Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || স্তুতি || শারদ 26য় মিঠুন মুখার্জী

maro news
T3 || স্তুতি || শারদ 26য় মিঠুন মুখার্জী

সরলার ভাগ্য বিড়ম্বনা

কৃষ্ণ মন্দিরের সামান্য পুরোহিত সদানন্দ ভট্টাচার্য্য অনেক আশা নিয়ে তার একমাত্র মেয়ে সরলার বিয়ে দিয়েছিলেন। দরিদ্র পুরোহিত সদানন্দ ছোট থেকেই খুব আদর দিয়ে সরলাকে মানুষ করেছিলেন। দেবানন্দপুর গ্ৰামের এক মুদি ব্যবসায়ীর ছেলের সঙ্গে মেয়ের গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়ের জীবনের পরিনতি কি হতে পারে তাই তিনি একবারের জন্যও ভাবেন নি । সমাজ ও বাপ-মায়ের কাছে একটি বয়সের পর মেয়েরা বোঝা হয়ে যায়। তাদের বিদায় করতে না পারলে তাদের শান্তি হয় না। এখনো সমাজ পুরুষকেই মাথায় তুলে নাচে। তাদের শত অন্যায় মুহূর্তে ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু নারীর একটু খুঁত পেলেই সকলে মিলে তার জীবনটাকে নরক করে তোলে। সদানন্দের জামাই জীবনানন্দ বাবার সঙ্গে মুদিখানার দোকানেই থাকে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সে অনেক অন্যায় কাজ করে থাকে। সরলা বিয়ের পর দুইমাস বেশ সুখেই ছিল। একবারের জন্যও তার গুণধর স্বামীর অপকর্ম সম্পর্কে সে জানতেও পারে নি। একবছরের মাথায় সরলা বুঝতে পারে তার স্বামী নপুংসক। সন্তান জন্মদানে অক্ষম। একবছর ধরে তার সঙ্গে কখনো শারীরিক সম্পর্ক করে নি। সেই গ্ৰামের একজন নারীর কাছ থেকে সরলা জানতে পারে, তার আগেও জীবনানন্দ দুবার বিয়ে করেছিল। তারা জীবনানন্দের অক্ষমতা জানার পর সংসার ত্যাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা বাপের বাড়ি পৌঁছায় না। মাঝপথে তারা কিডন্যাপ হয়ে যায়। বর্তমানে তারা কলকাতার সোনাগাছিতে আছে বলে জানা যায়। এই কথা শুনে সরলার সারা শরীর রোমাঞ্চিত হয়। সে সারাক্ষণ খুব ভয়ে ভয়ে কাটায়। একদিন রাতে শ্বশুর বাড়ি থেকে চুপিচুপি বাপের বাড়ি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জীবনানন্দের মায়ের কাছে ধরা পড়ে যায়। জীবনানন্দের মা তার ছেলে ও স্বামীকে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে তার পালিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। শ্বশুর জীবনানন্দকে বলেন --- " এই মাগিরও সোনাগাছি যাওয়ার খুব শখ হয়েছে। কালই একে সোনাগাছি বিক্রি করে দিয়ে আয়। আমার দোকানে মাল তুলতে হবে। টাকার খুবই দরকার।" সরলা বুঝতে পারে এই নোংরা কাজের সঙ্গে পরিবারের সকলে জড়িয়ে আছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে--- " আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছি? আমাকে তোমরা সোনাগাছিতে বিক্রি করো না। আমাকে বাড়ি যেতে দাও। আমি তোমাদের কথা কারোকে বলবো না।" সরলার চোখের জল কারো মনে একটুও সহানুভূতি জাগায় না। জীবনানন্দ তার দুজন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছেলেকে নিয়ে ভোর রাতে সরলাকে সোনাগাছিতে বিক্রি করার জন্য বেরিয়ে পড়ে। সরলার দুহাত পিছমোড়া করে বেঁধে মুখে গামছা বেঁধে একটা গাড়ি করে নিয়ে যায়। দেখতে দেখতে দুবছর অতিক্রান্ত হয়ে যায়। সরলা এখন সোনাগাছির নামকরা বেশ্যা। প্রতিদিন তার ঘরে দুই-তিন জন খরিদ্দার আসে। তাদের