Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৭১)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৭১)

সুমনা ও জাদু পালক

রাজা রুদ্র মহিপালের সঙ্গে সুমনা যে ঘরটায় প্রবেশ করল,সেটা রাজবাড়ীর ভাঁড়ার ঘর। বিশাল আকৃতির বড় বড় ধাতব পাত্রে বিভিন্ন প্রকারের তণ্ডুল,যব,গোধূম চূর্ণ, বিভিন্ন প্রকারের কলাই, সর্ষপ ও অন্যান্য তৈলবীজ, বিভিন্ন রকমের মসলা ইত্যাদি রাখা আছে সেই ঘরে। বিভিন্ন রকমের আনাজ, বিভিন্ন সুমিষ্ট ফল ইত্যাদিও সাজানো আছে কাষ্ঠ নির্মিত বিভিন্ন আকৃতির পাত্রে। রাজা সুমনাকে সেখানে অপেক্ষা করতে বলে নিজে রন্ধনশালায় প্রবেশ করলেন গোপনে। নিজেকে আড়ালে রেখে লক্ষ্য করতে থাকেন যে, রাজপুরীর বর্তমান রাজকর্মচারীরা, হুডু যাদের মন্ত্র বলে পুতুল বানিয়ে রেখেছে ,তারা তাঁদের রাজ্যের মহারানীর সঙ্গে কিরকম ব্যবহার করে। কিছুক্ষণ দেখার পর মহারাজ বুঝলেন যে, জাদুকর হূডু রাজপুরীর কর্মচারীদের মন্ত্র বলে পুতুল করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের চিন্তাভাবনা করার শক্তি এবং বোধ বুদ্ধি ইত্যাদি সব কেড়ে নিয়েছে , ওরা এখন আদেশের পুতুল মাত্র। রাজা তখন তার দুই ঠোঁট ডান হাতের তালুতে ঠেকিয়ে এক বিচিত্র ধরনের আওয়াজ করলেন । সেই আওয়াজ শুনে রানী বুঝতে পারলেন যে, রাজ্যের মহারাজ কাছাকাছি উপস্থিত হয়েছেন এবং সেটা গুপ্ত পথ ধরে । রানী বুঝতে পারছিলেন না যে, হঠাৎ রাজাকে গুপ্ত পথ ধরে আসতে হল কেন আর ওই অভিশাপ গ্রস্ত চেহারা নিয়ে রাজা কিভাবে বট গাছের কোটরের গুপ্ত পথ ধরে পৌঁছলেন এখানে। ওই বিশেষ আওয়াজ শুনে রানী এটাও বুঝতে পারলেন যে মহারাজ তার সাক্ষাৎপ্রার্থী এবং সেটাও গোপনে। মহারানী তখন বিভিন্ন রকম কাজের বাহানা দিয়ে এক এক করে সমস্ত পুতুল কর্মচারীদের রন্ধনশালা থেকে বাইরে বের করে দিলেন। তারপর রন্ধনশালার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করতেই মহারাজা গুপ্ত স্থান থেকে বেরিয়ে সামনে এলেন। রাজা তার আগের রূপ ফিরে পেয়েছেন দেখে রানী খুব বিস্মিত হলেন। রাজা কে আপদমস্তক খুঁটিয়ে দেখতে থাকলেন তিনি। রাজা পরিহাস তরল কন্ঠে বললেন, অমন করে কিছু দেখার নেই মহারানী। আমি এই পুষ্পনগর রাজ্যের রাজা রুদ্র মহিপাল, তোমার স্বামী। ------ কিন্তু.......? ------ কিন্তু এই অদ্ভুত কান্ড কিভাবে সম্ভব হল, সেটা জানতে চাও তো,? ------ হে মহারাজ। ------ সবই দেব হরিহরের কৃপায় সম্ভব হয়েছে। ------ দেব হরিহর? ------ হ্যাঁ, ভগবান শ্রী বিষ্ণু ও পরম মঙ্গলময় শ্রী মহাদেবের মিলিত রূপ দেব হরিহর। ------ কিন্তু....? ------ এতে কোন কিন্তু নেই। ভগবান শ্রী বিষ্ণু এবং দেবাদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ লাভ করেছে পুষ্প নগর রাজ্য। আমার চৈতন্য হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি, হরি এবং হরে কোন তফাৎ নেই। ------ এটাই বা কি করে সম্ভব হল? ------ এসো একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই তোমার। তার মুখ থেকেই সব কথা শুনো তুমি। ------ কে, কার কথা বলছো তুমি? ------ আমার সঙ্গে রন্ধনশালার পিছনে ভাঁড়ার ঘরে চল, সব প্রশ্নের উত্তর পাবে সেখানে।

