Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গারো পাহাড়ের গদ্যে এস এম শাহনূর (পর্ব - ৪)

maro news
গারো পাহাড়ের গদ্যে এস এম শাহনূর (পর্ব - ৪)

মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য : কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

কর্মযোগী মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য: বারবার ব্যর্থতাই মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের জীবনে সফলতার গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৮৮৯/৮০ সালে তিনি কর্মের সন্ধানে প্রথম কলকাতা গিয়ে ১৬ আহিরিটোলা স্ট্রিটে চন্দ্রকান্ত মুখোপাধ্যায়ের বাসায় উঠেন।সে সময় ২৮ নং মেছুয়াবাজার স্ট্রিটে ত্রিপুরা ছাত্রদের মেসে ২ দিন থাকলেন।কোনো কাজের সন্ধান না করতে পেরে বাড়িতে চলে আসেন। আজ যেমন কাজের জন্য সারা দেশের মানুষ রাজধানী ঢাকা শহরে ছুটে। তখন লোকে কাজের জন্য আকিয়াবে চলে যেত।মহেশ চন্দ্র ভাল একটি কাজের আশায় আকিয়াবে গিয়েও ব্যর্থ হলেন।আকিয়াব থেকে কাজের খোঁজে ২য় বার কতকাতায় যান।সেখান থেকে বহুস্থান ঘুরে আবারও বাড়িতে চলে আসেন। তখন গ্রামের লোকজন কথায় কথায় বলত,তুইও কী বাদলী ঠাকুরের মতো দেশে দেশে ফিরবি নাকি? বারবার ব্যর্থ হয়ে পুনরায় কুমিল্লায় মহারাজ স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হন।বঙ্গ স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক নিযুক্ত হন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় চিরতরে [অন্য একটি তথ্যমতে (১৮৮২/৮৩) ১২৮৬ বাংলায় কুমিল্লা জিলা স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায়] পড়াশোনা ছেড়ে অর্থের অন্বেষণে তিনি (তৃতীয় বারের মত) চলে যান মহানগর কলকাতাতে। কলকাতা শহরের একাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মচারী হয়ে কাজ করেছেন। ➤বর্নাঢ্য কর্ম জীবন: প্রথমে তিনি কলকাতা বন্দরে শ্রমিকের কাজ নেন। বন্দরের কাজ ছেড়ে কাপড়ের দোকানে চাকুরী করেন।কিছুদিন মুদি দোকানে কাজ করেন।নিজে মনোহারি দোকান খোলেন। সকল কাজে ব্যর্থ! আবার পুস্তকের দোকানে কিছুদিন চাকুরী করলেন।কোনো কাজেই উন্নতি করতে পারছেন না। ব্যবসা করেও ধনী হতে পারবেন না ভেবে মনে মনে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেন।এ সময় রাধামোহন কুন্ড কোম্পানির দোকানে চাকুরী নিলেন। এখান থেকে ব্যবসা বিষয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা বাড়ল।কলকাতা থেকে কুমিল্লায় গুরুদয়াল সিংহের দোকানে দ্রব্যাদি সরবরাহ করতেন। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করে তিনি খেয়ে না খেয়ে দারিদ্র্যতার যত দুর্ভোগ আছে তার স্বাদ ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। হতাশ না হয়ে জেদী এবং সংকল্পে অটল মহেশ চন্দ্র ২৪ বছরের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম ও একাগ্র সাধনবলে সফল ব্যবসায়ীতে নিজেকে উন্নীত করতে সক্ষম হন। ১৮৮২/১৮৮৩ সালে মাত্র পঞ্চান্ন টাকা পুঁজি নিয়ে কুমিল্লা থেকে আসা এক আত্মপ্রত্যয়ী যুবক কলকাতার ৮২ নং কলেজ স্ট্রিটে স্টেশনারী ও বইয়ের দোকান দিয়ে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন।পাশাপাশি পাইকারী হারে কাগজ ও বিক্রি করতেন তিনি।বাংলা ১২৯৬(১৮৮৯) সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালীকচ্ছ নিবাসী হোমিও চিকিৎসক ডা: শরৎ চন্দ্র দত্তের পরামর্শে ৮১ নং কলেজ স্ট্রিটে হোমিও স্টোর খোলেন।তাঁর সততার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে দোকানের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনি আশুগঞ্জের তালশহর গ্রামের হরসুন্দরী দেবীকে বিয়ে করেন। এরপর ১২৯৯ (১৮৯২) সালে এলোপেথিক ঔষধের দোকান খোলেন।১৩০২ (১৮৯৫) সালে ১১ নং বনফিল্ড লেনে ক্ষুদ্রাকারে ইকোনোমিক ফার্মেসী খুলে হোমিও ঔষধের মুল্য চার আনার জায়গায় পাঁচ পয়সায় বিক্রি করতে লাগলেন। এতে করে দরিদ্র দেশের সাধারণ মানুষের হোমিও চিকিৎসা করাতে সুবিধা হয়।ক্রমে ঢাকা, কুমিল্লা, কাশী শহরে অনুরূপ দোকান খুলতে থাকেন।ঔষধ ব্যবসায় সাফল্য লাভের পর মহেশ চন্দ্র লোহার সিন্দুক তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন, পাশাপাশি তিনি কাঠের করাত কল স্থাপন করেন।তিনি কুমিল্লায় একদর বিশিষ্ট কাপড়ের দোকানও খুলে ছিলেন।এর পর শেষ ব্যবসা হিসেবে একদল সৎ ও অভিজ্ঞ কবিরাজের তত্ত্বাবধানে কুমিল্লায় আয়ুর্বেদীয় ঔষধ তৈরির ভেষজ কারখানা স্থাপন করে সেখানে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করণের জন্যে তিনি ‘বৈদিক ঔষধালয়’ এবং “এম,ভট্টাচার্য এন্ড কোং নামের হোমিওপ্যাথিক ঔষধের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।যা এখনো মহেশাঙ্গনে বিদ্যমান।’তিনি বঙ্গ বিদ্যালয়ে কিছুদিন ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।’-বাংলা পিডিয়া কলকাতায় ব্যবসা করে বহু বাঙালি ধনী বণিক হয়েছেন।কিন্তু বিটঘরের মহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য তাঁর অতীত কে মোটেও ভুলেননি। তাই ইতিহাসও তাকে ভুলেনি।ভুলেছে শুধু অকৃতজ্ঞ আমজনতা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register