শারীরিক চাহিদা পূরণ করতে হয় তাকে। মাঝরাতে সে তার ভাগ্যের কথা চিন্তা করে কান্না করে। এই জীবন থেকে বেশ কয়েকবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে সে। জীবনানন্দের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয় তার। মনে হয় তাকে হত্যা করে নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে। কিন্তু সে পারে নি। একজন খরিদ্দার তার শরীরটাকে ভোগ করতে এসে তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। সে সরলাকে প্রেম নিবেদন করে বলেছিল--- " তোমাকে প্রথমদিন দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছিল। তোমাকে অন্য বেশ্যাদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে আমার খুব একটা ভালো লাগে না। আমি তোমাকে ভোগ করতে আসিনি। আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাই। তোমার সঙ্গে সংসার করতে চাই। তোমার সন্তানের বাবা হতে চাই।" নিজের এই নোংরা জীবনের কথা চিন্তা করে সরলা তাকে না বলেছিল। কিন্তু সে জোঁকের মতো তার পিছনে পড়েছিল। শেষপর্যন্ত সরলা তার ভালোবাসাকে স্বীকার করেছিল। সে সম্পদকে বলেছিল --- "আমার দুটো শর্ত আছে। সেই শর্ত দুটি তুমি পূরণ করতে পারলে আমি তোমার সঙ্গে এই সোনাগাছি ছেড়ে পালিয়ে যাব।" সরলার প্রথম শর্ত ছিল নপুংসক জীবনানন্দকে হত্যা করা, যার জন্য সরলার এই পরিণতি হয়েছিল। আর কোনো মেয়ের সর্বনাশ সে যেন করতে না পারে। দ্বিতীয় শর্ত ছিল সে কোনোদিন সন্তান নেবে না। যাতে তার সন্তান তার অতীত সম্পর্কে জানতে পেরে লজ্জা না পায় । কিম্বা তার জন্য তার সন্তানকে চিরকাল মানুষের কাছে ছোট হয়ে না থাকতে হয়। সম্পদ সরলার দুটি শর্তই মেনে নিয়েছিল। একরাতে জীবনানন্দ যখন ঘুমিয়ে ছিল, তখন বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেছিল সম্পদ। সুযোগ বুঝে সোনাগাছি থেকে সরলাকে বের করে নিয়ে এসেছিল সে। তারা দুজন একরাত্রে কলকাতার এক কালীমন্দির থেকে বিয়ে করে কলকাতা থেকে দূরে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে চলে এসেছিল। একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার পেতেছিল তারা। খুব সুখে দুবছর তারা সংসার করেছিল। সরলার দ্বিতীয় শর্ত অনুযায়ী তারা কোনো সন্তান নেয় নি। কিন্তু ভাগ্য তাদের সঙ্গে ছলনা করে। সরলাকে খুঁজতে খুঁজতে সোনাগাছির মাসিদের লোক বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পৌঁছে যায়। এখানেও তাদের ইনফর্মার ছিল। সরলার ছবি তার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। একদিন রাতে তারা সম্পদকে এক পাটখেটে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে । সরলাকে জোর করে তুলে নিয়ে আবার সোনাগাছির বেশ্যাতে পরিনত করে। পুনরায় তার সংসার তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। যে জীবন ত্যাগ করে সে বিষ্ণুপুরে চলে এসেছিল, যে জীবনে আর কখনো ফিরে যেতে চায় নি, ভাগ্যের বিড়ম্বনায় পুনরায় সেখানে যেতে সরলা বাধ্য হয়েছিল। মাকড়সার জালের মতোই এই বেশ্যা জীবন। যতই সেখান থেকে বেরনোর চেষ্টা করা হবে ততই জড়িয়ে পড়বে। কিছু মানুষ কখনোই তাকে রেহাই দেবে না।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register