Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || স্তুতি || শারদ 26য় উত্তম বনিক

maro news
T3 || স্তুতি || শারদ 26য় উত্তম বনিক

ধর্ষণ এবং ধর্ষক

আজ মা, বাবার সাথে কালো জামা পড়ে মোমবাতি হাতে সারা শহর পরিক্রমা করে এসেছে দশ বছরের পরীনিতা ওরফে পরী। মিছিলে সবাই একটা কথা বলেই চিৎকার করছিল "We want justice, we want justice"। মানে আমরা বিচার চাই। ইংরেজি স্কুলে পড়া পরীর সেই মানেটা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে দু একজন বলছিলো ধর্ষকের ফাঁসি চাই, এই ধর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাই। পরীর কাছে এই দুটো শব্দই একদম অজানা ও অচেনা ছিলো। তাই ভেবে ছিল বাড়িতে গিয়ে মা অথবা বাবার থেকে জেনে নেবে। রাত্রি বেলা মা, বাবা, ঠামা, দাদান সবাই মিলে যখন টিভির ঘরে বসে একসাথে কথা বলছিল পরী তখন এসে বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো বাবা ধর্ষণ মানে কি? এই কথা শুনে বাবা কোনো কথা না বলে এক মুহূর্তে ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে চলে গেলো। পরী এবার মায়ের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো, মা ধর্ষক কাকে বলে? মা তখন এক ধমক দিয়ে বললো চুপ কর, এই সমস্ত কথা মুখে আনতে নেই। যাও ঘরে গিয়ে শুয়ে পর কাল সকালে স্কুল যেতে হবে। ঠামা, দাদান ও চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পরিবেশটাই যেনো কেমন গুমোট হয়ে গেলো ওই প্রশ্ন দু'টো করাতে। দু চোখ ছলছল করে উঠল পরীর, কিন্তু কাঁদতে পারল না। অভিমানে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা বুঝতেও পারলনা পরী। এই পরী ওঠ মা, সাতটা বেজে গেলো স্কুলে যেতে হবেনা! তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে লক্ষ্মী মা আমার। মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পরী। মাকে প্রশ্ন করে মা আমরা স্কুল কেনো যাই? মা বলেন শিক্ষা অর্জনের জন্য। মা আমরা ভগবানকে কেনো পূজা করি? মা বলেন ভগবান আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা তাই। পরীর আবার প্রশ্ন মা তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো? ওরে পাগলী মা আমার সেটা কি আর বলে বোঝানো যায়, শুধু এই এটুকু জেনে রাখ আমি আমার নিজের জীবনের চেয়েও বেশি তোকে ভালোবাসি। মা তুমিতো আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিলে খুব সুন্দর ভাবে তাহলে ধর্ষণ ও ধর্ষকের মানেটা কি তা একবার বলোনা মা, নইলে আমি জানবো কিভাবে! চুপ কর আর পাকনামি করতে হবেনা, এবার স্কুলে যা। স্কুলে বাংলা ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ করে পরীনিতার প্রশ্ন স্যারের উদ্দেশ্যে, স্যার ধর্ষণ মানে কি ও ধর্ষক কাকে বলে? ক্লাস জুড়ে তখন যেনো একটা হাসির রোল উঠে গেলো। স্যার বললেন একথা জানার জন্য উপযুক্ত বয়স হয়নি এখনো তোমার। এখন যে বিষয়টা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি সেটাতেই মন লাগাও। আর হ্যাঁ কাল সকালে তোমার বাবা মাকে নিয়ে স্কুলে এসে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সাথে দেখা করবে। ছোট্ট পরী তখন শুধু ভাবছে কি আছে ওই দুটি প্রশ্নের ভেতরে যে প্রশ্নটি করার অধিকার নেই। অথচ সবাই বলে যে শিশু যত প্রশ্ন করবে সে সবকিছু তাড়াতাড়ি শিখবে। তাহলে মিছিলে কি করতে আমি হাঁটলাম। স্কুল ছুটির আগে একটি ঘোষণা জারি করা হলো যে আগামীকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য স্কুলের সমস্ত অভিভাবক অভিভাবীকাদের স্কুলে উপস্থিত হওয়ার জন্য আবেদন করা হচ্ছে। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বলতে শুরু করলেন - বর্তমান যুগে এই ধর্ষণ প্রক্রিয়াটি এক সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে ধীরে ধীরে। সমাজ, জাতি, দেশ কলুষিত হচ্ছে বারে বারে। তাই আমরা যদি এখনো নিজেদের হাত পা বেঁধে রাখি আইন কানুনের প্রতিবন্ধকতায় তাহলে ভবিষ্যত দেশের জন্য এক অনিশ্চয়তা ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারবো না। তাই আমাদের আরো বেশী বেশী করে প্রচার করতে হবে। লজ্জা বোধ ত্যাগ করতে হবে, প্রত্যেকটি শিশুদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। বোঝাতে হবে ধর্ষণ ও ধর্ষকের কারণ ও তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়। মনে রাখতে হবে আজকের চারাগাছ ভবিষ্যতের মহীরুহ। এই সমাজ আমার আপনার আমাদের সবার। কিন্তু আমাদের আজ হাত, পা বাঁধা। কারন যৌন শিক্ষার অনুমতি আমাদের দেশে নেই। কিন্তু এই শিক্ষা যদি দেশের প্রতিটি স্কুলে বাধ্যতামূলক করা হয় তবে এই ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে হয়। এখন থেকে যদি আমরা সমস্ত শিশুদের এই বিষয়ে নিয়মিত সচেতন করতে পারি ও যৌন শিক্ষার পাঠ পড়াতে পারি তবে কোনো একটা সকাল একদিন নিশ্চয় আসবে। যেদিন দেশে কোনো মায়ের বুকফাটা কান্না, বাবার আর্তনাদ, আর নির্যাতিতার আত্মহত্যা সব নির্মূল হয়ে যাবে। তবে সবাই মিলে চলুন আজ থেকে এক নতুন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি "যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার আন্দোলন"। যাতে পরীনিতার মত পরীরা পরীর বেসে এদেশে ঘুরে বেড়াতে পারে, মুখ লুকিয়ে নয়। আজ পরীর ছোট্ট দুটি প্রশ্নে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাই আমার ইচ্ছা আজ থেকে এই আন্দোলনের নাম হোক "পরীনিতা"।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register