Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || স্তুতি || শারদ 26য় সায়ন্তন ধর

maro news
T3 || স্তুতি || শারদ 26য় সায়ন্তন ধর

আগমনীর আবাহনে

দুর্গতিনাশিনী মা আসবেন- মা-র গলায় গুনগুন আগমনী গান- "সোনার আলোয় ঢেউ খেলে যায় মাঠে ঘাসে ঘাসে", জগজ্জননী মা আসবেন- মা- গাইছেন "ওগো আমার আগমনী আলো" কখনো ওটা ছেড়ে "বাজলো তোমার আলোর বেনু"... দুর্গাপুজো মানে--- আসতে যেতে মন্ডপের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যাওয়া... দেবীর মুখে শৈবতেজ, বাহুবিষ্ণুতেজে বলীয়ান, যমঃতেজোদ্দীপ্তকেশা, চান্দ্রস্নিগ্ধ স্তনদ্বয়, ইন্দ্রতেজে উদর কোটি, বরুণতেজে উরূ জঙ্ঘা, পৃথ্বীতেজে নিতম্ব, ব্রাহ্মতেজে চরণদ্বয়, প্রজাপতির তেজে দন্ত, সান্ধ্যতেজে ভ্রূদ্বয়, বসুদের তেজে হস্তাঙ্গুষ্ঠ, কুবেরের তেজে নাসিকা, পবনতেজে কর্ণদ্বয়- এই হল দেবীর তেজোদ্দীপ্ত অবয়ব। দশপ্রহরণধারিনী মা সেজে উঠছেন ক্রমে অশুভশক্তির বিনাশে--- হিমাচল দিলেন সিংহবাহন, বিষ্ণু দিলেন চক্র, পিনাকপাণি শঙ্কর দিলেন শূল, যম দিলেন তাঁর দণ্ড, কালদেব সুতীক্ষ্ণ খড়্গ, চন্দ্র দিলেন অষ্টচন্দ্র শোভাচর্ম, সূর্য দিলেন ধনুর্বাণ, বিশ্বকর্মা অভেদবর্ম, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা কমণ্ডলু, কুবের দিলেন রত্নহার। বিশ্বজননী মা সেজে উঠেছেন- কি অপূর্ব মূর্তি--- বিষ্ণুমায়া, চেতনা, বুদ্ধি, নিদ্রা, ক্ষুধা, ছায়া, শক্তি, তৃষ্ণা, ক্ষমা, জাতি, লজ্জা, শান্তি, শ্রদ্ধা, কান্তি, লক্ষ্মী, বৃত্তি, স্মৃতি, দয়া, তুষ্টি, মাতৃ, ভ্রান্তি ও চিতি রূপে বিশ্বব্যাপিকা মায়ের সে যে অসাধারণ রূপমহিমা! ভীড় নয়, আড়ম্বর নয়, জাঁকজমক নয়--- পবিত্র এক উপলব্ধিতে অন্তর যখন পরিপূর্ণ, চলো যাই শহরের কোলাহল থেকে দূরে ডুয়ার্সের পাহাড়ি পথে, ঝটিকা সফরে, প্রত্যন্ত গ্রামের পথে হেঁটে হেঁটে দু'চোখ ভরে দেখি--- অচেনা অথচ প্রাণ আছে, আত্মার একাত্মতা আছে- এমন পুজো প্রাঙ্গণে মা আছেন কিভাবে কিরূপে... দুর্গাপূজা মানেই প্রকৃতির সাথে একাত্মতা... তিস্তার চরে কাশফুলের দোলা... ভোরবেলা বাড়ির আঙিনায় ঝরে পড়া শিউলি ফুল, কমলা রঙ ডাঁটি... নয়ানজুলিতে গোলাপী শালুকের হাসি... রাজবাড়ীর দীঘিতে সাদা পদ্ম... পরিযায়ী পাখিদের ডানা মেলে আসা... দূর মণ্ডপ থেকে ভেসে আসা ধূনোর গন্ধ... ঢাকের বোল, চণ্ডীপাঠ... জলবিষুব শেষে দক্ষিণ অলিন্দে সূর্যের লুকোচুরি... একটানা ঝিঁঝির শব্দে সন্ধ্যে নেমে আসা... তিনটে দিন সব ভুলে থাকা... দশমীতে মায়ের বিষণ্ণ মুখ... অজ্ঞাতে ওষ্ঠ কম্পিত হয় অস্ফুট উচ্চারণে... "রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষো জহি"... বিসর্জনের শেষে প্রদীপের আলোয় আলোকিত শূন্য মণ্ডপে শান্তির জলের স্পর্শ, প্রণাম, কোলাকুলি... ঘাট থেকে গরম জিলিপির সুবাস... শরতে কাশফুলের সমারোহে , নীলাভ আকাশে সাদা মেঘের ঘনঘটায় আগমনী সুরে মায়ের আবাহন আছে, দীর্ঘ যাপনের ক্লান্তি কাটিয়ে দীঘিতে পদ্ম ফোটার মত মানুষের অন্তরে ফোটে আশার আলো, পুঁজি হয় ভালো থাকার রসদ। শিবলোকে সপরিবারে সবাহনে চলে যান গৌরী। শূন্য মণ্ডপে প্রদীপশিখার মতো মানুষের অন্তরে লালিত হয় বছরভর প্রতীক্ষা--- এই অপেক্ষাতেই বাঁচা। ঢাকের বোল পাল্টে যায়... 'ঝাউর গিজার গিজা ঘিনিতা'- হয়ে যায় 'ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন'। ধূপধুনোর গন্ধ বাতাসে মিলিয়ে গিয়ে বাজি পোড়া গন্ধ, সাথে নারকেলের পাক দেওয়া সুমিষ্ট গন্ধ, কুঁচো নিমকির পোড়া তেলের গন্ধ মিলে মিশে একাকার। উৎসব শেষ হয়েও হয় না শেষ। মা কে যেতে দিতে চায়না মন- বিসর্জনের ঢাকে কাঠি পড়তেই একাদশীতে ফের বোধনের ডাক- আমার ডুয়ার্সে 'মা ভাণ্ডানি' রূপে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register