Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৫৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৫৪)

দেবমাল্য

--- এক্সপায়ার! তড়াং করে লাফ দিয়ে উঠল রাজীব। মুহূর্তের মধ্যে ঘুম চৌপাট। ঘণ্টাখানেক আগেও ও নার্সিংহোমে ছিল। ডাক্তাররা বলেছিলেন, ভয়ের আর কোনও কারণ নেই। এবার জ্ঞান ফিরলেই হল। তা হলে কী এমন ঘটল যে... রাজীব জিজ্ঞেস করল, কে বললেন? --- ডক্টর সান্যাল। রাজীব জানে, এই ডাক্তার সান্যালের অধীনেই চিকিৎসাধীন ছিলেন দেবমাল্য এবং তিনি যখন খবরটা দিয়েছেন, তখন মিথ্যে নয়। তাই বলল, তুমি যাচ্ছ? --- আমি না গেলেও কাউকে পাঠাব। চার ঘণ্টার আগে তো বডি ছাড়বে না। তা ছাড়া পোস্টমর্টেমের ব্যাপার আছে। আমি তো কাল এস পি-কে বলেছিলাম, এখানে এরা কাউকে চেনে না, জানে না। যদি তেমন কোনও অঘটন ঘটে, তা হলে এখানে পোস্টমর্টেমের জন্য বডি আটকে রেখে ওদের হ্যারাসমেন্ট না করে, যাতে হাওড়াতেই ওরা ওটা করাতে পারে, তার ব্যবস্থা করে দিতে। সঞ্জয় বলল, বলেছিস? তা হলে তো ওদের পক্ষে ভালই হল। একটা কাজের কাজ করেছিস। তার মানে ঘণ্টা চারেক পরেই ওরা বডি পেয়ে যাবে। --- ক'টা বাজে এখন? মুখে জিজ্ঞেস করলেও ঘরের দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল রাজীব। দেখল, চারটে বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। ও প্রান্ত থেকে সঞ্জয় বলল, ক'টা হবে! সাড়ে তিনটে-চারটে। --- তার মানে আটটা নাগাদ বডি পাবে! --- হ্যাঁ, তা-ই তো পাওয়া উচিত। ফোন ছাড়ার পর দু'চোখের পাতা আর এক করতে পারেনি রাজীব। সারা রাত বিছানায় শুয়ে শুধু ছটফট করেছে। সাংবাদিকতায় আসার পর থেকে এমন বহু ঘটনা ওর সামনে ঘটেছে, যা ওকে বিচলিত করেছে। নাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার জন্য তার প্রফেশনে কোনও আঁচড় পড়েনি। দুষ্কৃতীদের আচমকা হামলায় সদ্য সন্তানহারা মা যখন কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁর মুখের সামনে বুম ধরে জিজ্ঞেস করতে হয়েছে, কী হয়েছিল, ব্যাপারটা একটু খুলে বলুন। কী নির্মম তার জীবিকা। এই প্রফেশনে আসার পর থেকে তার মনটাও কি একটু একটু করে যান্ত্রিক হয়ে যায়নি! সে কি আর আগের মতো মিষ্টি মিষ্টি প্রেমের কবিতা লিখতে পারে! ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে মেঘের আনাগোনা দেখতে পারে! কত দিন বৃষ্টিতে নেমে ভেজা হয়নি তার! কত দিন! এখন গ্রাম তস্য গ্রামকে গুরুত্ব দিতে সমস্ত প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া গ্রামেগঞ্জে স্থানীয় সাংবাদিক নিয়োগ করলেও, এখনও সব খবরই শহরকেন্দ্রিক। রাজনীতিকেন্দ্রিক। 'দৌলতাবাদের একটি হোটেলে দুষ্কৃতীদের গুলি চালনায় মৃত্যু'টাকে তার চ্যানেল আদৌ গুরুত্ব দেবে কি না, ও জানে না। বড় কোনও খবর থাকলে ছোট ছোট এইসব খবর একেবারে ধামাচাপা পড়ে যায়। তবু গুরুত্ব দিয়েই এ খবরটা ও করতে চায়। নিজের কাছে ও পরিষ্কার থাকতে চায়। তাই ফোন করে তার ক্যামেরাম্যানকে বলে দিল, যত তাড়াতাড়ি পারে, ও যেন বানজেটিয়ার মুর্শিদাবাদ নার্সিংহোমে চলে আসে। অন্য জেলা থেকে এসে এখানে হামলা চালিয়ে গেছে, এটা নিশ্চয়ই খুব একটা ছোট খবর নয়। সবাই কভার করবে। একটু আগেভাগে না গেলে হয়! সেই হিসেব করে বাইক ছুটিয়ে ও যখন নার্সিংহোমের সামনে পৌঁছল, দেখল হাওড়ার নম্বর প্লেট লাগানো--- ডাবলিউ বি জিরো ফোর... হ্যাঁ, এই গাড়িটাকে কালকেও ও দেখেছিল। তার মানে দেবমাল্যর বাবা আর তার কারখানার লোকজন এই গাড়িটা করেই এসেছে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register