Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৭৯)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৭৯)

সুমনা ও জাদু পালক

সুমনা বলল, মহারাজ, আপনি অনুমতি দিলে আপনার ওই ঠাকুরদার রথের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই। ------ আমি অনুমতি দিলাম। তুমি যা জানতে চাও ,সচ্ছন্দে জিজ্ঞাসা করতে পারো। ------- ঠিক আছে মহারাজ। অনুমতি দেওয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই ।কিন্তু এখন যে কাজটা জরুরী, সেটা আগে করতে হবে। ----- তুমি কোন কাজের কথা বলছ রত্নমালা? ---- আগে আমাদের রাজকুমারকে উদ্ধার করতে হবে। এ ব্যাপারে পরী রানী আমাদের সাহায্য করবেন কথা দিয়েছেন। ---- সত্যি বলছি তুমি? কোথায় আছে আমার পুত্র হিরন কুমার? পরীরানী বললেন, আপনারা আসুন আমার সঙ্গে। ---- কোথায়? ------ এই সুড়ঙ্গ পথের শেষে গুম ঘরের কাছে। আতঙ্কিত চন্দ্রকান্তা ভয়ার্ত কন্ঠে প্রায় চিৎকার করে উঠলো, না, আমি আর ওখানে যাব না। পরী রানী চন্দ্রকান্তার কাছে এসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ভয় পেয়ো না চন্দ্রকান্তা, আমি তো সঙ্গে আছি। তাছাড়া তুমি তো খুব সাহসী মেয়ে। চরম বিপদে পড়েও এতটুকু বিচলিত না হয়ে মন্ত্রপুত শঙ্খের সাহায্যে ওই বিশাল সরীসৃপটিকে মেরে ফেলেছ। বিস্মিত চন্দ্রকান্তা বলল, আপনি জানেন সে কথা! ----- সব জানি। সুমনা বলল, আপনি চন্দ্রকান্তাকেও‌ চেনেন? ------ কেন চিনবো না? ওতো 'সবুজের দেশের' রাজা বসন্ত সেনের কন্যা? দুষ্টু হূডুর জাদুতে 'সবুজের দেশ' তো আজ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রজাপালক রাজা বসন্ত সেন আর তার রানী তো বৃক্ষরূপে বন্দিনী হয়ে আছে। বিস্মিত চন্দ্রকান্তা বলল, আপনি তো দেখছি সবই জানেন! পরীরাণী এ কথায় কোন জবাব না দিয়ে বললেন, চন্দ্রকান্তা, তুমি যদি এখনো অসুস্থ বোধ করো তো এখানে বিশ্রাম নিতে পারো। আমরা যাচ্ছি রাজকুমার কে উদ্ধার করতে। চন্দ্রকান্তা তাড়াতাড়ি বললো, না ,আমিও যাব। পরীরানী জাদু দন্ড হাতে নিয়ে সুড়ঙ্গ পথ ধরে এগিয়ে চললেন সেই গুপ্ত কক্ষের দিকে। রাজা রুদ্র মহিপাল, সুমনা এবং চন্দ্রকান্তা তাঁকে অনুসরণ করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পৌঁছে গেল সেই গুম ঘরের সামনে ,যেখানে ছিন্নভিন্ন সরীসৃপটির দেহ খণ্ডগুলি ইতস্তত পড়ে আছে। সত্যিই বিশাল সরীসৃপ। চন্দ্রকান্তা নতুন করে ভয় পেল। সুমনাকে জড়িয়ে ধরল সে। সুমনা তাকে প্রায় আগলে নিয়ে গুম ঘরের ভিতরে প্রবেশ করল। ঘরের ভিতরে নিঃসীম অন্ধকার। ভয়াবহ। সুমনা মনে মনে সেই সব অপরাধীদের কথা ভাবতে লাগলো ,যাদের শাস্তি স্বরূপ এই গুম ঘরে বন্দি করে রাখা হতো।উফ্ ! কি ভয়ংকর শাস্তি। একটু এগোতেই দেখা গুম ঘরের পিছনের দেয়ালের অনেকটা অংশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। ঠিক তার পিছনেই দেখা যাচ্ছে আরেকটা লম্বা সুড়ঙ্গ পথ। তবে এই সুড়ঙ্গটা আলোকিত। পরী রানী ঐ সুড়ঙ্গ পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন। পিছনে বাকিরা সবাই। চলেছেন তো চলেছেন, পথ যেন আর শেষ হয় না। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর সুরঙ্গ পথ ডান দিকে ঘুরে গেছে। এবার সে পথ ধরে এগিয়ে চলা শুরু হলো। কিছুটা যাওয়ার পরে দেখা গেল পথটা যেখানে শেষ হয়েছে, তার শেষ মাথায় ধাতব জালি লাগানো। আর সেই জালির ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে সূর্যের আলো। রাজা রুদ্র মহিপাল বললেন, আমরা তো মনে হয় নদীর কাছাকাছি চলে এসেছি। বিস্মিত সুমনা বলল, কি করে বুঝলেন মহারাজ? ------- আমি নদীর ঢেউয়ের শব্দ পাচ্ছি। তাছাড়া গন্ধ পাচ্ছি নদীর জলের। বিস্মিত সুমনা প্রায় দৌড়ে ওই ধাতব জালির ফাঁক দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে চিৎকার করে উঠলো, হ্যাঁ, ওই তো নদী। আমি দেখতে পাচ্ছি। রুদ্র মহিপাল বললেন, হ্যাঁ, পুষ্প মালা নদী পুষ্পনগর রাজ্যের গর্ব। সুমনা বলল, বাহ !ভারী সুন্দর নাম তো নদীটার! চন্দ্রকান্তা বলল, কিন্তু এখানে রাজকুমার কোথায়? পরী রানী বললেন, বাম ধারে যে নিরেট দেয়াল দেখতে পাচ্ছে, ওটার মধ্যেই জাদু মন্ত্রে রাজকুমারকে বন্দী করে রেখেছে হূডূ। আমি ওকে জাদুর মায়া থেকে মুক্ত করে দেব। কথা শেষ করে পরীর রানী তার জাদু দন্ডটিকে নিট দেওয়ালের কাছে নিয়ে গিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বললেন। সবাই বিস্মিত হয়ে দেখল, দেওয়ালটা ধীরে ধীরে দুদিকে সরে গেল। ভেতরে একটি ছোট্ট কক্ষ। আর ঐ কক্ষের মেঝেতে শুয়ে আছে হিরণ কুমার। নিদ্রিত।

চলবে‌‌

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register