Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৬)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

— বারো টাকা! তুই বোধহয় ভুল শুনেছিস। ওদের স্কুলের মাইনে তো বারো হাজার টাকা।

— হ্যাঁ। বারো হাজার টাকা করেই তো। তবে যাঁদের আয় বাৎসরিক ছ’লক্ষ টাকারও বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে। তিন মাস অন্তর অন্তর তাঁদের ছত্রিশ হাজার টাকা করে দিতে হয়। সেখানে আমাদের দিতে হবে সারা বছরেরটা একসঙ্গে। মাত্র একশো চুয়াল্লিশ টাকা।

— বলিস কী রে?

— তা হলে আর বলছি কী? আর তার থেকেও বড় কথা কি বল তো?

— কী?

— যাঁদের আয় বছরে ছ’লক্ষ টাকার কম, তাঁদের ছেলেমেয়েদের ওরা স্কুল থেকেই বিনে পয়সায় টিউশনি দেবে। দরকার হলে বই, খাতা, কলমও ফ্রি-তে দেবে।

— অ্যাঁ?

— অ্যাঁ নয়, হ্যাঁ। আর তার থেকেও বড় কথা কি বল তো, এ বছর যারা ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল। ওদের স্কুল তাদের সবাইকেই ভর্তি করে নিয়েছে।

— সে কী রে? ওদের তো মাত্র ষাটটা সিট...

— না। ওরা নাকি আশপাশে আরও অনেকগুলো বিল্ডিং নিয়েছে। ঠিক করেছে, প্রয়োজন হলে এক-একটা স্কুলে শুধু এক-একটা ক্লাস করাবে। সে রকম হলে, এক-একটা সেকশন এক-একটা বিল্ডিংয়ে। আমি অবশ্য আগেই এটা কানাঘুষোয় আঁচ করেছিলাম। কিন্তু সত্যি-সত্যিই যে এ রকম হতে পারে, সেটা ভাবিনি। তাই ফালতু ফালতু আমি তোকে ডিসটার্ব করতে চাইনি। তোর বাবার ব্যাপারটা তো আমি জানি। মেশোমশাই এখন কেমন আছেন রে?

— ভাল নেই রে। একদম ভাল নেই। এই তো ওখানেই যাচ্ছি।

— ওখানে যাচ্ছিস, তা হলে এ দিকে?

— বাবার জন্য একটু আম নেব রে…

— এই সময়ে আম!

— দেখি যদি পাই...

— হ্যাঁ হ্যাঁ যা যা, যা। আমি তোকে পরে ফোন করব।

পয়মন্তর খবরটা শুনে মন ভাল হয়ে গেল জবালার। যদিও পয়মন্তর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর অনেকটা সময়ই নষ্ট হল। সেই সময়টা সামাল দেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি পা চালাল জবালা। এখানে আম না-পেলে ফের কোন বাজারে যাবে, সেটা ভাবতে ভাবতে রাস্তা পার হয়ে গড়িয়াহাট বাজারের ফল পট্টিতে ঢোকার আগেই জবালা একেবারে চমকে উঠলেন। এই অসময়ে আমের এমন ম ম গন্ধ! ওঁর মনে হল অসময়ে নয়, আমের মরশুমেই উনি আমের পট্টিতে ঢুকেছেন।

ক’পা এগোতেই দেখলেন, যে দিকে দু’চোখ যায়, সে দিকেই কেবল আম আর আম। শুধু আম নয়, নানান জাতের আম। একেবারে রসালো। টইটম্বুর।

নাঃ, দিনটা যে আজ এত ভাল যাবে উনি তা ভাবতে পারেননি। বাবা ক’টা খেতে পারবেন উনি জানেন না। তবে এ রকম আম শুধু চোখের দেখা দেখতে পেলেই যে বাবার মন ভরে যাবে, উনি তা খুব ভাল করেই জানেন।

তাই হাসপাতালে ঢুকেই বড় বড় পা ফেলে বাবার কাছে চলে গেলেন তিনি। এখন কেমন আছ? জিজ্ঞেস করতে করতে মাথার কাছে দাঁড়িয়ে কালো পলিপ্যাক থেকে একটা আম বার করে বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, দ্যাখো, তোমার জন্য কী এনেছি।

ওঁর বাবা সেটা হাতে নেওয়ার আগেই বালিশের তলা থেকে একটা খাম বার করে জবালার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, ডাক্তারবাবু দিয়ে গেছেন।

জবালা অবাক হয়ে বললেন, কী এটা?

— দ্যাখ না কী...

— রিপোর্ট?

জবালা জানেন, এই হাসপাতালটা অত্যন্ত আধুনিক। শুধু চিকিৎসাই যে ভাল হয়, বিশাল বিশাল ডিগ্রিধারী সেরা ডাক্তাররাই যে এখানে আছেন, তা নয়, এই হাসপাতালে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার দারুণ ব্যবস্থা আছে। তবে হ্যাঁ, এরা কোনও রিপোর্টই কোনও রোগীর হাতে কখনও দেয় না। দেয় বাড়ির লোকের হাতে। তা হলে এই রিপোর্টটা বাবার কাছে দিয়ে গেল কে! ভাবতে ভাবতে খামটা খুলে ভাঁজ করা কাগজটা বার করে চোখের সামনে মেলে ধরতেই স্তব্ধ হয়ে গেলেন জবালা। দেখলেন, লাল কালি দিয়ে রিপোর্টে লেখা রয়েছে— ইউ আর নাউ ক্যানসার ফ্রি।

ক্রমশ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register