বিস্মিত রানী মহারাজার সঙ্গে ভাঁড়ার ঘরে এলেন। সুমনাকে দেখে খুব বিস্মিত হলেন তিনি। সুমনা খুব বিস্মিত হল মহারানী মায়াবতী কে দেখে। লোল চর্ম, পক্ক কেশ, বামনাকৃতি কুৎসিত দর্শন এক মহিলা। সুমনা বুঝতে পারল যে,জাদুকর হূডুর মন্ত্র বলেই এরকমটা হয়েছে। সুমনা ঈষৎ ঝুঁকে হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে বলল, পুষ্পনগর রাজ্যের মহারানী মায়াবতীকে আমি প্রণাম জানাই। বিস্মিত রানী বললেন, কে তুমি? তুমি কি করে চিনলে আমাকে? ------ অনুমান করলাম। ------ কিন্তু তুমি কে? রাজা বললেন, ও রাজকুমারী রত্নমালা। ও আমার বন্ধুর মেয়ে। ও এইরাজ্যে এসেছে হূডুকে পরাস্ত করে ওর জাদু দণ্ড কেড়ে নিতে। বই এসেছে পরীদের রানীকে উদ্ধার করতে। ------ আর আমাদের সন্তান? ------ তাকেও উদ্ধার করবে ও, আমাকে কথা দিয়েছে। তুমি ওর কাছ থেকে সমস্ত শোনো, তাহলে বুঝতে পারবে, দেব হরিহরের কাহিনী এবং আমার অভিশাপ মুক্ত হওয়ার গল্প । সুমনা একটু একটু করে পুরো ঘটনাটা বলতে থাকে রানী মায়াবতীকে। রানী মায়াবতী নানারকম প্রশ্ন করেন। রাজা এবং সুমনা সেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন।

রন্ধনশালার পিছনে মহারাজা রুদ্র মহিপাল, রানী মায়াবতী এবং সুমনা যখন কথাবার্তা বলছে, ঠিক সেই সময়ে এক বিশাল ময়াল সাপ গিলে নিয়েছে চন্দ্রকান্ত কে। সাপটা যখন একটু একটু করে চন্দ্রকান্তা কে গিলছিল, তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল ওর। মনে হচ্ছিল যেন দম বন্ধ হয়ে আসবে। কিন্তু ওকে সম্পূর্ণ গিলে উদরে চালান করার পর এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো চন্দ্রকান্তার। ময়ালের পেটের ভিতরে নিশ্চিদ্র অন্ধকার আর পিচ্ছিল স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল চন্দ্রকান্তা। কি করে এখান থেকে বেরোবে ,কোনোমতেই চিন্তা করে ঠিক করতে পারছিলো না সে। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল, বানর রাজ্যের রানীর দেওয়া সেই শক্তিশালী মন্ত্রপূত শঙ্খের কথা। জ্ঞান হারানোর আগেই সে শঙ্খক আহ্বান করলো। মুহূর্তের মধ্যে শঙ্খ পৌঁছে গেল তার হাতে। চন্দ্রকান্তা সেই শঙ্খে ঠোঁট ঠেকিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বাজিয়ে দিল শঙ্খ।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register