক সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে এসেছিল।কলকাতা পুলিশের ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে আমাকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। অবশেষে সেই রাতে পুলিশের সাহায্য পেয়েছিলিস তোরা? হ্যাঁ কিছুটা ভরসার হাত পেয়েছিলাম। আর ওই তরুণীর কি হল।ওর সম্বন্ধে কিছু জানতে পেরেছিস? হ্যাঁ জানতে পেরেছি, আসামের বাসিন্দা ওই তরুণী। লেকটাউন এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। মাস পাঁচেক আগে তার সঙ্গে অমিত নামে ব্যক্তির আলাপ হয়। তরুণী জানায় সেদিন সাড়ে আটটা নাগাদ অমিত গাড়ি নিয়ে এসে ফোন করলে তিনি বেরিয়ে আসেন। এবং দু’জনে মিলে গাড়িতে করে বেরিয়ে পরে। মেঘ করে আসায় ওই মেয়েটি অমিতকে অনুরোধ করে ওকে তার ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিতে। কিন্তু অমিত রাজি হচ্ছিল না কিছুতেই। প্রবলবর্ষণে মেয়েটি তখন গাড়ি থেকে নামার জন্য জোর করতে থাকে। মেয়েটির অভিযোগ, তখনই অমিত গাড়ির মধ্যে তাকে যৌন হেনস্থা করে। তার জামা-কাপড়ও ছিঁড়ে দেয়। গাড়ি থেকে যখন তরুণী পড়ে যায় তখন তাঁর পোশাক ছেঁড়া ছিল তুই দেখেছিলিস? চোখে-মুখে মারধরের চিহ্নও ছিল? হ্যাঁ দেখেছিলাম বিদ্ধস্ত অবস্থায় ছিল তরুনী। ওর তেমন ক্ষতি তো হয়নি।উল্টে ওকে বাঁচাতে গিয়ে আমার মাথায় ছ’টি সেলাই পড়েছে। বাঁ পায়ের হাঁটুর পিছনে হাড় ভেঙে গিয়েছে।

আমরা ঘটনার পরে অভিযুক্ত গাড়ির চালক অমিতের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করতে চাইলাম।তখন পুলিশ তা নিতে রাজি হয়নি।

পুলিশ রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়িটিকে খোঁজার চেষ্টা করেছে। এখনও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে ওই তরুনী। ওরও মাথায় মুখে অল্প চোট লেগেছে।

এখানে তুই কাকে দোষরোপ করবি? পুরুষটিকে না,মহিলাকে? নারী কি তবে নিজের দোষেই নিজে নির্যাতিতা?

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register