Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্পিতা বোস (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে অর্পিতা বোস (পর্ব - ১)

বৃত্ত

১| মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙে রূপসার। কাল ডিউটি সেরে ফিরতে বেশ দেরি হয়েছে। সব সেরে ঘুমোতে ঘুমোতে অনেক রাত হয়ে হয়েছে। তাই চোখ টেনে খুলতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। ঘুম জড়ানো চোখে শুধু কানে এল মায়ের কান্নাজড়ানো গলা, -- তোর বাবাকে সকাল থেকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা রূপু। ঘোর কাটিয়ে সটান উঠে বসে রূপসা। বাবা! মোবাইলটা নিয়ে উদভ্রান্তের মতো ঘর বারান্দা খুঁজতে থাকে। কোনোমতে সালোয়ার-কামিজ পরে গলির মুখ পর্যন্ত ছুটে যায়। কোথাও নেই বাবা! কোথায় খুঁজবে জানে না! বড় দিশেহারা লাগছে। আর অপরাধী তো বটেই। বাবার এই রোগটার জন্য এমন আশঙ্কাটা তো ছিলই! রিহ‍্যাবে দিতে বলেছিল দাদা-বৌদি। মাও রাজি ছিল । শুধুমাত্র রূপসাই জেদ করে বাড়িতে রেখেছিল। সাত‍্যকী স‍্যারের সাথে কথা বলেই সবকিছু করত। আর তাছাড়া রূপসা নিজেই তো সাত‍্যকী স‍্যারের রিহ‍্যাবের নার্স। বাবার সব চিকিৎসা ও পরিচর্যা নিজের হাতেই করে। কিন্তু আজ কি হয়ে গেল! মোবাইলটাও নিয়ে যায়নি বাবা। হঠাৎই আবার বাড়ির দিকে দৌড় দেয় । নাহ্, পার্সটা নিয়ে গেছে। একটু নিশ্চিন্ত হয়। অস্থির হয়ে সাত‍্যকী স‍্যারকে ফোন করে।

২| অনিমেষ এগিয়ে চলেছেন অনেক দূর। ট্রেনে চেপে কলকাতা ছেড়েছেন। স্টেশনে নেমে অনেকটা হেঁটে চলেছেন। সেই পুরোনো মিষ্টির দোকানটা খুঁজছেন। স্টেশনে এলেই এই মিষ্টির দোকানে যেতেন। মেয়েটা খুব ভালোবাসে এই মিষ্টির দোকানের মিষ্টি খেতে। কিন্তু কিছুতেই মিষ্টিটার নাম মনে পড়ছেনা। দোকানে দেখলেই মনে পড়বে। এমন ভেবেই পা চালান। তবে নতুন লাগছে জায়গাটা। সব অচেনা। সামনের চায়ের দোকানের কাছে এগিয়ে যান। দোকানীর একটু কেমন লাগে অনিমেষকে দেখে। তবুও সামনের মিষ্টির দোকান দেখিয়ে দেন। অনিমেষ আনন্দের সাথে সেদিকে চলেন। মনে মনে ভাবেন, -- রূপুটা মিষ্টি দেখলেই খুব খুশি হবে। বাচ্চা রূপসার মুখের হাসিটা মনে পড়তেই আপনমনে হেসে ওঠেন। হঠাৎই একটা দোকানের সামনে থমকে দাঁড়ান অনিমেষ। দোকানদার জিজ্ঞেস করেন, -- কী লাগবে দাদা? অনিমেষ অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। কোথায় এসেছেন! কেন এসেছেন কিছু মনে পড়ছেনা। দোকানদার আবার জিজ্ঞেস করে, -- আরে বলবেন তো কি লাগবে? কিছুতেই কিছু মনে করতে পারছেননা। কোথায় এসেছেন? কি করবেন? বড় অসহায় লাগে। কেঁদে ফেলেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে।

৩. গলির মুখে সাত‍্যকী স‍্যার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আপনজনের মতো গাড়ি নিয়ে চলে এসেছেন রূপসার বিপদে। উদভ্রান্ত রূপসার ভেজা চোখে চোখ রেখে বলে, - সব ঠিক হয়ে যাবে। বলল বটে কিন্তু মনে মনে নিজেই চিন্তিত সাত‍্যকী। রূপসার বাবাকে আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা ঠিক জানেন না। এমন রোগীরা অধিকাংশ সময়ই হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু এভাবে তো হাল ছেড়ে দেওয়া যায় না। বেশ জোরালো গলায় সাত‍্যকী রূপসাকে বলে, - উঠৈ এসো। থানায় আগে একটা মিসিং ডাইরি করতে হবে। - স‍্যার বাবাকে কি আর কখনও পাবোনা? অসহায় রূপসাকে দেখে বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলেও, নিজেকে শান্ত রেখে বলেন, - এভাবে ভেঙে পড়ার মানুষ রূপসা নয়। দেরি না করে থানায় চলো।

সাত‍্যকীর কথায় কী যেন এক ভরসার বার্তা। রূপসা উঠে বসে। গাড়ি ছুটে চলে থানার দিকে।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register