Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৬৯)

maro news
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব - ৬৯)

সুমনা ও জাদু পালক

সুমনা বলল, ভাবার তো কিছু নেই মহারাজ। ----- মানে? ------ দুষ্টু জাদুকর হূডু মন্ত্র বলে আপনার চেহারাকে যে বিকৃত করে দিয়েছিল, আপনি নিশ্চয়ই সেই চেহারায় আর ফিরতে চান না। ------ কক্ষনো না। বিকৃত চেহারা নিয়ে যে দিনগুলো আমি কাটিয়েছি, সেই অভিশপ্ত দিনগুলির কথা আমি ভুলতে চাই। ----- ঠিক বলেছেন মহারাজ। আমি যতক্ষণ অদৃশ্য হয়ে রাজপ্রাসাদে ঘোরাঘুরি করব, সেই সময়ে আপনি বরং মহারানী কে সঙ্গে নিয়ে ওই জলাশয়ের তীরে যান। চাইলে আপনি চন্দ্রকান্তা কে ও সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। ------ আর তুমি? ------- আমি অদৃশ্য হয়ে প্রাসাদে ঘোরাঘুরি করব, খোঁজ করব পরীদের রানীর আর হারিয়ে যাওয়া রাজপুত্রের। ,----- রাজপুত্র মানে আমার ছেলে হিরণ কুমারের? ------হুম!

---- রাজকুমার হিরন কুমারকে খুঁজে বের করতে পারলে সমগ্র পুষ্পনগর রাজ্য এবং পুষ্প নগর রাজ্যের রাজা ও রানী তোমার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।

------ এভাবে বলবেন না হে রাজন। আপনার সাহায্য না পেলে আমি কিছুই করতে পারবো না। অদৃশ্য থাকাকালীন আমার সাধ্যমত রাজকুমারকে খোঁজার চেষ্টা করব ----- তারপর? -------রাজকুমারী চন্দ্রকান্তাকে যেখানে অপেক্ষা করতে বলছেন, রাজপুরী থেকে বেরিয়ে সেখানে আমিও প্রতীক্ষা করবো আপনার ফিরে আসার‍ জন্য। আপনি ফিরে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন ওই জলাশয়ের তীরে। ----- বুঝলাম। কিন্তু মহারানীকে আমার সঙ্গে জলাশয়ের পাড়ে নিয়ে যেতে কেন বলছ রাজকুমারী রত্নমালা? ---- আমার বিশ্বাস, দেব হরিহরের চরণ স্পর্শ করলে মহারানী ও অভিশাপ মুক্ত হয়ে আগের চেহারা ফিরে পাবেন। ----- হতে পারে। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি রত্নমালা । ----- কী মহারাজ? ------ এত অল্প বয়সে এত মনের জোর তুমি পাও কি করে? অদৃশ্য কন্ঠ বলল, রাজকুমারী রত্ন মালার মনের জোর চিরকালই বেশি। চলুন মহারাজ ,এখানে আর কালক্ষেপ না করে এগোনে যাক। ----হম। আরো কিছুক্ষণ চলার পর সত্যি দেখা গেল রাজার রুদ্র মহিপালের কথা মতোই সুড়ঙ্গ পথ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই জায়গাটি বেশ প্রশস্ত। সুড়ঙ্গ পথের ডানদিকে দেওয়ালের গায়ে একটি ছোট্ট গবাক্ষ ।আর সেই গবাক্ষ পথে কি এক অদ্ভুত কৌশলের সাহায্যে সুড়ঙ্গের বাইরের পৃথিবী থেকে সূর্যালোক এসে প্রবেশ করছে সুড়ঙ্গের ভিতরে। আলোকিত হচ্ছে সুড়ঙ্গ পথ। আর ওই গবাক্ষের ঠিক নিচেই আছে একটি নাতি প্রশস্ত রক্তবর্ণের বেদী। সেখানে পৌঁছতেই চন্দ্রকান্তা বলল, রাজকুমারী রত্নমালা, তুমি মহারাজকে নিয়ে এগিয়ে যাও রাজপুরীর দিকে। আমি এখানে তোমাদের প্রতীক্ষায় রইলাম। রাজা রুদ্র মহিপাল বললেন, উপায় থাকলে তোমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম চন্দ্রকান্তা। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়, আশা করি তুমি সেটা বুঝতে পারছ। তুমি কিছুক্ষণ সময় এখানে অপেক্ষা করো, আমি রাজকুমারী রত্নমালা কে প্রাসাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়েই খুব শিগগিরই ফিরে আসব। ----- ঠিক আছে মহারাজ, আমি এখানেই অপেক্ষা করবো। ------ আরেকটা কথা রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা। ------ হ্যাঁ ,বলুন মহারাজ। ------ যদিও আমি তোমাকে বলেছি যে, সুড়ঙ্গের দ্বিতীয় পথটি নদীর দিকে গেছে এবং সেটির শেষ প্রান্ত খুব ভালোভাবে বন্ধ করে দেওয়া আছে। তবুও আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, তুমি এই বেদি ছেড়ে অন্য কোথাও কোন দিকে যেও না। কারণ------ ------কী মহারাজ? ------ আমি আমার পিতামহীর মুখে শুনেছি যে, নদীর দিকে যাওয়া এই সুড়ঙ্গ পথের বাম ধারে একটি গুপ্ত কারা কক্ষ বা গুমঘর আছে। বিদেশি কোন গুপ্তচর আমাদের পুষ্পনগর রাজ্য ধরা পড়লে তাকে ওই অন্ধকার কারা কক্ষে বন্দী করে রাখা হতো। তৃষ্ণার জল এবং খাদ্যের অভাবে তিলে তিলে মারা যেত বন্দি। তারপর তার মৃতদেহ ওই সুড়ঙ্গ পথের শেষ প্রান্তে গিয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হতো নদীর জলে। ----উফ্! কি নিষ্ঠুর শাস্তি! স্বগতোক্তি করল সুমনা। রাজা রুদ্রমহিপাল বললেন, কিছু বললে রত্নমালা? ----না,কিছুনা। চন্দ্রকান্তা বললো, মহারাজ ওই ঘরটি কি এখনো আছে ? ---- জানিনা। ------ আপনার কখনো দেখতে ইচ্ছে হয়নি ওই ঘরটা? -----কৌতুহল হয়নি? ------না, ওই নৃশংস কান্ডের সঙ্গে জড়িত ঘরটি দেখার কোন কৌতুহল আমার হয়নি।বেশ, এবারে আমরা আসি চন্দ্রকান্তা। তুমি কিছুক্ষণ এখানে অপেক্ষা কর । কোন কারণেই ওই বেদী থেকে নেমে অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করো না।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register